বাড়িসহ বিপুল সম্পদ : অনুসন্ধান চেয়ে ওসি মনিরুলের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট

আগের সংবাদ

শ্রমিক ধর্মঘটে ‘অচল’ চা শিল্প

পরের সংবাদ

রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস : সেবার মান বাড়লেও দালালদের ‘ছায়া প্রভাবে’ জনমনে অসন্তোষ

প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আছাদুজ্জামান, ঢাকা অফিস ও সাইদুর রহমান, রাজশাহী থেকে : জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে দালালদের দৌরাত্ম্য কমেছে রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে। তবে সরজমিন দালালদের দেখা না মিললেও পাসপোর্ট অফিসের কতিপয় কর্মচারীর সঙ্গে রয়েছে তাদের সখ্যতা। এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে ভোরের কাগজের অনুসন্ধানে। পাসপোর্ট করতে আসা সাধারণ মানুষ যেমন তাদের জন্মসনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে গরমিল থাকায় ভোগান্তিতে পড়ছেন। এখানে প্রতিদিন দুই শতাধিক আবেদন এনরোলমেন্ট হলেও তার মধ্যে এক তৃতীয়াংশ আবেদনই পড়ছে তথ্য সংশোধনের। এ তথ্য সংশোধনের আবেদনকারীরা কবে তার কাক্সিক্ষত পাসপোর্ট হাতে পাবেন, এর উত্তর মিলছে না কোথাও। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললে তারা দোহাই দিচ্ছেন, ই-সার্ভারে কোনো ভুল তথ্য নেয় না। সেজন্য তাদের পাসপোর্ট পেতে নির্ধারিত কোনো সময় থাকছে না।
গত বুধবার সকালে জেলার পুঠিয়া উপজেলা থেকে আবেদন জমা দিতে আসা হাজেরা খাতুনের সঙ্গে কথা হয় ভোরের কাগজের অনুসন্ধানী দলের। এ সময় হাজেরা খাতুন তার সমস্যার কথা জানান। হাজেরা খাতুনের আগের মেশিন রিডেবল পাসপোর্টে ‘হাজেরা খাতুন’ থাকলেও বর্তমানে ‘আমেনা বেগম তামান্না’ নামে জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে পাসপোর্ট জমা দিতে এসে পড়েন বিপত্তিতে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, পুরো নাম পরিবর্তন করে পাসপোর্ট জমা নেয়ার পরিপত্র এখনো তাদের অফিসে আসেনি। তবে গ্রাহকরা মনে করছেন, সেবার মান বাড়লেও দালালদের ছায়া প্রভাব রয়ে গেছে। ফলে অসন্তুষ্ট তারা। সেবার মান অক্ষুণ্ন রাখতে পাসপোর্ট অফিস দালালমুক্ত হওয়া জরুরি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি ভারতীয় এক নাগরিক হাফেজ আহম্মেদ নামে রাজশাহী পাসপোর্ট অফিস থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে পাসপোর্ট নিয়ে যান সৌদি আরবে। ২০১৭ সালে তাকে দেয়া হয় পাসপোর্ট। ওই বছরের ৬ জুন নগরীর ছোটবনগ্রাম এলাকার ঠিকানা দিয়ে পাসপোর্ট আবেদন করেন তিনি। ব্যাংক ড্রাফট না থাকলেও পরের দিন এমএলএসএস রঞ্জু লাল সরকার আবেদনটি গ্রহণ করে নিজ হেফাজতে রাখেন। পরে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় থেকে রঞ্জু নিজেই ভারতীয় নাগরিক হাফেজের জন্ম সনদ তৈরি করেন এবং ১৩ জুন তিনি মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) জন্য ব্যাংক ড্রাফট করেন ৩ হাজার ৪৫০ টাকা।
সূত্র জানায়, পুলিশ ভেরিফিকেশনে হাফেজ আহম্মদকে ‘ভারতীয় নাগরিক’ বলে উল্লেখ করা হলেও দায়িত্বরত তৎকালীন কম্পিউটার অপারেটর বিষয়টি উল্লেখ করেননি। ফলে তার পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন পক্ষে আসায় ১৬ আগস্ট পাসপোর্টের আবেদনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে জমা হয়। প্রক্রিয়ার পর ওই বছরের ৭ সেপ্টেম্বর অফিসের রেকর্ড কিপার ইব্রাহিমের ইউজার আইডি থেকে পাসপোর্ট ডেলিভারি করা হয়। এ ঘটনায় ২০২০ সালের ১২ মার্চ রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের তৎকালীন সহকারী পরিচালক আবজাউল আলমসহ অফিসের ৭ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
তথ্যমতে, ২০১৮ সালের ৩ এপ্রিল রাজশাহী পাসপোর্ট অফিস থেকে তিন দালালসহ শওকত আরা নামে এক রোহিঙ্গা তরুণীকে আটক করে পুলিশ। পরিচয় গোপন রেখে পাসপোর্ট করতে এসেছিলেন ওই তরুণী। এছাড়া পরের বছর ২৫ মে জেলার দুর্গাপুর থেকে দুই রোহিঙ্গা নারীসহ তিন দালালকে আটক করা হয়। দালাল চক্রের সদস্যরা ওই

