যাকাত তহবিলের অর্থ আত্মসাৎ : সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য পেছাল

আগের সংবাদ

বিসিবির ধমকে পিছু হটলেন সাকিব : বিসিবি সভাপতি পাপনের আল্টিমেটামের পর বেটউইনার নিউজের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দিয়ে চিঠি

পরের সংবাদ

বিপিসির আয়-ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন সিপিডির

প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) গত ৬ বছরে অন্তত ৪৬ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে। এর মধ্যে সরকার নিয়েছে মাত্র ১০ হাজার কোটি টাকা। বাকি ৩৬ হাজার কোটি টাকার হিসাব জনগণের কাছে তুলে ধরার দাবি জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। গবেষণা সংস্থাটি বলছে, ৩৬ হাজার কোটি টাকার হিসাব না দিয়ে বিপিসি বারবার লোকসানের কথা বলছে। সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিপিসি বলছে ওই টাকার মধ্যে ৩৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। কিন্তু কোথাও কোনো হিসাব খুঁজে পাওয়া যায় না। তারা কোনটা লাভ, কোনটা লোকসান বলছে সেটা জানা প্রয়োজন। আমি বিপিসির পুরাতন হিসাবের খতিয়ান জানতে চাই।
গতকাল বুধবার ধানমন্ডিতে সিপিডির কার্যালয়ে আয়োজিত সংলাপে এসব কথা উল্লেখ করে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বিপিসির পুরাতন হিসাবের খতিয়ান জনগণের সামনে প্রকাশের দাবি জানান। ‘জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি: এখন এড়ানো যেত কি?’ শীর্ষক সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন, বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান, সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক, যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
এ সময় গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিপিসি সব সময় জ্বালানি তেল বিক্রি করে লাভ করেছে। তাহলে এখন কেন ভর্তুকি তুলে নেয়া হলো? তিনি বলেন, বাকি ৩৬ হাজার কোটি টাকা কোথায়? ১০ হাজার কোটি টাকা সরকার নিয়েছে। বিপিসির বাকি টাকা কোথায় গেল? শুনেছি প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছু টাকা খরচ করা হয়েছে। আমরা দেখছি বিপিসি নাকি ব্যাংকের সবচেয়ে ধনী গ্রাহক। বিপিসির ২৫ হাজার কোটি টাকা অ্যাকাউন্টে রাখা হয়েছে। তাহলে ওই টাকা কোন টাকা? চলতি অর্থবছরেও ৫ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে বিপিসি। আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি, এ বছরেও বিপিসি বিনিয়োগ করবে! জনগণের মাথায় বোঝা চাপিয়ে বিপিসি কোথায় বিনিয়োগ করবে?
তিনি বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন সূত্রে যে খতিয়ান দেখতে পাই, তাতে নিজস্ব অর্থায়নে ১১টি প্রকল্পের তথ্য পেয়েছি। সেখানে ব্যয় হবে ৮ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। এর মধ্যে মাত্র ৫টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। বাকিগুলো বন্ধ আছে। তাহলে বিপিসির টাকা কোথায়? তিনি বলেন, অবশ্যই জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এড়ানো যেত। সংকট এড়ানো যেত, মূল্যবৃদ্ধির প্রয়োজন পড়ত না। বিপিসি যদি তার হিসাবে স্বচ্ছতা রাখত, তাহলে বাড়তি ব্যয়ের হিসাব সমন্বয় করা যেত। বিপিসি কীভাবে তার অর্থের হিসাব রাখছে, আমাদের জানা দরকার। তারা কোনটা লাভ, কোনটা লোকসান বলছে, সে হিসাব জনগণের সামনে আসা দরকার।
মূল প্রবন্ধে ফাহমিদা খাতুন বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে, ২০১৫ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিপিসি ৪৬ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা লাভ করেছে। বর্তমানে জ্বালানি তেলের দাম বাংলাদেশের চেয়ে নেপাল ও পাকিস্তানে বেশি। এখানে মনে রাখতে হবে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনাম। নীতি নির্ধারকদের এ বিষয়টি মাথায় রাখতেই হবে। দাম কাদের চেয়ে বেশি, সিঙ্গাপুর, হংকং ও জার্মানির চেয়ে! যাদের মাথাপিছু আয় ৫০ হাজার ডলারের কাছাকাছি তাদের সঙ্গে তুলনা করা হয়। যখন তুলনা করব তখন সে দেশের আর্থসামাজিক অবস্থান ও প্রেক্ষাপট মাথায় রাখা জরুরি। তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে প্রথমেই পরিবহন সেক্টরের ভাড়া বৃদ্ধি পায়। অনেক কৃষক কৃষিকাজ ছেড়ে দেবে, ফলে আমদানি আবার বেড়ে যাবে। শিল্পে উৎপাদন খরচও বেড়ে যাবে। তাহলে ব্যবসার লভ্যাংশ কমে যাবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। অর্থাৎ ধাপে ধাপে খরচ বৃদ্ধি দেশের মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি করবে, যার প্রভাব পড়বে জীবনযাত্রায়। এর বড় ধাক্কা আসবে নি¤œ মধ্যবিত্ত ও গরিবদের ওপর।
এ সময় বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, ভর্তুকি প্রত্যাহার সমর্থন করি কিন্তু যেভাবে করা হয়েছে, এটাকে সমর্থন করি না। দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে খারাপ সময়ে সরকার জ্বালানি তেলের কর তুলে দিতেই পারে। বরং দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের ওপর পরোক্ষ কর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।
এটা ভয়ংকর বৈষম্যমূলক। ধনীর কিছু হবে না, গরিব মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, একবারে এত বেশি দাম বাড়ানোর মতো পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ এখনো আসেনি। ধানচাষে প্রতি বিঘা জমিতে এক হাজার টাকা খরচ বাড়বে কৃষকের। এ খাতে ১৫ লাখ কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার হয়, যার ৭৫ শতাংশ ডিজেলচালিত। এখানে অন্তত আগের দামে জ্বালানি তেল সরবরাহ করতে হবে। মূল্যবৃদ্ধি এড়ানো গেলে রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য সহায়ক হতো বলে মনে করছেন বিকেএমইএ সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান। প্রায় ৩৫০ যাত্রী ও ১২টি দূরপাল্লার বাস কাউন্টারে গিয়ে কথা বলেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় কিছু সুপারিশ করেছে সিপিডি। এতে বলা হয়, মূল্যবৃদ্ধি পুনর্বিবেচনা করে এটি কমিয়ে আনা। খোলাবাজারে কম দামে সরকারের পণ্য বিক্রি বাড়ানো। রেশন কার্ডের সংখ্যা আগের চেয়ে বাড়ানো; শুধু দরিদ্র নয়, নি¤œ আয়ের মানুষেরও দিতে হবে। আর এটা যার প্রয়োজন, তাকে দেয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করা। মধ্যমেয়াদি ব্যবস্থা হিসেবে প্রাথমিক জ্বালানি নিশ্চিত করতে দেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়