মুম্বাইয়ে ভবনধসে নিহত ১৯

আগের সংবাদ

বানভাসিদের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই

পরের সংবাদ

৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষিত : সমুদ্রে চলছে জেলেদের মাছ ধরার মহোৎসব

প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : বঙ্গোপসাগরে ২১ মে থেকে চলছে মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। এ নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সমুদ্রে চলছে জেলেদের মাছ শিকারের মহোৎসব। নৌপুলিশ, কোস্ট গার্ড, থানা পুলিশ ও মৎস্য কর্মকর্তাদের সামনেই মাছ ধরা, বিক্রি এবং বাজারজাত করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। জেলেদের আহরিত এসব মাছ খোলা বাজারে বিক্রি, বাজারজাত, পরিবহন করা হচ্ছে প্রকাশ্যেই। সমুদ্রে জেলেদের অবাধ বিচরণ চললেও মৎস্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নীরবতায় জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
মৎস্য রক্ষায় সরকারের নির্দেশনাকে অমান্য করে জেলেদের অবরোধকালীন মাছ শিকারে সহায়তা করার অভিযোগ উঠেছে খোদ মৎস্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। নৌপুলিশ ও কোস্ট গার্ডের বিরুদ্ধেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। মাঝেমধ্যে অভিযানের নামে চলছে নাটকীয়তা এমনটাই অভিযোগ উপকূলবাসীর। কুয়াকাটা, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আলীপুর-মহিপুর, পাথরঘাটা, ফকিরহাট, আশাখালী, রাঙ্গাবালী, মৌডুবী, চর মোন্তাজ, ভোলার চর সম্রাটসহ উপকূলীয় এলাকার একই চিত্র দেখা গেছে। অবরোধে সমুদ্রে মাছ শিকারের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রশাসন দুষছে মৎস্য কর্মকর্তাদের আর মৎস্য কর্মকর্তারা দুষছেন প্রশাসনকে।
সরজমিন দেখা গেছে, আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে আড়ত ঘাটে ইলিশ, তপসী, পোয়া, লইট্যা, ডাডিসহ সামুদ্রিক মাছের স্তূপ। আহরিত মাছের চলছে বাছাই প্রক্রিয়া। যথারীতি হাঁকডাকে ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে মাছগুলো। অধিক দরদাতা চালানি কারবারিরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ওই সব মাছ প্রেরণে প্রক্রিয়াজাতকরণসহ পরিবহনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নিয়ম মাফিক রাজস্ব আদায়ের কাজ করছেন আলীপুর মৎস্য আবতরণ কেন্দ্রর আদায়কারী কর্মকর্তারা। দেশের সমুদ্র সীমানায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞাকালীন সমুদ্রে মাছ শিকার, সংরক্ষণ ও বিপণন সব কিছুই চলছে প্রকাশ্যে দিবালোকে। একই অবস্থা সরকারি দুটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রসহ কুয়াকাটা পৌর মার্কেট, ধুলাসার, বাবলাতলা, বালিয়াতলী, চরচাপলী, আশাখালী ও গঙ্গামতি এলাকার সামুদ্রিক মাছের আড়ত ঘাটে। নিষেধাজ্ঞা পালনকারী জেলেরা জানিয়েছেন, দেখভালের দায়িত্ব থাকা জেলা, উপজেলাসহ স্থানীয় প্রশাসনের গোপন সখ্যে এসবের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। জেলে রুহুল মাঝি, ওয়াজেদ ঘরামী ও দেলোয়ার মোল্লা জানিয়েছেন, সমুদ্রে মাছ শিকার কাগজ-কলমে চলছে। বাস্তব চিত্র ভিন্ন।
