যাকাত তহবিলের অর্থ আত্মসাৎ : সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য পেছাল

আগের সংবাদ

বিসিবির ধমকে পিছু হটলেন সাকিব : বিসিবি সভাপতি পাপনের আল্টিমেটামের পর বেটউইনার নিউজের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দিয়ে চিঠি

পরের সংবাদ

ঘুম নেই নদীপাড়ের শত শত পরিবারের : মহম্মদপুরে মধুমতির ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বাড়ি-জমি

প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মুরাদ হোসেন, মহম্মদপুর (মাগুরা) থেকে : মহম্মদপুরে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে মধুমতি নদীর ভাঙন। প্রতিদিনই ভাঙছে নদীর পাড়। এতে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, গাছপালা ও শতশত একর আবাদি জমি। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে নদীপাড়ের শতশত মানুষের। কেউ কেউ ঘর ও মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন। জমিজমা ও বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন অনেকে। অসহায় অবস্থায় অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন খোলা স্থানে।
সরজমিন নদীভাঙন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বসতভিটা ও গাছপালা মধুমতির গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ঘরসহ প্রয়োজনীয় মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন মানুষ। বিক্রি করে দিয়েছেন গাছপালা। চোখের সামনে ভিটাবাড়ি মধুমতিতে বিলীন হয়ে যেতে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে।
উপজেলা সদরের গোপালনগর গ্রামের হাসান কাজীর স্ত্রী রেহেনা খাতুন বলেন, এ পর্যন্ত ৫ থেকে ৬ বার বাড়ি সরিয়েছি। আমরা দরিদ্র কৃষক পরিবার। এবারও ভাঙনে আমাদের বসতবাড়ি ও গাছপালা নদীতে চলে গেছে। দূরে কোথাও নতুন করে বাড়িঘর তোলার সামর্থ্য নেই। শুধু রেহেনা খাতুনই নন; এ রকম অগণিত পরিবার একাধিকবার বাড়িঘর সরিয়েও মাথা গোঁজার শেষ আশ্রয়টুকু রক্ষা করতে পারছে না। রাক্ষুসী মধুমতি গিলে খাচ্ছে বাড়িঘর।
জানা গেছে, উপজেলার উত্তরে চরসেলামতপুর থেকে শুরু করে দক্ষিণে কালিশংকরপুর পর্যন্ত মধুমতির ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এর মধ্যে গোপালনগর, মহেষপুর, হরেকৃষ্ণপুর, ঝামা, আড়মাঝি, যশোবন্তপুর, চরপাচুড়িয়া, রায়পুর, মুরাইল, ধুপুড়িয়া, জাঙ্গালিয়া, রুইজানি, কাশিপুর, ধুলজুড়ি, দ্বিগমাঝি, দেউলি ও ভোলানাথপুর গ্রামও ভাঙনের শিকার। এসব গ্রামের মানুষের কাছে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে মধুমতি।
মধুমতি নদী ভাঙনের মুখে রয়েছে মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগাহ, স্কুল, বাজার, মন্দির ও অসংখ্য দোকানপাটসহ হাজার হাজার একর ফসলি জমি।
নদীপাড়ের শতশত পরিবারের বসতভিটা ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন। এতে বাড়ছে ভূমিহীনের সংখ্যাও। তাই স্থায়ী বাঁধের দাবি করছেন এলাকাবাসী। স্থানীয় ইউপি মেম্বার মো. মুরাদ হোসেন বলেন, আমার গ্রামের দিনমজুর হাসান কাজীর বসতবাড়িসহ গাছপালা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এই এলাকার আরো অনেক বসতভিটা ঝুঁকিতে রয়েছে। গোপালনগর গ্রামের বাসিন্দা ধোয়াইল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, গোপালনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অনেক বসতবাড়ি ও ফসলি জমি ভাঙনের চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। আমার নিজের বসতবাড়িও রয়েছে ঝুঁকিতে।
একটা পরিবার পাঁচ থেকে সাতবার বাড়ি সরিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। তাই নদীপাড়ের অসহায় পরিবারের কথা ভেবে ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (অঃ দাঃ) জি এম রাইসুল ইসলাম বলেন, ভাঙনকবলিত এলাকা কিছু আগে পরিদর্শন করেছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী। তিনি আমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। খুব দ্রুত ভাঙনকবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হবে।
মাগুরা-২ আসনের সাংসদ ড. বীরেন শিকদার বলেন, আগে হরেকৃষ্ণপুর থেকে ঝামা পর্যন্ত ৩০০ মিটার এলকায় জিও ব্যাগ ফেলা হয়। এছাড়া কাশিপুর এলাকায় প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫০ মিটার বাঁধ নির্মাণকাজ করা হয়েছে। এ বছরও আমরা নদীভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি। তবে আমি ভাঙন প্রবল এলাকাগুলো চিহ্নিত করে স্থায়ী বাঁধ দেয়ার জন্য চেষ্টা করছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়