যাকাত তহবিলের অর্থ আত্মসাৎ : সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য পেছাল

আগের সংবাদ

বিসিবির ধমকে পিছু হটলেন সাকিব : বিসিবি সভাপতি পাপনের আল্টিমেটামের পর বেটউইনার নিউজের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দিয়ে চিঠি

পরের সংবাদ

জ্বালানির বাড়তি দামে বিরূপ প্রভাব পড়বে বিমা খাতে

প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দেশের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার বিরূপ প্রভাব পড়বে লাইফ ও নন-লাইফ বিমা কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা ব্যয়ে। বেড়ে যাবে কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা ব্যয়। বিমা খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফুয়েল, ট্রাভেলিং, কনভেয়ান্স, এন্টারটেইনমেন্টসহ বিমা কোম্পানিগুলোর বেশ কিছু খাতে এই খরচ বাড়বে। ফলে কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা ব্যয় নিয়ন্ত্রণের যে চেষ্টা চলছে তাও কিছুটা বাধার সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট মধ্যরাত থেকে দেশে সকল প্রকার জ্বালানি তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে সরকার। এতে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম বেড়েছে ৩৪ টাকা, কেরোসিন ৩৪ টাকা, অকটেন ৪৬ টাকা এবং পেট্রল ৪৪ টাকা। এর ফলে একজন ক্রেতাকে প্রতি লিটার ডিজেল ১১৪ টাকায়, কেরোসিন ১১৪ টাকায়, অকটেন ১৩৫ টাকায় ও পেট্রল ১৩০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। জ্বালানি তেলের এই মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে দেশের লাইফ ও নন-লাইফ বিমা কোম্পানিগুলোর পরিচালক ও মুখ্য নির্বাহীদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্যও জানা গেছে। তারা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে বিমা কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা ব্যয় আরো বেড়ে যাবে। তবে তা ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের নির্ধারিত সীমার ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। বছর শেষে আয়-ব্যয়ের হিসাব করার পরই তা স্পষ্ট হবে বলেও মনে করছেন তারা।
বিমা কোম্পানিগুলোর পরিচালক ও মুখ্য নির্বাহীরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে লাইফ বিমা খাতে। নন-লাইফ বিমার তুলনায় লাইফ বিমায় সরাসরি প্রান্তিক মানুষের সাথে যোগাযোগ থাকে। তাছাড়া লাইফ বিমার মার্কেটিংয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। ফলে তাদের যাতায়াত খরচ আগের তুলনায় বেশ খানিকটা বাড়বে। জ্বালানি সংশ্লিষ্ট খরচের বিষয়ে ধারণা নিতে দেশের ২৫টি লাইফ ও নন-লাইফ বিমা কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০২১ সালে ১৪টি নন-লাইফ বিমা কোম্পানির তেল খরচ ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা, যা ২০২০ সালে ছিল ২ কোটি ২২ লাখ টাকা। অপর দিকে ২০২০ সালে ১১টি লাইফ বিমা কোম্পানির তেল খরচ ১২ কোটি ২৬ লাখ টাকা, যা ২০১৯ সালে ছিল ১৬ কোটি ২০ লাখ টাকা। ট্রাভেলিং ও কনভেয়ান্স খাতে গেল বছর ১০টি নন-লাইফ বিমা কোম্পানি ৩৫ লাখ ২২ হাজার টাকা ব্যয় করেছে। এর আগে ২০২০ সালে এসব কোম্পানির এই ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৫৭ লাখ ৯ হাজার টাকা। এ ছাড়াও লাইফ বিমা খাতের ৯টি কোম্পানির ট্রাভেলিং ও কনভেয়ান্স খাতে ২০২০ সালের ব্যয় ছিল ১২ কোটি ৬৯ লাখ ২ হাজার টাকা, যা ২০১৯ সালে ছিল ১৪ কোটি ৬৫ লাখ ৩৮ হাজার টাকা।
বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) ২০১৮ সালের তথ্য অনুসারে, দেশের ২৮টি লাইফ বিমা কোম্পানি ১ হাজার ৮৪১টি গাড়ি ব্যবহার করেছে এবং ৪৬টি নন-লাইফ বিমা কোম্পানি ব্যবহার করেছে ১ হাজার ১২৮টি গাড়ি। এদিকে গত কয়েক বছর ধরেই ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে বিমা কোম্পানিগুলো। সর্বশেষ ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বরের সাময়িক হিসাব বিবরণী ও আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ৩২টি লাইফ বিমা কোম্পানির মোট ব্যবস্থাপনা ব্যয় ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা, যা ২০২০ সালে ছিল ২ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৫টি কোম্পানির ব্যয় কমেছে ৩৪৭ কোটি টাকা এবং ১৭টির ব্যয় বেড়েছে ১১৫ কোটি টাকা। অপর দিকে ২০১৯ সালে ৪৫টি নন-লাইফ বিমা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা খাতে মোট ব্যয় ছিল ১৯৩ কোটি টাকা, যা ২০২০ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ২১১ কোটি টাকা। এ অবস্থায় জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে বিমা কোম্পানিরগুলোর ব্যবস্থাপনা ব্যয় আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মুখ্য নির্বাহী বলেছেন, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে দেশের বিমা খাতও প্রভাবিত হবে। তবে বড় ধরনের কোনো প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না। কারণ, কোম্পানিগুলোর বেশির ভাগ গাড়ি তেলের পাশাপাশি গ্যাসেও চলে। তবে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে এবং এর প্রভাব পড়বে বিমা কোম্পানিগুলোর প্রিমিয়াম আয়ে। মানুষের সঞ্চয়ের ক্ষমতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি গাড়ি ক্রয়ের পরিমাণ কমে যাবে। যার কারণে লাইফ ও নন-লাইফ উভয় খাতের প্রিমিয়াম কিছুটা কমে আসতে পারে বলেও মনে করেন তারা।
আরেক বিমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে আমাদের ব্যবস্থাপনা খাতে প্রভাব পড়বে। আমাদের বিভিন্ন স্থানে ট্যুর করতে হয়। শুধু হেড অফিস না, সঙ্গে মাঠ পর্যায়ের কর্মীদেরও ট্যুর করতে হয়। যাতায়াত, ভেন্যু ও ফুয়েল এর ব্যয় বাড়ার সঙ্গে ব্যবস্থাপনা ব্যয়ও বাড়বে। তবে ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের অনুমোদিত সীমায় প্রভাব পড়বে কিনা এটা সেভাবে বলা যাবে না। এটা ব্যবস্থাপনা খাতের মেজর কোনো ব্যয় না হওয়ায় অনুমোদিত সীমায় সেভাবে প্রভাব পড়বে না। তিনি বলেন, বিমা খাতে মেজর ব্যয় হচ্ছে কমিশন। বলা যায়, ট্যুর, ফুয়েল ও ভেন্যু ব্যয় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়