৬৫ দিনের এ দীর্ঘ সময়ে সমুদ্রে মাছ শিকারে না যাওয়ার জন্য জেলেরা সরকারি সহয়তা আওতায় রয়েছেন। বাস্তবে কিছু প্রভাবশালী ফিশিং ট্রলার মালিকরা জেলেদের সমুদ্রে মাছ শিকারে যেতে বাধ্য করছেন। এর মধ্যে কুয়াকাটা নৌপুলিশ ও মহিপুর থানা পুলিশ কয়েক দফা রুটিন মাফিক লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে জেলেদের আটকসহ আর্থিক জরিমানা করে ছেড়ে দেয়। জনবল ও নৌযানের স্বল্পতার অজুহাত ছাড়া কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা, নিজামপুর কোস্ট গার্ড, কুয়াকাটা নৌপুলিশসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা না থাকায় সরকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রসহ সামুদ্রিক মাছের আড়ত ঘাটে দেদার বিকিকিনি হচ্ছে ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ। অভিযোগ রয়েছে, কুয়াকাটা পৌরসভার মৎস্য আড়তদাররা কুয়াকাটা সৈকতে নিষেধাজ্ঞাকালীন অন্তত ৫ শতাধিক নৌকার দেড় হাজার জেলেকে সমুদ্রে মাছ ধরতে পাঠিয়েছে। এজন্য প্রতিটি নৌকাকে গুনতে হয়েছে ১০ হাজার টাকা। অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, মহিপুর-আলীপুর পেতাশ্রয় থেকে প্রায় দেড় শতাধিক ট্রলার গভীর সমুদ্রে ইলিশ শিকারে রয়েছে। এমনকি আহরিত মাছ সংরক্ষণ, মজুদ ও বাজারজাত করণে বরফ উৎপাদের মিলগুলোর মধ্যে কিছু কিছু সচল রাখা হয়েছে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সমুদ্রে নাটকীয় অভিযানের নেপথ্যে থাকা কুয়াকাটা নৌপুলিশ ফাঁড়ির এএসআই কামরুল ইসলাম মৎস্য কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে বলেন। অভিযোগ রয়েছে কুয়াকাটা নৌপুলিশ ফাঁড়ির সামনেই সমুদ্রে জেলেরা দেদার মাছ শিকার করছে। অভিযানের সময় কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে অভিযান না চালিয়ে অভিযান চালানো হয় রাঙ্গাবালী উপকূলীয় সমুদ্রে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানান, কুয়াকাটা ও আলীপুর-মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মাছ ধরা ট্রলার মালিক এবং আড়তদারদের সঙ্গে সখ্য থাকায় এসব জেলেকে ধরছে না নৌপুলিশ কিংবা কোস্ট গার্ড।
কলাপাড়া উপজেলা ফিশিং ট্রলার মাঝি সমিতির সভাপতি নুরু মাঝি বলেন, আড়তগুলোতে যেসব মাছ বিক্রি হচ্ছে সবই সমুদ্রের মাছ, যা নদীর মাছ বলে চালিয়ে নিচ্ছেন আড়তদার, প্রশাসন এবং মৎস্য কর্মকর্তারা।
আলীপুর-মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক শাকিল আহম্মেদ বলেন, ভৌগোলিক আবস্থানের কারণে জেলেদের আহরিত মাছ চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। কোনটি সমুদ্রের এবং কোনটি নদীর। তবে জেলেসহ দাদন ব্যবসায়ীরা নদীর মাছ বলেই বিএফডিসি পাইকারি বাজারে বিক্রি করছেন।
কলাপাড়া উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, নিষেধাজ্ঞাকালীন সমুদ্রে মাছ ধরায় পৃথক অভিযানে অসাধু জেলেদের কারাদণ্ডসহ আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে। অভিযান চলমান রয়েছে এবং অব্যাহত থাকবে এমন দাবিও করেন ওই মৎস্য কর্মকর্তা। মৎস্য কর্মকর্তার এমন দায়সারা বক্তব্যই বলে দেয় সমুদ্রে জেলেদের অবাধ বিচরণের কথা। সামুদ্রিক প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করা ওয়ার্ল্ড ফিশের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইকো ফিশ-২ প্রকল্পের সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি জানিয়েছেন, প্রশাসনের সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে সমুদ্রে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা পালন হচ্ছে না। বরফকলগুলো সচল রাখায় সামুদ্রিক মাছ সংরক্ষণ ও বিপণনে সহায়তা করা হচ্ছে। পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজাহারুল ইসলাম বলেন, নতুন যোগাদান করেছি। নিষোধাজ্ঞা কার্যকর করতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করার কথা উল্লেখ করেন ওই কর্মকর্তা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়