বাড়িসহ বিপুল সম্পদ : অনুসন্ধান চেয়ে ওসি মনিরুলের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট

আগের সংবাদ

শ্রমিক ধর্মঘটে ‘অচল’ চা শিল্প

পরের সংবাদ

মস্তিষ্কের তৃতীয় মুদ্রণ : ভুল-ভ্রান্তিতে ভরা সমাজের চিত্রণ

প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

‘সরলপুর গ্রামের গৃহবধূ মহিতন বেগম এখন সেলিব্রেটি মাহি সুলতানা। কবি হিসেবে নাম-ডাক তৈরি হয়েছে। তৈরি হয়েছে হাজার হাজার ফ্যান, ফলোয়ার। ডাক পায় কত রকম সাহিত্য অনুষ্ঠান, আড্ডায়। ফেসবুকে কিছু পোস্ট করার সঙ্গে সঙ্গেই বৃষ্টির মতো টপাটপ পড়তে থাকে লাইক কমেন্ট। কেউ কেউ তো কমেন্টবক্স বেয়ে ঢুকে পড়ে ইনবক্সে। কত রকম প্রশংসা, স্তুতিবাক্য! শুধু কি সাধারণ মানুষ? বড় বড় কবি, সাহিত্যিক, সম্পাদকরাও তার লেখার, ছবির প্রশংসা করেন। সব কাজের ফাঁকে তার মনের মধ্যে একটি কথা ভেসে থাকে সারাক্ষণ- আজ সে সেলিব্রেটি। ভাবলেই শীতল হয়ে ওঠে মনটা। কখনো সখনো একাই খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে। আবার পরক্ষণেই গম্ভীর হয়ে যায়। সেলিব্রেটিদের গাম্ভীর্য দরকার। সেলিব্রেটি ভাবনার সঙ্গে আরেকটি ভাবনা জোড়া হাঁসের মতো লেগেই থাকে। বড়দের মস্তিষ্কের পরিধি কত।’ ‘মস্তিষ্কের তৃতীয় মুদ্রয়’ গ্রন্থের অন্যতম গল্প ‘সেলিব্রেটি’র অংশবিশেষ। অংশবিশেষ তুলে ধরলাম এজন্য যে, আমার এ লেখার পাঠক যেন প্রথমেই বুঝে নিতে পারেন গল্পকার রনি রেজাকে। কলমে কতটা শক্তি থাকলে গল্পে এভাবে লেখা যায়। ‘আজ সে সেলিব্রেটি। ভাবলেই শীতল হয়ে ওঠে মনটা। কখনো সখনো একাই খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে। আবার পরক্ষণেই গম্ভীর হয়ে যায়। সেলিব্রেটিদের গাম্ভীর্য দরকার। সেলিব্রেটি ভাবনার সঙ্গে আরেকটি ভাবনা জোড়া হাঁসের মতো লেগেই থাকে। বড়দের মস্তিষ্কের পরিধি কত!’ রনি রেজা একজন কবিও বটে! গল্পে কবিদের চিন্তাশক্তি গভীর হয়। শব্দ খেলা করে। কাহিনীর প্রতিটি বাক্যে, বাক্যের শব্দ ছুঁয়ে অক্ষর নাচে। গল্পের শিরোনাম হয় অন্যরকম। পাঠিকা-পাঠককে কাহিনীতে টেনে নেয়। রনি রেজার লেখায় তারই প্রতিফলন পেয়েছি।
‘ব্লাকলিস্টেড’, ‘মরিসের গবেষণাগার থেকে’, ‘আমিনুদ্দিন ঈদ’, ‘সংশয়ী সহবাস’, ‘মহারাজপুর’, ‘একটি সম্মানজনক খুন’, ‘দায়’- কাব্যিক শিরোনাম গল্পে টেনে নেয়। গল্পের শুরুটাই কতটা কাব্যিক হয়ে উঠতে পারে তা গল্পকারের ‘মরিসের গবেষণাগার’ পড়লে বোঝা যায়। যখন লেখক ভালোবাসা সম্পর্কে এত গোছালো কথা কাব্যিক ঢংয়ে গল্পে বলেন- ‘ভালোবাসা এমন একটি বিষয় যে যদি তুমি তার রিদম বুঝতে পারো তাহলে তোমার জীবনে কখনোই ছন্দপতন ঘটবে না। ভালোবাসাই প্রিয় মানুষটির জন্য সমস্ত কর্তব্যকর্ম পালনের দায় আপনা থেকে নিজের কাঁধে তুলে নিতে উৎসাহিত করবে। সেই দায়িত্বের বোঝা যতই ভারি হোক না কেন সেই বোঝা বহন করতে কখনো তুমি ক্লান্ত বোধ করবে না।’
