বাড়িসহ বিপুল সম্পদ : অনুসন্ধান চেয়ে ওসি মনিরুলের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট

আগের সংবাদ

শ্রমিক ধর্মঘটে ‘অচল’ চা শিল্প

পরের সংবাদ

আমি তোর রাফখাতা : অবোধ বালিকার বিষণ্ন দুপুর

প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

‘বকুল, কত না সহজে তুমি- বলেছিলে/ প্রতিটি ঝড়ের পরে রেখে যেতে হয় চিহ্ন/ জীবনের পৃষ্ঠা আঁকা, স্মৃতির ক্যানভাসে।/ যে সুড়ঙ্গ থেকে ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে/ আলো উঠে আসে, তাকে কী করে উড়ে যেতে/ দেবে ঝড়ে, চিহ্ন আঁকা আলপথে? গুঞ্জুরিত মাছি,/ সে যদি মৌমাছিও হয়, তাকেও তো আট/ পায়ে আঁকড়ে ধরতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে মাকড়শা।’ মামুন রশীদ এভাবেই লিখেছেন, তাঁর কবিতা-‘বকুল, কত না সহজে’। কবিতাটা স্থান পেয়েছে তার সাম্প্রতিক কবিতার বই ‘আমি তোর রাফখাতা’য়। নারীরা হাঁড়ির একটি ভাত টিপে বলে দিতে পারেন, হাঁড়ির পুরো ভাতের অবস্থা, একই ভাবে মামুন রশীদের এই একটি কবিতা পাঠেই পাঠকের ধারণা হয়ে যায় মামুন রশীদের কবিতা কতটা ধারালো, কতটা শক্ত শব্দের বুনন। এছাড়া স্বতন্ত্র ধারার কবি মামুন রশীদ কবিতায় একটি নিজস্ব আদল তৈরি করেছেন যা কবিতা প্রিয় পাঠকদের ভালোলাগবে। ভালোলাগার থেকে বড় কথা প্রত্যেক পাঠকের মনোজগতে অনুরণন সৃষ্টির জন্য জমাটবাঁধা শব্দের কারুকাজ। চিরচেনা সুর।
‘স্মৃতিকে যতই দুমড়ে-মুচড়ে মড়মড় করে/ সশব্দে ভেঙে ফেলো তোমার মনোভাবের বাইরে/ বই হাতে ছোটাছুটি করা শিশু/ হয়তো আচ্ছন্ন করে ফেলবে কোনো বিষণ্ন দুপুর।/ পেরিয়ে আসার কতগুলো দিন/ ওই পুকুরপাড়, ঢেউ না তোলা/ জলে ফড়িংয়ের নিষ্প্রাণ বসে থাকা (আমাকে তোমার মনে পড়ার কথা)।’ এভাবে একজন কবির কথা যখন হাজারও পাঠকের কথা হয়ে যায়, তখন কবি স্থায়ী আসন গেড়ে বসেন পাঠকের মনের মধ্যে।
এ গ্রন্থে আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য, কবিতা যেন কবিতা নয়, এক একটি ছোটগল্প। গল্প রসে টইটুম্বর । যেমন- ‘লেভেল ক্রসিংয়ে হুটোপুটি করছে কয়েকটি নেকড়ে।/ দূরে, শ্বেতশুভ্র এক খরগোশ স্তব্ধ হয়ে আসা আকাশের/ রঙের কাছে শিখছে একাকিত্ব। হারিয়ে যাওয়া সময়কে / এক, দুই, তিন, চার, পাঁচগুণে ভাবতে শিখছে, দেখছে/ সূর্যাস্তের ভেতর কেমন মিলিয়ে যায় রাত্রির অন্ধকার (একাকিত্ব)।’ গ্রন্থভুক্ত প্রায় বেশিরভাগ কবিতাই স্বাদে-গন্ধে-মেজাজে এক একটি গল্প এবং চরিত্রগুলো আমাদের খুব চেনা, বিশেষ করে যাদের শেকড়গ্রামে।
ভাষার অকৃতিম সরলতা, স্বতন্ত্র বাচনভঙ্গি, ঋজু বাকনির্মাণ ও তী² উচ্চারণে নির্মিত মামুন রশীদের প্রতিটি কবিতা। শব্দ ও কল্পনার মেলবন্ধনে পাঠককে মোহাচ্ছন্ন করে রাখে বহুক্ষণ।
আলোচিত গ্রন্থে ২৮টি কবিতা স্থান পেয়েছে। গ্রন্থভুক্ত কবিতাগুলো শাশ্বত সত্যের মতো সৃষ্টিশীল মনোজগৎ এতটা-ই পরিতৃপ্ত করে যে- মনে এক অনাবিল প্রশান্তি এনে দেয়। মনে হয় এটা অনস্বীকার্য সত্যের চিরন্তন দলিল যা পাঠকের ঈপ্সিত লক্ষ্যকে ছুঁইয়েছে অবারিত। তার সৃষ্টিতে পরিতৃপ্ত পাঠকমন। এখানে রবীন্দ্রনাথের একটা কথা মনে পড়ে যায়, তিনি বলেছেন, ‘যে কবিতা পাঠে প্রশান্তি থাকে না, সে কবিতা টিকবে না।’ সে সূত্রে, মামুন রশীদের কবিতা যুগ যুগ ধরে মানুয়ের মাঝে থেকে যাবে। তিনি যে এক অনুসন্ধিৎসু কবি, তার আভাস মেলে তার প্রতিটি কবিতায়।
‘ওপরে উঠতে উঠতে সিঁড়ির শেষ ধাপে দাঁড়িয়ে/ কই এসো, বলে আহবান। শব্দেরও এমন/ নির্জনতা থাকে? ফুঁ দিয়ে উদ্বেলিত করে তোলে?/ মুখ গুঁজে থাকা শামুক, তোমাকে দেখার পর জেগে উঠে/ নিরুত্তাপ ছায়ার ভেতর থেকে খুঁজতে থাকে (তুমি)।’ এভাবে কবির মধ্যে জেগে থাকা নৈঃশব্দ্য, মনোজগতের হর্ষ বিষাদ, নৈসর্গিক সৌন্দর্য কবিতার অবয়ব নিয়ে যখন পাঠকের চেতনায় ফুটতে থাকে, জ¦লন্ত নক্ষত্র হয়ে, তখন সেই কবিতায়, পাঠকের একটা ভালোলাগার জায়গা তৈরি হয়। পাঠক কবিতায় মগ্ন হন সহজাত ভাবে। এটাই কবির কৃতিত্ব। যা মামুন রশীদের কবিতায় উপস্থিত। ধন্যবাদ কবিকে।

বেহুলাবাংলা প্রকাশন; প্রচ্ছদ : শ ই মামুন, বইটির মূল্য : ১৫০ টাকা।

-সৈয়দ নূরুল আলম

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়