প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
‘ঘরের মানুষ, কবিতার মানুষ’ শিরোনামে ১০ জন কবিকে নিয়ে সমধারার এক ব্যতিক্রমী আয়োজন ছিল গত শুক্রবার ৩০ জুলাই বিকালে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ভবনে। সমধারার এ আয়োজনটি নানান কারণে গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলেই বিশ্বাস। সমধারার ঘোষণা অনুযায়ী এটি ছিল বিশেষ আয়োজনের প্রথম পর্ব। বিশেষ আয়োজনের প্রথম পর্বে উপস্থাপিত হয়েছেন সর্বকবি বাবুল আনোয়ার, ওসমান গণি এনু, হাফিজ রহমান, সৈয়দ নুরুল আলম, ইফতেখার হালিম, শুভ্রা নীলাঞ্জনা, চন্দ্রশিলা ছন্দা, নীলিমা শীল, তাহমিনা শিল্পী ও কাব্য সুমী সরকার।
সূচনা বক্তব্য এবং স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কবি দিলারা হাফিজ। এরপর শুরু হয় মূলপর্ব। সমধারা সম্পাদক সালেক নাছির উদ্দিনের সঞ্চালনায় এগোয় অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে একজন করে কবিকে পর্যায়ক্রমে মঞ্চে ডেকে নেয়া হয়, তার কবিতা থেকে তিনটি কবিতা আবৃত্তি করেন একজন আবৃত্তি শিল্পী, কবিতার মূল্যায়ন করে কথা বলেন মুখ্য আলোচক কবি ফরিদ আহমদ দুলাল এবং কবি স ম শামসুল আলম। অতঃপর কবি তার অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে পাঠোন্মোচন করা হয় সমধারা ৮৩তম সংখ্যাটি। সংখ্যাটিতে পদ্মা সেতু বিষয়ে বেশ ক’টি গদ্য এবং কবিতার পাশাপাশি যুক্ত হয় নির্বাচিত ১০ কবি ও কবিতা নিয়ে ক্রোড়পত্র। ক্রোড়পত্রে ‘একবিংশের কবিতা এবং সমধারার ১০ জন’ শিরোনামে প্রকাশিত ফরিদ আহমদ দুলালের দীর্ঘ প্রবন্ধটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। প্রবন্ধের শেষাংশটি পাঠ করলেই সমধারার ব্যতিক্রমী এ আয়োজনের স্বপ্নটি পরিষ্কার হওয়া যায়। আসুন প্রবন্ধের শেষাংশটি পাঠ করা যাক-
‘সমধারার ১০ জনকে আমি কারো সাথে তুলনা করতেই চাই না, আমি বরং এ ১০ জন কোথায় নিরঙ্কুশ সমগোত্রীয় তা উচ্চারণ করে সমধারার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং সংশ্লিষ্ট কবিদের করণীয় সম্পর্কে সামান্য আলোকপাত করেই এ রচনার ইতি টানবো। সমধারার সাথে দীর্ঘ সম্পৃক্তি এবং পর্যবেক্ষণে বারবারই আমার মনে হয়েছে, নানান কারণে ১০ জনের সবাই সমধারার ঘরের মানুষ; আর এ ঘরের মানুষদের সমধারা পর্যায়ক্রমে পাঠক মহলে পরিচিত করে তুলতে চায়। একবিংশের কাব্যালোচনায় যাঁদের সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করে আলোচনায় আনা হয়েছিলো, তাঁদেরও কেউ কেউ যখন সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে, সমধারার ১০ জনেরও কেউ কেউ হারিয়ে যেতেই পারেন; তাই আমি মনে করি সমধারা যেমন তার ঘরের কবিদের সামনে এগিয়ে নিতে চায়, কবিদেরও উচিত নিজেদের নিষ্ঠা, একাগ্রতা আর অনুশীলন দিয়ে নিজেদের এমন এক উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া, যাতে একদিন তাঁদের নামেও সমধারার ভূমিকা সাহিত্যের ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। কবি