বিশেষ অধিকার ক্ষুণ্ন : এমপি হারুনের নোটিস নাকচ করলেন স্পিকার

আগের সংবাদ

ঢাকার তৃণমূলে আ.লীগের পদ পেলেন ৫৪ হাজার কর্মী : থানা-ওয়ার্ডে পদ পাচ্ছেন আরো সাড়ে ১২ হাজার > সংগঠন গোছাতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন নগর নেতারা

পরের সংবাদ

মহাসড়কে শতাধিক পরিবারের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস : হবিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, শিশুখাদ্য সংকট

প্রকাশিত: জুন ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : হবিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। কোনো কোনো আশ্রয় কেন্দ্রে বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি উদ্যোগে সহায়তা দেয়া হলেও শিশুখাদ্য সংকট রয়েছে। এদিকে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ঘরবাড়ি প্লাবিত হওয়ায় এখনো ঘরছাড়া হাজারো মানুষ। কেউ আশ্রয় কেন্দ্রে কেউ-বা উঁচু স্থানে জীবন বাঁচাতে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে আবার আশ্রয় কেন্দ্রে জায়গা না পেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঠাঁই নিয়েছেন মহাসড়কে। অপরদিকে গত ১০ দিনে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলায় মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। এ ব্যাপারে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
হবিগঞ্জ : জেলায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। ২৭ জুনের সরকারি হিসাবে ৩৫০টি আশ্রয় কেন্দ্রে ২১ হাজার ৬৬ জন মানুষ গিয়ে অবস্থান নিয়েছেন। আরো কয়েক লাখ মানুষ গেছেন উঁচু জায়গায় স্বজনদের বাড়িতে। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বন্যার পানিতে ১৬ হাজার ৩৬৩ হেক্টর আউশ, ১৪ হাজার ৬৬০ হেক্টর বোনা আমন, ১ হাজার ৯১৫ হেক্টর শাকসবজি এবং অন্যান্য ফসল ৫০ হেক্টর বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোনো কোনো আশ্রয় কেন্দ্রে বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ ও নগদ টাকা দেয়া হলেও শিশুখাদ্য সংকট রয়েছে। শিশু ও শিশুদের মায়েরা সেখানে পুষ্টি সমস্যায় ভুগছেন।
বানিয়াচঙ্গ উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জু কুমার দাস জানান, প্রয়োজনের তুলনায় ত্রাণের চালের বরাদ্দ একেবারেই অপ্রতুল। এছাড়া একেকটি কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় চালের ব্যাগ আছে ২০টি কিন্তু পরিবার ৪০টি, সে ক্ষেত্রে দুজনকে একটি দেয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। তিনি বলেন, যদিও এটি আইনবহির্ভূত তবুও নিরুপায় হয়েই আমাদের এভাবে বণ্টন করে দিতে হচ্ছে।
আরেক ইউপি মেম্বার রাজু চন্দ্র দাশ জানান, কয়বার তার ইউনিয়নে ত্রাণের চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা তিনি জানেন না। তবে একবার মাত্র চেয়ারম্যান তাকে ২০ বস্তা চাল বরাদ্দ দিয়েছিলেন। বানিয়চং উপজেলার আড়িয়ামুগুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত পরেশ চন্দ্র দাশ বলেন, ১০ কেজি করে চাল দেয়ার কথা থাকলেও আমাদের ৫ কেজি করে দিচ্ছে। একটি ব্যাগ ২ পরিবারকে দিচ্ছে। বানিয়াচঙ্গ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মলয় কুমার দাস জানান, বানিয়াচং উপজেলায় ১৫টি ইউনিয়নে বণ্টনের জন্য এ পর্যন্ত ১২৫ টন চাল বরাদ্দ এসেছে। দৌলতপুর ইউনিয়নে দেয়া হয়েছে ৬ টন চাল। আরো ৩ টন চাল বরাদ্দ দেয়ার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি বলেন, বরাদ্দকৃত চাল প্রত্যেক পরিবারকে ১০ কেজির নিচে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেউ এমন করে আর সেটি প্রমাণিত হয় তবে ব্যবস্থা তো নেয়াই হবে।
বানিয়াচং উপজেলার বন্যাকবলিত দৌলতপুর ইউনিয়নের গ্রামগুলো সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, হাওরবেষ্টিত এ ইউনিয়নের ১৯টি গ্রামের সবই প্লাবিত হয়েছে। তবে দৌলতপুর, মুরাদপুর, আড়িয়ামুগুর, উমরপুর, করচা ও আলীপুর গ্রামের বন্যার অবস্থা বেশি খারাপ। এছাড়া ৩০টি মেডিকেল টিম কাজ করছে বলে সরকারি সূত্রে জানানো হলেও মাঠে তারা নেই বলে আশ্রয় প্রার্থীদের অভিযোগ রয়েছে। এদিকে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ব্যাপক ত্রাণ তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
শান্তিগঞ্জ (সুনামগঞ্জ) : শান্তিগঞ্জে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত

