কাগজ প্রতিবেদক : পুলিশের উপস্থিতিতে নড়াইলে কলেজ শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরানোর ঘটনায় রিট আবেদন নিয়ে আসতে বলেছেন হাইকোর্ট। ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পুলিশের উপস্থিতিতে শিক্ষকের গলায় জুতার মালা বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনা হয়। তখন আদালত রিট আবেদন করার পরামর্শ দেন।
আদালতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আনেন আইনজীবী পূর্ণিমা জাহান। তখন হাইকোর্ট বলেন, আপনারা রিট আবেদন নিয়ে আসুন। আমরা শুনব। এডভোকেট পূর্ণিমা জাহান ভোরের কাগজকে বলেন, এই বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন হাইকোর্টের নজরে আনা হয়। পরে হাইকোর্ট রিট আবেদন করতে বলেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে আমরা রিট আবেদন দায়ের করব।
জানা যায়, ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মাকে প্রণাম জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ১৭ জুন একটি ছবি পোস্ট করেন নড়াইল মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ছাত্র রাহুল দেব। এতে ক্যাপশন লেখেন- ‘প্রণাম নিও বস নূপুর শর্মা, জয় শ্রী রাম’। পরের দিন সকালে তাকে কলেজে দেখে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তা নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশের সহায়তা চান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস। কলেজে পুলিশ এসে রাহুলকে নিয়ে যেতে চাইলে ছাত্ররা বাধা দেন। এরপর অতিরিক্ত পুলিশ আসে। স্থানীয় লোকজনের সংখ্যাও বাড়ে। সেই সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। বিকালে পুলিশের সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষ হয়। পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনে। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের আশ্বাসেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। এ সময় উত্তেজিত জনতার চাপে পড়ে পুলিশের উপস্থিতিতে জুতার মালা পরিয়ে রাহুল ও অধ্যক্ষকে পুলিশে হেফাজতে নিয়ে আসা হয়।
১৯ জুন নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি কলেজে গিয়ে শান্তি সভা করেন। সভায় কলেজের জিবির সভাপতি অচিন কুমার চক্রবর্তী অনাকাক্সিক্ষত এই ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করে সবাইকে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থানে থাকার অনুরোধ জানান। সেই সঙ্গে কলেজের শিক্ষকদের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা ও পোড়ানো, শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করা ও মারপিটের ঘটনায় কোনো মামলা করবেন না বলে জানান।
শিক্ষককে পুলিশের উপস্থিতিতে জুতা পরানোর ঘটনার ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। পুলিশের উপস্থিতিতে এ ধরনের মৌলবাদী কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানাতে দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।