যাকাত তহবিলের অর্থ আত্মসাৎ : সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য পেছাল

আগের সংবাদ

বিসিবির ধমকে পিছু হটলেন সাকিব : বিসিবি সভাপতি পাপনের আল্টিমেটামের পর বেটউইনার নিউজের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দিয়ে চিঠি

পরের সংবাদ

কমিশন গঠন করে সত্য তুলে ধরা প্রয়োজন > সাক্ষাৎকার : অজয় দাশগুপ্ত

প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ২১ বছর পর হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে। কিন্তু ইতিহাসের নির্মম এই হত্যাযজ্ঞের নেপথ্যে মদতদাতা দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ এখনো উন্মোচন হয়নি। ১৫ আগস্টের নেপথ্যের ষড়যন্ত্র উদ্ঘাটনে কমিশন গঠন ও শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি সব মহলের। এ নিয়ে ভোরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন সেই সময়ের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। পর্যায়ক্রমে তা তুলে ধরা হবে পাঠকের সামনে।
ঝর্ণা মনি : বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে পুরো জাতির মতোই স্তম্ভিত হয়ে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তাৎক্ষণিকভাবে ছাত্রনেতারা ক্যাম্পাসে প্রতিবাদের চেষ্টা করলে সেনা সদস্যদের কড়া টহলের কারণে ব্যর্থ হন। এরপর ঈদ ও পূজা মিলিয়ে দুইমাস বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকে। প্রকাশ্য কর্মসূচি না হলেও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতারা একের পর এক বৈঠক করেন। টানা ৬৭ দিন বন্ধ থাকার পর ১৮ অক্টোবর খুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কারফিউ, পুলিশ-বিডিআরের টহলসহ গোয়েন্দা তৎপরতার মধ্যেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আগের রাতে কলাভবন, সায়েন্স এনেক্স ও কার্জন হলের দেয়ালে দেয়ালে লেখা হয় ১৫ আগস্ট থেকে ‘নিষিদ্ধ’ তিনটি স্লোগান- জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু এবং এক মুজিবের রক্ত থেকে লক্ষ মুজিব জন্ম নেবে। ঢাকায় প্রকাশ্য প্রতিবাদ হয় ২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে সংগ্রামী ছাত্র