‘সংশয়ী সহবাস’ শিরোনামের গল্পটি কিছুটা শুরু থেকে শেষ অবধি সংশয়ে রেখে দেয় পাঠককে। গল্পটির শুরু হয় একটি পরিবারকে ঘিরে। পরিবারের সদস্য সংখ্যা মাত্র দুজন। স্বামী-স্ত্রী। সেই পরিবারের আরেক পুরনো সদস্য মোবাইল ফোন। যে ফোনটি তাদের পরিবারের সবচেয়ে আপন। কারণ গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যে টান টান উত্তেজনা সবটাই মোবাইল ফোনকেই ঘিরে। গল্পটির মধ্য দিয়ে সন্দেহের পরিতাপকে সুন্দরভাবে ফুটে তোলা হয়েছে। নারী হৃদয়ে ছোট্ট বিষয়ও কীভাবে সন্দেহের দানা বাধে তার বর্ণনা কলমে এতটা সুন্দর হতে পারে!
‘দৈন্য মানুষের স্বকীয়তা ধ্বংস করে’। ‘নতুবা আমার মতো সব ক্ষেত্রে ফাস্টক্লাস পাওয়া স্বপ্নবাজ, স্বাধীনচেতা ছেলের এই পরিণতি হবে কেন? ইচ্ছের বিরুদ্ধে করতে হয় সব। কী সব তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে পার করেছি একেকটা দিন!’ একজন মানুষের নিজের চাহিদার বিপরীতে পথ চলাটা কতটা তিক্তকর। সেটা যে মানুষটির সঙ্গে ঘটে তা শুধু সেই বোঝে’- এমনই এক বাস্তব চিত্র নিয়ে এগিয়েছে ‘দায়’ শিরোনামের গল্পে। ছোট ছোট বাক্যে এগিয়ে চলে প্রতিটি গল্পের কথা ও লেখা। যদিও এই বৈশিষ্ট্যে তিনি নিজেকে আটকে রাখেননি। বিভিন্ন গল্পে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যে তাকে পেয়েছি। কোনো কোনোটিতে বা একটি গল্পই কিছু কিছু জায়গায় তিনি প্রলম্বিত বাক্য গঠন করেছেন। যদিও তা বেমানান লাগেনি। কখনো কখনো অপরিহার্যই মনে হয়েছে।
গল্পকার ও কবি রনি রেজার লেখা যতদূর পড়েছি, তাতে আমার মনে হয়েছে, তিনি লেখার মাধ্যমে সমাজকে, রাষ্ট্রকে, সর্বপরি মানুষকে মেসেজ দিতে চান। পৃথিবীর জন্য রেখে দিতে চান তার চিন্তাশৈলী, যা হয়ে উঠতে পারে পরিকল্পনা। উপর্যুক্ত গল্পে কাহিনীর ধারাবাহিকতায় গল্পকার তার লেখায় পরিবারতন্ত্র, সেই তন্ত্রের ভুলভ্রান্তি তুলে ধরতেও সচেষ্ট হয়েছে। ‘একটি সম্মানজনক খুন’ গল্পটি তারই বাস্তব উদাহরণ। পরিবারের মধ্যে নানাবিধ ঝামেলা শেষ পর্যন্ত ভাই তার বোনকে এবং বোন তার ভাইকেও খুন করতে উৎসাহিত করে। এমনি একটা গল্পের বাস্তব চিত্র গল্পটিতে পাওয়া যাবে। যদিও গল্পের কিছু কিছু বিষয় আমার কাছে অপ্রয়োজনীয় মনে হয়েছে বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে। তবে গল্পে গল্পে ভর্ৎসনা করেছেন সময়ের গায়ে মিশে থাকা কালিমাকে। তিনি পাঠককে গল্পে ফেরাতে চেষ্টা করেছেন। গল্পে বাস্তবতার স্বপ্ন ধরিয়েছেন, যা বর্তমান সময়ে অনেকের নেশা ধরিয়েছে। তার নায়ক-নায়িকারা প্রকৃতির প্রেমে হাবুডুবু খায়, রোদ ছুঁয়ে দেখে, বৃষ্টি মাখে, কবিতাকে ভালোবাসে। লুতুপুতু প্রেমে বিশ্বাসী নয়। প্রগাঢ় আবেগের টান লক্ষণীয়। আবার কোথাও কোথাও সর্বজনীন সত্যকে তুলে ধরেছেন। তার গল্পের ধারাবাহিকতা শেষ বাক্যটির আগে আরো একটি বাক্য আশা করছে এমন প্রত্যাশা রাখেনি। আবারো সেই কথার পুনরাবৃত্তি করতে চাই- গল্পকার ও কবি রনি রেজার গল্পে শব্দ খেলা করে, যা নতুন একটি দিগন্তের কাছাকাছি তাকে নিয়ে যাবে বলে ধারণা দেয়। তার লেখা এভাবে গতিশীল থাকলে বাংলা সাহিত্য ভালো কিছু গদ্য পাবে বলে আমার বিশ্বাস।
গল্পগ্রন্থ, বেহুলাবাংলা প্রকাশন; প্রকাশকাল : ২০২১ বইমেলা প্রচ্ছদ : মিজান স্বপন; মূল্য : ২০০ টাকা

-এনাম রাজু

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়