বাড়িসহ বিপুল সম্পদ : অনুসন্ধান চেয়ে ওসি মনিরুলের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট

আগের সংবাদ

শ্রমিক ধর্মঘটে ‘অচল’ চা শিল্প

পরের সংবাদ

ভাড়া নৈরাজ্য : তালিকা টানানো হয়নি, ‘ওয়েবিল’ আছেই

প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য কিছুতেই থামছে না। বিআরটিএ এবং পরিবহন মালিক সমিতির তদারকির পরেও পরিবহন কর্মীরা যাত্রীদের কাছ থেকে নিজেদের ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছে। এ কারণে প্রতিদিন বাসের চালক ও সহকারীদের সঙ্গে যাত্রীদের তর্কাতর্কি ও হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে। একই সঙ্গে রাজধানীর পরিবহন কোম্পানিগুলোর প্রচলিত ‘ওয়েবিল’ পদ্ধতি মালিক সমিতি বাতিলের ঘোষণা দেয়ার পর গতকাল বৃহস্পতিবারও তা বহাল ছিল। একদিকে ইচ্ছেমতো বাড়তি ভাড়া আদায়, অন্যদিকে ওয়েবিল বহাল থাকায় গণপরিবহনে যাত্রীরা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
এদিকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ঠেকাতে বিআরটিএর মোবাইল কোর্ট মাঠে থাকলেও তাদের জোরালো তৎপরতা দেখা যায়নি। মালিক সমিতির লোকজনকেও নগরীর কোথাও দেখা যায়নি। নিয়মিত মনিটরিং করার কথা থাকলেও মিরপুর-গুলিস্তান রুটে ভাড়ার বিষয়ে কাউকে তদারকি করতে দেখা যায়নি। ফলে গণপরিবহনে ভাড়া নিয়ে চলছে নৈরাজ্য।
গণপরিবহনে এখন যাত্রী হয়রানি নিত্যদিনের চিত্র। পরিবহন কর্মীরা কারো কথাই শুনছে না। মিরপুর-গুলিস্তান রুটের শিকড় পরিবহনের হেলপার আমজাদ বলেন, কিলোমিটার হিসাবে ভাড়া নির্ধারণ করা হলেও আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। যানজটে পড়লেও ইঞ্জিন চলে, ইঞ্জিন চললেই তেল পুড়ে। রাস্তায় চলাচলের চেয়ে যানজটেই বেশি সময় আটকে থাকতে হয়। দিন শেষে লোকসান গুনতে হচ্ছে। লোকসান দিয়ে গাড়ি চালানো সম্ভব না। তাছাড়া এখনো সরকারের ভাড়ার তালিকা আমরা হাতে পাইনি।
যাত্রী আব্দুল আউয়াল বলেন, রাজধানীতে চলাচলরত কোনো বাসই সরকারের নির্ধারিত ভাড়া মানছে না। তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছে। এখনো বাসগুলোতে ভাড়ার তালিকা পর্যন্ত টানানো হয়নি। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে। পরিবহন শ্রমিকরা যাত্রীদের জিম্মি করে রেখেছে। গাবতলী রুটের নিয়মিত যাত্রী আজিজুল ইসলাম বলেন, বাধ্য হয়েই আমাদের গণপরিবহনে চলতে হয়। এখনো বাসের কন্ডাক্টরের চাহিদা মতো অতিরিক্ত ভাড়া পরিশোধ করেই চলাচল করতে হচ্ছে। এভাবে রাজধানীর সব রুটের গণপরিবহনেই জোর করে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
অন্যদিকে ‘ওয়েবিল’ এর নামেও যাত্রীদের হয়রানি করা হচ্ছে। বাস মালিকরা এক সময় চালক ও কন্ডাক্টরের চুরি ঠেকাতে ‘ওয়েবিল’ পদ্ধতি চালু করেছিল। এটা সরকার বা বিআরটিএর কোনো নির্দেশনা বা আইন অনুযায়ী হয়নি। ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার পর গত বুধবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ওয়েবিল পদ্ধতি বাতিল ঘোষণা করেছে। কিন্তু এই বাতিল ঘোষণার পর গতকাল বৃহস্পতিবারও বিভিন্ন রুটের বাসে ওয়েবিল পদ্ধতি বহাল ছিল।
স্বাধীন পরিবহনের যাত্রী খোন্দকার কাওসার বলেন, পরিবহন কর্মীরা একদিকে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে। অন্যদিকে পরিবহন মালিক সমিতির ঘোষণার পরও বাসগুলো ওয়েবিল পদ্ধতিতে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করছে। মোহাম্মদপুর থেকে মৌচাক পর্যন্ত আগে বিআরটিএ ১৭ টাকার মতো ভাড়া নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু এখন তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো ২৫ টাকা ভাড়া নিচ্ছে। একই সঙ্গে ওয়েবিল পদ্ধতি বহাল রেখেছে। মানিক মিয়া এভিনিউ এবং ইস্কাটন এলাকায় চেকাররা চেক করে মাথা গুনেই ভাড়া আদায় করছে।
মোহাম্মদপুর থেকে মিরপুর হয়ে আব্দুলাহপুরগামী পরিস্থান ও প্রজাপতি পরিবহনের বাসে ওয়েবিল পদ্ধতিতে ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে। যাত্রী নাইমা আখতার বলেন, তিনি মোহাম্মদপুর থেকে কলেজগেট যাওয়ার পর পরিস্থান নামের বাসে ওঠেন এবং ১০ টাকা ভাড়া দেন। কিন্তু কন্ডাক্টর ১৫ টাকা ভাড়া দাবি করে। এই পথের দূরত্ব দুই কিলোমিটার। প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা ৫০ পয়সা হিসাবেও ভাড়া ৫-৬ টাকার বেশি হয় না। সর্বনি¤œ ভাড়া হিসাবে ১০ টাকা নিতে পারে, কিন্তু ১৫ টাকা করে আদায় করছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ গত সোমবার ওয়েবিল পদ্ধতি বাতিলের ঘোষণা দিয়ে জানিয়েছিলেন, ‘ঢাকা মহানগরী ও এর আশপাশের রুটে চলাচলরত বাসে ওয়েবিল থাকবে না। রাস্তায় চেকার থাকবে না। পারমিট স্টপেজে গাড়ি থামাতে হবে। তবে দুই স্টপেজের মাঝে গাড়ির দরজা বন্ধ রাখা হবে।’ কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার তার ঘোষণার প্রতিফলন রাজধানীর সড়কে দেখা যায়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সড়কে মালিক সমিতির সমন্বয়ে ৯টি ভিজিলেন্স টিম গঠন করার ঘোষণা দেয়া হলেও তারা ছিল অনুপস্থিত।
এদিকে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় প্রতিরোধে বিআরটিএর মোবাইল কোর্টের তৎপরতা থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। মিরপুর-গুলিস্তান রুটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় অব্যাহত থাকলেও বিআরটিএর কোনো মনিটরিং দেখা যায়নি। গত কয়েকদিন বিআরটিএর মোবাইল কোর্ট রমনা, মহাখালী বাস টার্মিনাল, গাবতলী বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়েছে। বেশ কিছু বাসকে জরিমানাও করেছে। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে মোবাইল কোর্টের তেমন জোরালো তৎপরতা দেখা যায়নি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়