হয়েছে পুরো উপজেলা। ঘরবাড়ি প্লাবিত হওয়ায় এখনো ঘরছাড়া হাজারো মানুষ। কেউ আশ্রয় কেন্দ্রে কেউ-বা উঁচু স্থানে জীবন বাঁচাতে যে যেখানে পেরেছেন নিয়েছেন আশ্রয়। অনেকে আবার আশ্রয় কেন্দ্রে জায়গা না পেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন মহাসড়কে। সড়কের উপরে বাঁশের সঙ্গে ত্রিপল বেঁধে ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে মানুষ ও গবাদিপশু একসঙ্গেই বসবাস করছে। যেন মানুষে পশুতে মিলেমিশে একাকার। মহাসড়ক যেন এখন একখণ্ড আশ্রয় কেন্দ্র। একদিকে চলছে দ্রুতগতির যানবাহন অন্যদিকে বন্যার্তদের ঝুপড়ি ঘর এমন অবস্থায় জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন এসব বন্যার্ত পরিবারের মানুষজন। তবে পানি কমতে শুরু করায় অনেকেই ফিরেছেন বাড়িতে।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের আহসানমারা ব্রিজসংলগ্ন মহাসড়কের দুপাশে আশ্রয় নিয়েছে শতাধিক বন্যার্ত পরিবার। ত্রিপল, টিন, বস্তা দিয়ে তৈরি এসব ঘরে চরম নিরাপত্তাহীনতায় বসবাস করছেন তারা। নেই বিদ্যুৎ, নেই নিরাপদ পানি- সব মিলিয়ে দুর্ভোগের শেষ নেই তাদের। কেউ খেয়ে, কেউ না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। রাস্তার দুপাশ দিয়ে অবিরাম চলছে দূরপাল্লার বাস, ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন। পাশাপাশি রাস্তার দুপাশে সমানতালে হাঁটা-চলা করছেন বন্যার্তরা। শিশুরাও এদিক-ওদিক ছুটোছুটি করছে। যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। সড়কপথে যাওয়ার সময় সরকারি-বেসরকারি ত্রাণের ট্রাক দেখলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন তারা।
মহাসড়কে ঝুপড়ি ঘরে আশ্রয় নেয়া খাকিয়ারপাড় এলাকার দিলোয়ার বলেন, বাড়িঘর থেকে এখনো বন্যার পানি না কমায় আজ ১০ দিন হয় এখানে আছি। এখানে প্রতিনিয়তই জীবনের ঝুঁকি আছে। ঘরবাড়ি প্লাবিত থাকায় ঝুঁকি জেনেও মহাসড়কের পাশে বসবাস করছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ পেলেও তা খুবই কম। পরিবারের ৯ জন মানুষ নিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করছি আমরা।
শুধু দেলোয়ারই নন- এভাবে ঝুঁকির কথা জানিয়েছেন আরো অনেক বন্যার্ত।
মহাসড়ক কিংবা আশ্রয় কেন্দ্র কোনো জায়গাতেই কেউ না খেয়ে নেই জানিয়ে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক নূর হোসেন বলেন, ভয়াবহ বন্যায় ঘরবাড়ি প্লাবিত হওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্র ও মহাসড়কে আশ্রয় নিয়েছেন বন্যার্ত মানুষ। যারা মহাসড়কে বসবাস করছেন তারা মানবেতর জীবনযাপন করলেও কেউ না খেয়ে নেই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার উজ জামান বলেন, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পুরো শান্তিগঞ্জ উপজেলা। এমন অবস্থায় কোনো মানুষ যাতে না খেয়ে থাকে তার জন্য যথেষ্ট ত্রাণ দেয়া হয়েছে। যারা মহাসড়কে আছেন তাদেরও খাদ্যসামগ্রী দেয়ার পাশাপাশি সতর্ক থাকার কথা বলা হয়েছে এবং যাদের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে তাদের তালিকা করা হয়েছে।

জামালগঞ্জ (সুনামগঞ্জ) : ভারতের মেঘালয়ের কালো পাহাড়ের ঢল। সেই সঙ্গে স্থানীয়ভাবে অবিরাম মুষলধারে বৃষ্টিতে আকস্মিক বন্যায় প্লাবিত হয়েছে সিলেট-সুনামগঞ্জের জনবসতি, বিপর্যস্ত হয় জীবনযাত্রা। ১৬ জুন গভীর রাত থেকে এই ঢলে বাস্তুহারা করেছে লাখ লাখ মানুষকে, ভাসিয়ে নিয়েছে ধান, চাল ও বসতি ঘরের আসবাবপত্রসহ গৃহপালিত পশু। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাস্তাঘাট, কলকারখানাসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন স্থাপনা। ১৭ জুন থেকে শুরু হওয়া বন্যায় এ পর্যন্ত ১০ দিনে জামালগঞ্জ উপজেলায় মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। উপজেলায় এখনো ৭২টি আশ্রয় কেন্দ্রসহ উঁচু স্থানে ও সড়কের পাশে থাকা এখনো ৭৫ হাজারের বেশি বানভাসি আশ্রয়ে আছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়