ও কবিতাবিষয়ক অকিঞ্চন এ আলোচনার পরও, উপসংহারে বলতে চাই- কবিতা যতœ চায়, কবিতা দহন চায়, গ্রহণ চায়, মগ্ন হতে বলে কবিতা। কবিতা ক্ষরণ চায়, নিবেদন চায়, প্রণয়-নৈবেদ্য চায় প্রতিদিন সারাক্ষণ। কবিতা মুগ্ধতা চায়, অভিনিবেশন প্রার্থনা করে, সতর্কতা চায় কবিতা। কবিতা প্রত্যয় চায়, আত্মবিশ্বাস চায়; আত্মপরিচয় চায়, স্বাতন্ত্র্যে উজ্জ্বল থাকতে চায় প্রতিদিন। কবিতা জীবনের গান গায়, হাঙরের মুখ থেকেও যেন ফিরে আসে প্রতিটি জীবন। কবিতা জীবনের সপক্ষে দাঁড়ায়। কবিতা সংগ্রাম চায়, উজান গাঙে গুন টেনে নিতে বলে কবিতার নাও। কবিতা ধৈর্য চায়, সহিষ্ণুতা চায়, কবিতা সংযম চায়, পরিমিতি চায়। অস্থিরতায় কবিতা ক্লিশে হয়ে পড়ে, ক্ষীণ-রুগ্ন হয় পড়ে। কবিতাবৃক্ষকে বেড়ে ওঠার অবকাশ দিতে হবে। এক মাসেই ফলবতী হবে কবিতাবৃক্ষ তেমনটি প্রত্যাশা করলে রক্তশূন্যতায় কবিতার অকাল মৃত্যু হবে। পূর্ণ ফল পেতে চাইলে কবিতাবৃক্ষকে ঋতুবতী হবার সুযোগ দিতে হবে। কাঙালের প্রতি পক্ষপাত নেই কবিতার, বিত্ত-বেসাতের কাছেও নেই নগ্ন আনুগত্য। করুণায় কবির ঘৃণা। কবিতা স্বপ্ন-স্বয়ম্বরা অযতেœ কবিতা বাহারী-বর্ণিল হলেও মরা; প্রত্যাখ্যাত কবিতা মৃত প্রজাপতি হয়ে পড়ে থাকে পথের ধুলায়। কবিতা নিজস্ব সবুজ খুঁজে পেতে চায় কবির প্রতিটি পঙ্ক্তির ভিতর। কবিতাচারিত্র্য হঠকারিতায় বিপন্ন না হয়, কবিতা তাই প্রত্যাশা করে একজন সৎ কবির কাছে। আসুন আমরা সবাই কবিতার প্রত্যাশা পূরণে সচেষ্ট হই! আমি এবং আমরা সমধারার ১০ জনের কাছে প্রত্যাশা করবো, তাঁরা সবাই যেন নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হন আর সমধারার স্বপ্নে যোগ করেন নতুন সকাল।’
সমধারার স্বপ্নটিকে আরো পরিষ্কার করতে আসুন আমরা সমধারা সম্পাদক সালেক নাছির উদ্দিনের পোস্ট থেকে পরবর্তী ঘোষণাটিও জেনে নিই-
‘ঘরের মানুষ, কবিতার মানুষ’ শিরোনামে ১০ জন কবিকে নিয়ে সমধারার বিশেষ আয়োজন ছিল ৩০ জুলাই ২০২২ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ভবনে। এটি ছিল এ শিরোনামে প্রথম আয়োজন। সবার উপস্থিতিতে ঋদ্ধ ছিল অনুষ্ঠানটি। সামনে কাজ করার প্রেরণা পেলাম। সবার সহযোগিতায় এ আয়োজনটি আগামীতেও চালিয়ে নিতে চাই। ‘ঘরের মানুষ, কবিতার মানুষ’-এর দশম আয়োজন সম্পন্ন হবার পর যে ১০০ জনকে আমরা পাবো, তাদের নিয়ে আবার একটি বড় আয়োজন করার ইচ্ছা রইলো। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে, ১০০ জন থেকে মূল্যায়ন করে পূর্ণাঙ্গ সংখ্যা প্রকাশ ও নিবেদিত অনুষ্ঠান করার। এখান থেকে মনোনীত হবে আগামীতে
‘সমধারা সাহিত্য পুরস্কার’ দেয়ার বিষয়টিও। ইতোমধ্যে সমধারা সাহিত্য পুরস্কার গ্রহণ করেছেন দেশের প্রথিতযশা কবি-সাহিত্যিকগণ। এ আয়োজনে কেবল সমধারার ঘরের কবিদেরই যুক্ত করা হবে। প্রতিটি আয়োজনে ১০ জনকে নিয়ে প্রকাশিত হবে সমধারার বিশেষ সংখ্যা। থাকবে ১০ কবির কবিতা নিয়ে মূল্যায়ন।
:: সালমা বেগ
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।