বাড়িসহ বিপুল সম্পদ : অনুসন্ধান চেয়ে ওসি মনিরুলের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট

আগের সংবাদ

শ্রমিক ধর্মঘটে ‘অচল’ চা শিল্প

পরের সংবাদ

যে কারণে জীবন দিতে হলো চিকিৎসক জান্নাতুল নাইমকে > হোটেলে খুন : প্রেমিক রেজাউল করিম গ্রেপ্তার

প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীর পান্থপথে একটি আবাসিক হোটেলে জান্নাতুল নাইম সিদ্দিকা (২৭) নামে এক চিকিৎসককে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যার রহস্য নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্কে কি এমন ঘটেছিল যে, আবাসিক হোটেলে নিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হলো তাকে? যদিও প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে পুলিশের দাবি- ঘাতক প্রেমিক রেজাউল করিম রেজা বেকার হওয়ায় বিয়ে দিতে রাজি ছিল না জান্নাতুলের পরিবার। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কলহ চলছিল। কিন্তু তারা দুজনই প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় চাইলেই পরিবারের অমতে বিয়ে করতে পারতেন।
তাহলে কি এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে মোটা অঙ্কের দেনাপাওনা, প্রেমিকের অন্য কোনো সম্পর্ক জেনে যাওয়া, অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়া কিংবা সম্পর্কের বাইরের কাউকে দিয়ে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা রয়েছে? এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর নেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, হত্যার পেছনে কী ধরনের মোটিভ রয়েছে, সেটি ঘাতক প্রেমিক রেজাকে জিজ্ঞাসাবাদের পরে ঠিকভাবে বলা যাবে। তবে প্রাথমিকভাবে প্রেমের কলহে এ ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে এ ঘটনায় কলাবাগান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে জান্নাতুলের পরিবার। রেজাকে চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের বিষয়ে র‌্যাব সদর দপ্তরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গতকাল চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে রেজাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ

করে খুনের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।
এদিকে জান্নাতুল নাইমকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় সর্বোচ্চ বিচার চেয়েছে তার পরিবার। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে জান্নাতুলের বাবা অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক মো. শফিকুল আলম বলেছেন, জানের বদলে জান চাই। খুনি রেজার ফাঁসি চাই। এর আগে গত বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করে কলাবাগান থানা পুলিশ। এরপর ময়নাতদন্তে জন্য মধ্যরাতে ঢামেক মর্গে পাঠানো হয়। কলাবাগান থানা পুলিশ বলছে, বুধবার সন্ধ্যার পর পান্থপথে ফ্যামিলি সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট নামের আবাসিক হোটেলের ৩০৫ নম্বর রুমে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে রেজাউল করিম রেজা নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে উঠেছিলেন জান্নাতুল। এরপর রেজাউল জান্নাতুলকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যান বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নিহতের বাবা মো. শফিকুল আলম বলেন, তাদের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদি উপজেলার চন্দনবাড়ি গ্রামে। রাজারবাগ ২ নম্বর মোমেনবাগ, দোলনচাঁপা ভবনে থাকেন তারা। মগবাজার কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ থেকে সদ্য এমবিবিএস পাস করেন জান্নাতুল। এরপর ঢামেক হাসপাতালে গাইনি বিষয়ে একটি কোর্সে অধ্যয়নরত ছিলেন। তিনি আরো বলেন, বুধবার সকাল ৮টার দিকে জান্নাতুল বাসা থেকে বের হন ক্লাসের কথা বলে। ১০টার দিকে বাসায় ফিরবেন বলে জানান। তবে বাসায় না ফেরায় ১১টার দিকে তার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই।
অভিযুক্ত রেজাউল করিম রেজার পরিচয় সম্পর্কে তিনি বলেন, একদিন তার সঙ্গে বন্ধু হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি কক্সবাজার। গাজীপুর জয়দেবপুর একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত ছিল। এর বেশি কিছু জানি না। মামলার কপিতেও রেজার পরিচয় ও ঠিকানা অজ্ঞাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
গতকাল নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মো. ফারুক হোসেন বলেন, জান্নাতুল খুনের পেছনে প্রেমের কলহ কাজ করতে পারে। বিশেষ করে, নিহত জান্নাতুলের পরিবার তার প্রেমিক রেজাউল করিম রেজার সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি ছিল না। এটি নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝামেলা হতো। হয়তো এই কলহের জন্যই পরিকল্পিতভাবে আবাসিক হোটেলে নিয়ে জান্নাতুলকে হত্যা করা হয়েছে।
ডিসি বলেন, চিহ্নিত খুনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই খুনের রহস্য স্পষ্ট হওয়া যাবে। তবে প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি, এর আগেও স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তারা ওই আবাসিক হোটেলে বেশ কয়েকবার থেকেছেন।
এদিকে জান্নাতুলের সুরতহাল প্রতিবেদনে কলাবাগান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নার্গিস আক্তার উল্লেখ করেন, তার থুতনি, ঠোঁট ও গলায় সাড়ে আট ইঞ্চি, বাম কাঁধে দেড় ইঞ্চি, দুই বৃদ্ধাঙ্গুলিতে, বুকের মাঝখানে, পেটে ছয়টা কাটা জখম রয়েছে। এছাড়া তার পিঠে একটি, বাম পায়ের হাঁটুর ওপর ও হাঁটুর নিচে কাটা জখম রয়েছে। তিনি অন্তঃসত্ত্বা কিংবা ধর্ষণ হয়েছেন কিনা তাও ময়নাতদন্তের মাধ্যমে ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ করেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়