বিশেষ অধিকার ক্ষুণ্ন : এমপি হারুনের নোটিস নাকচ করলেন স্পিকার

আগের সংবাদ

ঢাকার তৃণমূলে আ.লীগের পদ পেলেন ৫৪ হাজার কর্মী : থানা-ওয়ার্ডে পদ পাচ্ছেন আরো সাড়ে ১২ হাজার > সংগঠন গোছাতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন নগর নেতারা

পরের সংবাদ

শিক্ষকের গলায় জুতার মালা : নিন্দা প্রতিবাদ > নড়াইলে কলেজ শিক্ষককে হেনস্তার মামলায় গ্রেপ্তার ৩

প্রকাশিত: জুন ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শুভ সরকার, নড়াইল থেকে : নড়াইলে পুলিশের উপস্থিতিতে কলেজ শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরানোর ঘটনার ৯ দিনের মাথায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে মামলা দায়েরের পর তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নড়াইলের পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় ও নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শওকত কবীর জানান, গত সোমবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে ওই দিন দুপুরে মির্জাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই শেখ মোরছালিন বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় ১৭০-১৮০ জনকে আসামি করে নড়াইল সদর থানায় মামলা করেন। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মির্জাপুর বাজারের মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী শাওন খান, অটোরিকশা চালক সৈয়দ মো. রিমন ও মির্জাপুর হাজিবাড়ী দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মনিরুল ইসলাম।
গত ১৭ জুন মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের এক ছাত্র ভারতের বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার বিতর্কিত এক বক্তব্য নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে পরদিন কলেজ ক্যাম্পাসে দিনভর বিক্ষোভ ও সহিংসতা চলে। চারপাশে গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় যে ওই ছাত্রের পক্ষ নিয়েছেন কলেজটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস। এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিলে শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাস পুলিশে খবর দেন। পুলিশ গেলে স্থানীয়দের সঙ্গে তাদেরও সংঘর্ষ বাধে। এরপর বিকাল ৪টার দিকে পুলিশ পাহারায় ক্যাম্পাস থেকে বের করার সময়

একদল ব্যক্তি স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয়। তখন স্বপন কুমার বিশ্বাস উপরে হাত উঁচু করে ক্ষমা চাইতে থাকেন। পরে পুলিশের ভ্যানে তুলে নেয়া হয় তাকে। মোবাইল ফোনে ধারণ করা ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, যাতে পুলিশের উপস্থিতিও দেখা যায়। পুলিশের সামনে শিক্ষককে জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা করায় সারাদেশে এর তীব্র নিন্দা জানানো হয়। তবে পুলিশের দাবি শিক্ষককে জুতার মালা পারানোর ঘটনা তারা দেখেনি।
নূপুর শর্মাকে সমর্থন করে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার ঘটনায় শিক্ষার্থী রাহুল দেবের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে এবং তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তবে এই ঘটনার সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও কলেজে সহিংসতা ও শিক্ষক হেনস্তার ঘটনায় মামলা বা জড়িতদের চিহ্নিত করার ব্যাপারে পুলিশের ছিল না তেমন কোনো তৎপরতা। এরই মধ্যে স্বপন কুমার বিশ্বাসকে অধ্যক্ষ পদ থেকে সরিয়ে ফেলার তোড়জোড় শুরু করে কলেজ কমিটি। বিষয়টি নিয়ে দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এ ঘটনায় সারাদেশে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে ঘটনাটি তদন্তে শিক্ষা দপ্তর একটি কমিটি করেছে। তদন্ত কমিটির সদস্যরা সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনও করেছেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) মহাপরিচালক নেহাল আহমেদ গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে তার চলতি দায়িত্ব থেকে ইচ্ছা করলেও কেউ সরাতে পারবে না।
স্বপন কুমার বিশ্বাসের নিরাপত্তার বিয়ষে জানতে চাইলে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শওকত কবীর ভোরের কাগজকে জানান, ঘটনার দিন থেকে ওই এলাকায় পুলিশের ক্যাম্প বসানো হয়েছে। এলাকা যাতে শান্ত থাকে সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।

শিক্ষক হেনস্তা ও হত্যার বিচার দাবিতে প্রতিবাদ-সমাবেশ :
ঢাবি প্রতিনিধি : নড়াইলে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরানো ও সাভারে শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে পিটিয়ে হত্যায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার ?দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন অংশ নেয়।
সমাবেশে বক্তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষক হেনস্তায় জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান। এ সময় জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মিহির লাল সাহা বলেন, আমি শিক্ষক হিসেবে এখানে বক্তব্য দিচ্ছি, আমি জানি না আমি কতটুকু নিরাপদ। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েও নিরাপত্তার কথা চিন্তা করছি। কারণ আমি সনাতন ধর্মাবলম্বী। সনাতন ধর্মের প্রত্যেকটি শিক্ষক আজ এ রকম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সাম্প্রদায়িকতাকে যদি শেকড় থেকে তুলে না আনা যায়, তাহলে এই সমসার সমাধান হবে না। এই বাংলাদেশ হয় পাকিস্তান হবে, নয় আফগানিস্তান হবে।
সমাবেশে জগন্নাথ হল ছাত্রলীগের সভাপতি কাজল দাস বলেন, যে প্রজন্ম শিক্ষককে জুতার মালা গলায় পরায়, যে প্রজন্ম শিক্ষককে স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলতে পারে, সেই প্রজন্মের লাগাম এখনই টেনে ধরতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়