সমাজের ব্যানারে। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ হয় ৪ নভেম্বর। বটতলায় প্রতিবাদ সমাবেশে নেতৃত্ব দেন তৎকালীন ডাকসু ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। ওইদিনই বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট সভায় হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন চ্যান্সেলর। ছাত্র প্রতিনিধি অজয় দাশগুপ্ত, ইসমত কাদির গামা ও মাহবুব জামান আনুষ্ঠানিকভাবে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করলে সর্বসম্মতভাবে তা অনুমোদিত হয় এবং এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ওইদিন ছাত্র-জনতার বিশাল মিছিল বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে যায়। বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যার প্রতিবাদে ৫ নভেম্বর ঢাকায় আধা বেলা হরতালের ডাক দেয়া হয়। তৎকালীন সেই প্রতিবাদী ছাত্রনেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক, গবেষক অজয় দাশগুপ্ত।
শোকের মাস আগস্ট উপলক্ষে গতকাল বুধবার ভোরের কাগজকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের শ্বেতপত্র প্রকাশ, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরেন তিনি।
অজয় দাশগুপ্ত বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রভাব শুধু বাংলাদেশ কিংবা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতেই নয়, বিশ্ব রাজনীতিতে পড়েছিল। রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনকারী দেশকে বিপদে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এই ষড়যন্ত্র সবার জানা উচিত। এদের চিহ্নিত করা প্রয়োজন। ইতিহাসের সত্য উদ্ঘাটন প্রয়োজন। প্রয়োজন কমিশন গঠন করে বিশ্ববাসীর কাছে সত্য তুলে ধরা। এক্ষেত্রে বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, আইনজীবী, গবেষক, লেখক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক-সবার দায় রয়েছে। আর জনমত গঠনের বড় দায় আওয়ামী লীগের।
৪৭ বছরেও তদন্ত কমিশন না হওয়ার কারণ হিসেবে অজয় দাশগুপ্ত বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার করতেই জাতির ২১ বছর লেগেছে। এজন্য আইন করতে হয়েছে। কারণ কুখ্যাত ইনডেমনিটি আইন করে দিয়ে বিচারের পথ রুদ্ধ করা হয়েছিল। এর ওপর নানারকম কুৎসা, অপপ্রচার চলছিল। ১৫ আগস্টের আগে সব মিডিয়া বঙ্গবন্ধুর পক্ষে ছিল। কিন্তু পরে সব ঘুরে গিয়েছিল। কেন? মার্শাল ল জারি করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হল। সেখানেই জিয়া, এরশাদ যা প্রচার করেছে, যে কুৎসা রটনা করেছে, তাই হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নাম নিষিদ্ধ ছিল। জয় বাংলা উচ্চারণ করতে দেয়া হয়নি। শ্বাসরুদ্ধ, ভীতিকর, এমনকি মৃত্যুদণ্ডের মতো অবস্থা সৃষ্টি করেছিল। এভাবেই তো ২১ বছর চলে গেছে। এরপর ’৯৬ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে ইনডেমনিটি আইন বাতিল করেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা সিদ্ধান্ত নেন, বিশেষ আদালতে নয়, প্রচলিত আদালতেই বিচার হবে যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে। এরপর বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা, সরকার পরিবর্তন এসব কারণে কালক্ষেপণ হয়েছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগের একটি অংশ কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কারাগারে বন্দি ছিলেন। অন্যদিকে একটি অংশ মুজিব সরকারের বিরোধিতা করে মোশতাককে সমর্থন করে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাবা সিরাজুল হকসহ কেউ কেউ প্রকাশ্য সভায় মোশতাকের বিরোধিতা করেছেন। বঙ্গবন্ধু সরকারের কেউ যেন মোশতাক সরকারে যোগ না দেন সেজন্য আমরা ছাত্রনেতারা অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমরা তাদের আটকাতে পারিনি।
অজয় দাশগুপ্ত বলেন, মোশতাক সরকারকে সমর্থনকারীদের অনেকেই পরে জিয়া, এরশাদকে সমর্থন করে পরে আবার আওয়ামী লীগে ফেরত এসেছেন। আবার প্রশাসনের অনেকেই জিয়া, এরশাদের সামরিক শাসনকে সহযোগিতা করেছেন। কাজেই পনের আগস্টে কার কি ভূমিকা ছিল তা যেন প্রকাশ না পায়, সেই চেষ্টা তো অনেকেরই ছিল। জিয়া-মোশতাকের কি ভূমিকা ছিল, সেগুলোও সঠিকভাবে ওঠে আসেনি।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে আমেরিকা বিরোধিতা করেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ঘাতকদের পাশে তারা দাঁড়িয়েছে। খুনি ফারুকের বক্তব্যে স্পষ্ট রয়েছে, ‘ব্যাংককে যখন পৌঁছেছি তখন আমেরিকান দূতাবাস আমাদের স্বাগত জানিয়েছে।’
লিফশুলজের বইয়েও উল্লেখ রয়েছে, ‘খুনিদের যাতে বিচার না হয়, সেজন্য আমেরিকান দূতাবাস নানাভাবে চেষ্টা করেছে।’ অজয় দাশগুপ্ত বলেন, ৭১ এ আমেরিকা যেভাবে কলকাতায় মোশতাকের সঙ্গে চক্রান্ত করেছিল বাংলাদেশ যেন স্বাধীন না হতে পারে, একইভাবে ৭৫ এর পেছনেও তারা ছিল। কাজেই তারা চায়নি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের যখন বিচার হয়েছে, এর বাইরে যারা মদদ দিয়েছে, ষড়যন্ত্র করেছে, সেই রহস্য উন্মোচিত হোক।
তিনি বলেন, খুনিদের একজন আমেরিকায়, একজন কানাডায় রয়েছে। এ দেশগুলো মানবাধিকারের কথা বলে কিন্তু তারা ভালো করেই জানে এ লোকগুলো একটি স্বাধীন দেশের জাতির পিতার খুনি। সেই খুনিদের আরাম-আয়েশে ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ দিচ্ছে, রাজনৈতিক তৎপরতা করার সুযোগ দিচ্ছে। তাদের আইনে ফাঁসি নেই কিন্তু ভয়ঙ্কর এই খুনিদের তারা বন্দি করে রাখতে পারে। তারা তা করছে না। বরং খুনীদের সহযোগিতা করছে। এসবের ঊর্ধ্বে গিয়ে ইতিহাসের স্বার্থে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করে বিশ্বের সামনে শ্বেতপত্র প্রকাশ জরুরি। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকেই বড় ভূমিকা পালন করতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়