রোহিঙ্গা নারীদের বাংলাদেশি পরিচয়ে রাজশাহী সীমান্ত দিয়ে ভারত হয়ে মধ্যপ্রাচ্যে পাচারের পরিকল্পনা করছিল। অবশেষে তারা পুলিশের হাতে আটক হন। তবে হয়রানি বন্ধে জনসচেতনতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা।
এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিস্ট্রি এন্ড কালচার বিভাগের চেয়ারম্যান ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফায়েক উজ জামান ভোরের কাগজকে বলেন, সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। যখন কেউ এনআইডি করতে যাবেন, তখন জন্ম সনদ ঠিক আছে কিনা তা যাচাই করা প্রয়োজন। আবার জন্মসনদ অনুযায়ী এনআইডি হয়েছে কিনা সেটিও দেখতে হবে যথাসময়ে। জন্মসনদ ও এনআইডি প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ শুরুতেই সেবা গ্রহণকারীদের এ বিষয়ে সচেতন করলে পাসপোর্ট পেতে কারো বিড়ম্বনার শিকার হতে হবে না।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রাজশাহীর সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক আহমেদ শফি উদ্দিন ভোরের কাগজকে বলেন, হয়রানি বন্ধে সরকারের আন্তরিকতা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে পাসপোর্ট অফিসের শক্তিশালী সিন্ডিকেট জনভোগান্তি সৃষ্টি করছে। জনগণের হয়রানি চরম অপরাধ। অনুসন্ধান করে এ অবস্থা বন্ধে অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, বর্তমানে সরকার যে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু করেছে, এটি এশিয়ার মধ্যে প্রথম। এর সুনামকে অক্ষুণ্ন রাখতে হলে সবাইকে সচেতনভাবে কাজ করতে হবে। তাহলে এর সুফল দেশবাসী ভোগ করবে।
রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক মোহাম্মদ কামাল হোসেন খন্দকার ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা দালালের দৌরাত্ম্য ও আবেদনকারীর হয়রানি বন্ধে সর্বোচ্চ তৎপর। আমরা কখনো কারো অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে তার সমাধান দেয়ার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি যদি আমার এ অফিসের কোনো কর্মচারির বিরুদ্ধে হয়রানির কোনো অভিযোগ আসে, তাহলে আমি তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। দালালের ছায়া দৌরাত্ম্য সম্পর্কে তিনি বলেন, অভিযোগটি পুরোপুরি সত্য নয়। যদি এ ধরনের অভিযোগ কেউ প্রমাণসহ দিতে পারেন, তাহলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়