কাগজ প্রতিবেদক : বহুল আলোচিত পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ চুক্তি নিয়ে দুর্নীতির মিথ্যা গল্প সৃষ্টির নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে ইনকোয়ারি অ্যাক্ট ১৯৬৫ (৩ ধারা) অনুসারে একটি কমিশন গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে কমিশন গঠন করে দুই মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, দুদকের চেয়ারম্যান ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আন্না খানম কলী। আর দুদকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। এছাড়া সেতু কর্তৃপক্ষের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক এডভোকেট আব্দুন নুর দুলাল।
এর আগে গত সোমবার পদ্মা সেতু নির্মাণ চুক্তি নিয়ে দুর্নীতির মিথ্যা গল্প সৃষ্টির নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে কমিশন গঠন প্রশ্নে জারি করা রুলের ওপর শুনানিতে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ বলেন, পদ্মা সেতু একটি জাতীয় সম্পদ এবং আমাদের গর্বের বিষয়। যদি কোনো চক্রান্ত না থাকত, তাহলে কেন পদ্মা সেতু নির্মাণের অর্থায়ন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল? যারা পদ্মা সেতু এবং জাতীয় স্বার্থ উন্নয়নের বিরুদ্ধে, তারা দেশ ও জাতির শত্রæ। তাদের খুঁজে বের করা দরকার।
প্রসঙ্গত, একটি জাতীয় পত্রিকায় ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘ইউনূসের বিচার দাবি : আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলগুলো একাট্টা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি ওই প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের বিষয় উল্লেখ করে এ রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সে সময় পদ্মা সেতুর দুর্নীতি নিয়ে মিথ্যা গল্প সৃষ্টিকারী কে?
ৎতা জানতে চেয়ে এবং প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করার জন্য ‘ইনকোয়ারি অ্যাক্ট ১৯৬৫ (৩ ধারা)’ অনুসারে কমিশন গঠন এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাদের কেন বিচারের মুখোমুখি করা হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছিল রুলে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন ও যোগাযোগ সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, যোগাযোগ সচিব ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল। এছাড়া এ কমিটি বা কমিশন গঠনের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সে বিষয়ে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবকে নির্দেশ দেয়া হয়। পরে ওই বছরের ২০ মার্চ রুলের জবাব ও প্রতিবেদন দিতে আট সপ্তাহের সময় চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ৭ মে পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে দেন হাইকোর্ট। পরে কয়েক দফা সময়ের আবেদন জানায় রাষ্ট্রপক্ষ। এর মধ্যে কমিশন গঠনের জন্য ২০১৭ সালের ৯ নভেম্বর পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক (কারিগরি) মো. কামরুজ্জামানের নাম মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রস্তাব করা হয়েছে বলে হাইকোর্টকে জানায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। এরপর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ পুনর্গঠন হওয়ায় রুলটি আর শুনানিতে ওঠেনি।
উল্লেখ্য, গত শনিবার মাওয়া প্রান্তে নামফলক উন্মোচনের মাধ্যমে দেশের দীর্ঘতম পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।