কিউআর কোডযুক্ত : ২ লাখ রিকশার নিবন্ধন দেবে ডিএনসিসি

আগের সংবাদ

সড়কে যেন অনিয়মই নিয়ম : মালিক-শ্রমিকদের বাধায় আইনের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়নি

পরের সংবাদ

হুমায়ূনময় একটি বিকাল

প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বটবৃক্ষ থেকে মঞ্চে ঝুলে আছে হুমায়ূন আহমেদের অসংখ্য বই। জোসনা ও জননীর গল্প, দেয়াল, বাদশাহ নামদার, নন্দিত নরকে, অপেক্ষা, কোথাও কেউ নেই, আগুনের পরশমনি, শ্যামল ছায়া, গৌরিপুর জংশন, হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম, হলুদ হিমু কালো র‌্যাব, মধ্যাহ্ন, মাতাল হাওয়া, বহুব্রিহী, আশাবরী, সাইকেল ও কয়েকটি ডাহুক পাখি, মিসির আলী সমগ্র, তোমাকে, নবনী, চৈত্রের দ্বিতীয় দুপুর, কবির প্রচ্ছদগুলো দুলছে বাতাসের সাথে। সাদা কালো হলুদের আবহে নান্দনিক মঞ্চ। যেন হুমায়ূন চেয়ে দেখছে দুচোখ ভরে।
হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে একটি বিকাল কাটানোর ইচ্ছা অনেক আগের। তার মৃত্যুর পর বিষয়টি নিয়ে কত যে পরিকল্পনা করেছি; মনে পড়ে হুমায়ূন আহমেদের ছোট মামা মাহাবুবুন্নবী শেখ স্যারের সাথেও আমাদের ইচ্ছাপূরণের লক্ষ্যে বসেছিলাম কয়েকবার। কোনোভাবেই সফলতার স্বাদ গ্রহণ করতে পারিনি। অতঃপর আমার এবং আমাদের মনোবাসনা পূর্ণ হলো। ময়মনসিংহের সাহিত্য সংস্কৃতির অঙ্গনের সংগঠন ‘পরম্পরা’ এবং কবি শামীম আশরাফের উদ্যোগে ‘হিমু আড্ডায় হুমায়ূন’ আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাস্তবায়িত হলো সেই সুপ্ত বাসনা; নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ দলমত নির্বিশেষে ময়মনসিংহ শহরের হাজারো সংস্কৃতিপ্রেমীর ঢল নেমেছিল ব্রহ্মপুত্রের তীরে হিমু আড্ডার আঙিনাজুড়ে। এতো প্রাণবন্ত উৎসবমুখর সাহিত্য সংস্কৃতির অনুষ্ঠান ময়মনসিংহবাসী দেখেনি দীর্ঘ দিন।
কিংবদন্তিতুল্য কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হুমায়ূন আহমেদের দশম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে পরম্পরা : সাহিত্যের উত্তরাধিকার, ময়মনসিংহ ২৯ জুলাই শুক্রবার বিকাল ৪টায় ব্রহ্মপুত্র তীরে আয়োজন করা হয় আলোচনা ও সংগীতানুষ্ঠান।
তরুণ শিল্পী আদিশ্রী সাহা যখন শোনাচ্ছিলেন, ‘যদি মন কাঁদে/ তুমি চলে এসো এক বরষায়’। তখন ব্রহ্মপুত্রপাড়ের আকাশ মেঘে কালো হয়ে গেছে। মনে হচ্ছিলো, যেন গানের আবেদনেই আকাশ কালো হয়ে পড়েছে; নদের ওপার থেকে বৃষ্টি এসে মাঝ নদী থেকে ফিরে গেছে। এ গানের রচয়িতা নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। ১৯ জুলাই ছিল লেখকের দশম মৃত্যুবার্ষিকী। হুমায়ূন আহমেদের ওপর আলোচনা, স্মৃতিকথা, হুমায়ূন আহমেদের লেখা ও তার চলচ্চিত্রে ব্যবহার করা গানে গানে আড্ডায় অংশ নেয়া ভক্ত, সুহৃদ, পাঠক ও সমালোচকেরা স্মরণ করেন হুমায়ূন আহমেদকে।
