ঢাকাস্থ বড়াইগ্রাম সমিতি সভাপতি আব্দুল গণি সম্পাদক নান্নু

আগের সংবাদ

ইসির সংলাপ থেকে অর্জন কী

পরের সংবাদ

ড. এম হাদিউজ্জামান, অধ্যাপক, বুয়েট : দরকার সুষ্ঠু পরিকল্পনা-পদক্ষেপ

প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ৩১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেছেন, মোটরসাইকেল দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক বাহন। প্রায় ৪০ লাখ মানুষ সরাসরি মোটরসাইকেলের ওপর নির্ভরশীল। তাই মোটরসাইকেল বন্ধ করে দিতে পারব না। এ লক্ষ্যে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে। স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। গতকাল শনিবার ভোরের কাগজকে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেন, আমরা মোটরসাইকেলকে উৎসাহ

দিয়েছি এবং সরবরাহ করেছি। এর পাশাপাশি যা করণীয় ছিল তা করিনি। এখন জীবিকার সঙ্গে মোটরসাইকেল সরাসরি সম্পৃক্ত। প্রায় ৪০ লাখ মানুষ সরাসরি এই বাহনের ওপর নির্ভরশীল। মোটরসাইকেল এখন যে কোনো চার চাকার যানের চেয়ে ১৭ গুণ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তবে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। আমাদের গবেষণা বলছে, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় যারা নিহত হচ্ছেন তাদের ৯৩ শতাংশ মূল শহরের বাসিন্দা না। শহরকেন্দ্রিক মাত্র ৭ শতাংশ। শহরের বাইরে যেসব মোটরসাইকেল চলে তাদের প্রায় ৫ থেকে ১০ লাখের কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই। রেজিস্ট্রেশন না থাকায় চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক। তাই ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন বন্ধ করে দেয়া আমাদের পলিসি হওয়া উচিত। এটা করার সঙ্গে সঙ্গে দুর্ঘটনার চিত্র পাল্টে যাবে। এটি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ‘এন্টিবায়েটিকের’ মতো কাজ করবে।
তিনি বলেন, মহাসড়কে মোটরসাইকেল চালাতে বয়স ন্যূনতম ২৫ বছর নির্ধারণ করতে হবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই নিয়ম রয়েছে। বয়স বাড়লে অভিজ্ঞতা বাড়ে। পারিবারিক, সামাজিক পিছুটান থাকে, দায়িত্ব থাকে। তখন সহজেই একজন মানুষের ঝুঁকি নেয়ার প্রবণতা কমে যায়। গত ঈদের দুর্ঘটনায় ৫২ শতাংশই ঘটেছে উঠতি বয়সের তরুণদের দ্বারা। তাদের বেশির ভাগেরই ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না। হেলমেট, এলবো ও নি-গার্ড ব্যবহার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। তাই বিএসটিআইকে মানসম্মত হেলমেট নিশ্চিত করতে হেলমেট টেস্টিং ল্যাব স্থাপন করতে হবে। নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহারের বিষয়টি একই সঙ্গে সড়কে পুলিশ কঠোরভাবে মনিটরিং ও নিশ্চিত করলে দুর্ঘটনায় নিহতের ঝুঁকি কমপক্ষে ৪০ শতাংশ এবং মারাত্মক আহতের ঝুঁকি ৭০ শতাংশ কমবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের মোটরসাইকেলের ‘রেজিস্ট্রেশন প্রসেস সেøা ডাউন’ করতে হবে। বিআরটিএ যে হারে রেজিস্ট্রেশন দিচ্ছে সেই একই হারে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার সক্ষমতা নাই। এর ফলে রেজিস্ট্রেশন বেশি দেয়া হলে লাইসেন্সবিহীন চালকের সংখ্যা বাড়বে এবং দুর্ঘটনাও বেশি ঘটবে। ভূতুড়ে চালকের সংখ্যা বাড়বে। এতে সড়কে দুর্ঘটনা কমবে না। যেসব চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স নাই, সড়কে সেই চালকই বেশি বেপরোয়া।
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, মোটরসাইকেলের ঝুঁকি কমাতে সড়ক ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে হবে। মহাসড়কের দুই পাশে দ্রুত সার্ভিস রোড চালু করতে হবে। এতে মহাসড়ক ঝুঁকিমুক্ত হবে এবং থ্রি-হুইলার সরে যাবে। আনফিট যানবাহন সরিয়ে নিতে হবে। আমাদের পরিকল্পনা ও পলিসিতে ঘাটতি থাকায় এই সমস্যাগুলোর সৃষ্টি হয়। মার্কেটে বিক্রেতা যেন চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স না দেখে কোনো মোটরসাইকেল বিক্রি না করে সেটিও কঠোরভাবে নজরদারি করতে হবে। মোটরসাইকেল বিক্রি ও রেজিস্ট্রেশনের সময় এই দুটি বিষয় কঠোর হতে হবে। শিক্ষানবিশ লাইসেন্স থাকা মানে এই নয় যে, আপনি মোটরসাইকেল চালানোর লাইসেন্স পেয়ে যাবেন। সরকারকে এই পলিসি নিতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়