বাড়িসহ বিপুল সম্পদ : অনুসন্ধান চেয়ে ওসি মনিরুলের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট

আগের সংবাদ

শ্রমিক ধর্মঘটে ‘অচল’ চা শিল্প

পরের সংবাদ

পূর্ণিমার প্রভাব ও সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ : জোয়ারের পানিতে তলিয়েছে উপকূলীয় নিচু এলাকা

প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : পূর্ণিমার প্রভাব ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে জোয়ারের পানিতে বরিশাল, পটুয়াখালী, কক্সবাজারসহ উপকূলীয় এলাকার নি¤œাঞ্চল তলিয়ে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে তীব্র ভাঙন। সেই সঙ্গে নগরীর বিভিন্ন স্থানে পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এ সম্পর্কে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট-
কক্সবাজার : দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সাগর অস্বাভাবিকভাবে উত্তাল হয়ে উঠেছে। যার প্রভাবে সৈকতজুড়ে তীব্র ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়েছে অন্যতম পয়েন্ট লাবনী সৈকত। এতে পর্যটনে বিরূপ প্রভাব দেখা দিয়েছে। আর দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
কক্সবাজারকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে চলাচলের জন্য বলা হয়েছে।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় সৈকতের লাবনী পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, সাগর উত্তাল, জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ২ থেকে ৪ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। কক্সবাজারে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।
সৈকতের লাবনী পয়েন্টে উচ্চ জোয়ারের আঘাতে ঝুঁকির মুখে ট্যুরিস্ট পুলিশের স্থাপনা। একদিকে ভাঙনের কারণে যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে স্থাপনাটি। যার জন্য জিও ব্যাগ দিয়ে রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে সৈকতের অন্যতম পয়েন্ট লাবনী জোয়ারের পানিতে ভেঙে তছনছ। পানি কমলে ভেসে উঠছে ভাঙনের চিত্র।
আর পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে কাজ করা হবে। কক্সবাজার পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমেদ বলেন, গত কয়েক বছর ধরে সৈকতে ডায়বেটিক পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত বর্ষা মৗসুমে ভাঙন তীব্র হচ্ছে। এতে প্রাথমিকভাবে সৈকতের মাদ্রাসা পয়েন্ট থেকে লাবনী পয়েন্টের কিছু অংশ জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে স্থায়ী কীভাবে ভাঙন রোধ করা যায় দ্রুত তার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
বরিশাল : লঘুচাপের প্রভাবে দিনভর বৃষ্টি আর দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীর জোয়ারের পানিতে নদী তীরবর্তী এলাকাসহ বরিশালে নি¤œাঞ্চল তলিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে নগরীর বিভিন্ন সড়কে পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। আরো ২-৩ দিন মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে বরিশালে আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত বরিশালে ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া নদী তীরবর্তী এলাকায় নি¤œাঞ্চল ২-৪ ফুট তলিয়ে যেতে

পারে। এদিকে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী বিভাগের মধ্যে বরিশাল নগর সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার থেকে বরিশালসহ দক্ষিণের জেলাগুলোর বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। বুধবার ভোর রাত থেকে বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত টানা বৃষ্টি হয়েছে। বরিশালের আকাশ কখনো মেঘলা থাকছে, কখনো বা রোদ উঠছে, তবে ঝড়ো বাতাস বয়ে চলছে। টানা বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে কীর্তনখোলা তীরবর্তী চরবাড়িয়া, লামচড়ি ও শায়েস্তাবাদের নিম্নাঞ্চলগুলো। সেইসঙ্গে বরিশাল নগরীর মধ্য দিয়ে বয়ে চলা খালগুলোর পানিতে যেমন নিচু এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে দিচ্ছে, তেমনি খালের সঙ্গে সংযুক্ত ড্রেনের মাধ্যমে রাস্তাঘাটে পানি উঠে আসছে। ফলে বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। নগরীর সদর রোড, বগুড়া রোড, লঞ্চঘাট, পলাশপুর ও কাউনিয়ার বিভিন্ন স্থানে সড়কে পানি জমেছে। তবে জোয়ারের সময় পানি বাড়লেও ভাটায় তা কমে যায়।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মাসুম বলেন, সামনে পূর্ণিমা রয়েছে। এর আগে নদ-নদীর পানি প্রাকৃতিক নিয়মে স্বাভাবিকভাবেই বাড়ছে। তবে বাতাসের গতি বেশি থাকায় স্বাভাবিক নিয়ম থেকে নদীর পানি বেশি বেড়েছে।
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা বন্দরসহ গোটা উপকূলজুড়ে বইছে অস্বাভাবিক জোয়ার। সাগর ও বিভিন্ন নদ নদীর পানি ৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভাঙন কবলিত বেড়িবাঁধ দিয়ে রামনাবাদ নদীর পানি প্রবেশ করে উপজেলার লালুয়া, চম্পাপুর এবং ধানখালী ইউনিয়নে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। দুই দফা জোয়ারের পনিতে ভাসছে গ্রামীণ জনপদের বাড়িঘর,স্কুল মাদ্রাসা, পুকুর, ঘেরসহ ফসলের ক্ষেত। এসব এলাকার অধিকাংশ পরিবারে দুপুরের রান্নাও হয়নি। তবে এ বছর আমন আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে কৃষকের।
সরজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার রাবনাবাদ নদী পাড়ের বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ কোথাও কোথাও মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। জোয়ারের সময় প্রবল ঢেউয়ের ঝাপটা বেড়িবাঁধের ওপর আছড়ে পড়ছে। উপজেলার ধানখালী ও চাম্পপুর ইউনিয়নের দেবপুর ও নিশানবাড়িয়া এলাকায় এমন দৃশ্য দেখা গেছে। মানুষ এখন বসবাসের অবস্থানও হারিয়ে ফেলছে। গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি পালন বন্ধের উপক্রম হয়েছে। কৃষকরা বীজতলা করতে পারছে না। এমন কী সন্তানদের স্কুল মাদ্রাসায় যাওয়া পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে। লালুয়া ইউনিয়নের শহিদ হাওলাদার বলেন, জোয়ারের পানিতে সব তলাইয়া রইছে। চাষাবাদ তো দূরের কথা, ঘর বড়িতে থাকাই এখন দায় হয়েছে।
বানাতিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সুরাইয়া নাছরিন শিল্পী সাংবাদিকদের জানান, জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ায় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় অভিভাবকরা সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়