অনুষ্ঠানে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে কথা বলেন লেখকের বন্ধু ও ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের ইতিহাস বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও প্রাক্তন অধ্যক্ষ এইচ এম মনিরুজ্জামান, হুমায়ূন আহমেদের বিভিন্ন নাটকে অভিনয় করা ও চলচ্চিত্রের গান গাওয়া লোকশিল্পী কুদ্দুস বয়াতি, এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, এডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু, কবি মোস্তফা তারেক, কবি জনপদ চৌধুরী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন ময়মনসিংহের শিল্পী হীরক সিঙ্গার, জয়িতা অর্পা, মিজান বাউলা, ঈশান দে, সিঁথি সরকার, আদিশ্রী সাহা ও পিদিম অনন্তরূপা। শিল্পী হাসান মাসুদের হাওয়াই গিটারে সুরের মুগ্ধতা দিয়ে আয়োজন শুরু হয়।
কবি শামীম আশরাফের আয়োজন মানে কিছুটা উল্লাস, কিছুটা বিস্ময় আর ভিন্নতা। যেমন এই আয়োজনে বিস্ময় ছিল সভাপতিকে নিয়ে। আয়োজনে সভাপতি করা হয় প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদকেই! সঞ্চালক আমাদের আদরের, শাসনের শামীম আশরাফ ঘোষণা দিলেন, ‘আয়োজনের আলোচক-অতিথির নাম ঘোষণা করা হলো। আয়োজনের সভাপতিত্ব যিনি করবেন তিনি আসবেন না। অথচ আছেন আয়োজনেরই চারপাশ ঘিরে। সভাপতিত্ব করবেন হুমায়ূন আহমেদ!’ সবার ভেতরে যেন উৎফুল্লতা বেড়ে গেলো। এটিও করা যায়! এসব যখন ভাবনায় আলোড়িত হচ্ছে তখনই ‘পুংটা শামীম’ ঘুরিয়ে দিলেন মোড়। বললেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ আমাকে বললেন, আমাকে নিয়ে আয়োজন করতে দিয়েছি এটাই বেশি। আবার আমাকেই সভাপতি! না না! তুমি অন্য কাউকে রাখো। আমি আশপাশেই আছি।’ সভাপতি হিসেবে শামীম আশরাফ ঘোষণা করলেন আলোচক থেকে কবি ফরিদ আহমদ দুলালকে।
হুমায়ূন আহমেদ নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজক পরম্পরার পক্ষে তত্ত্বাবধান ও পরিচালনা করেন তরুণ কবি ও পরম্পরার সভাপতি কবি শামীম আশরাফ। অনুষ্ঠান বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে কুদ্দুস বয়াতি লোকজ ইনস্টিটিউট, ক্লিনআপ বাংলাদেশ, স্থানীয় শিল্পী-সাহিত্যিক, যুব নাগরিক সোসাইটি, স্টেজ ফর ইউ এবং তারুণ্যের ময়মনসিংহ। ময়মনসিংহের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সুধীজন ছাড়াও প্রচুর পাঠক ও সাধারণ দর্শকের সমাগম হয় অনুষ্ঠানে। দীর্ঘদিন পর ময়মনসিংহে এমন একটি সফল অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পেরে সবাই সন্তোষ প্রকাশ করেন।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে চমৎকার একটি বিকাল কাটানোর আনন্দে বিমোহিত ছিলাম আমরা। মনে হচ্ছিলো প্রত্যেকেই যেন হুমায়ূন আহমেদের সাথে আড্ডায় মগ্ন আছি, মনে হচ্ছিলো তার চিন্তা, ভালোলাগা আর ভালোবাসার আকাশে সকলেই যেন এক একটি ফড়িং কিংবা প্রজাপতি। সুন্দর আয়োজনের জন্য ‘পরম্পরা’ ও কবি শামীম আশরাফকে ধন্যবাদ। যারা নীরবে-নিভৃতে সহযোগিতায় ছিলেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।

:: মিজানুর রহমান টিটু

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়