টিপু হত্যা মামলা : মুসার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

আগের সংবাদ

ভিটাহীন সংসার, আকাশ মাথায় : বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো পানির নিচে, সিলেট-সুনামগঞ্জে নতুন করে বাড়ছে পানি

পরের সংবাদ

সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি : ক্ষতিগ্রস্ত ঘরে ফিরছেন মানুষ পানিবাহিত রোগের আশঙ্কা

প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : নদনদীর পানি কমতে থাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে সারাদেশে। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছেন বানভাসি মানুষ। কিন্তু পানিতে ডুবে থেকে নড়বড়ে হয়ে পড়া ঘরবাড়ি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। পরিবেশ দূষিত হওয়ায় পানিবাহিত রোগ ছড়ানোরও আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকটও তাদের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ সম্পর্কে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট-
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) : ব্রহ্মপুত্র নদে পানি কমতে থাকায় কুড়িগ্রামের চিলমারীতে বন্যার উন্নতি হচ্ছে। বেশির ভাগ বানভাসি মানুষ নিজেদের বাড়িঘরে ফিরছেন। কিন্তু পানিতে ডুবে থাকায় নড়বড়ে হয়ে পড়া ঘরবাড়ি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। পরিবেশ দূষিত হওয়ায় পানিবাহিত রোগ ছড়ানোরও আশঙ্কা আছে। এছাড়া বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যের সংকটও তাদের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
সরজমিন বন্যাদুর্গত উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি থাকার পর এখন কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে মানুষের জীবনযাত্রা। গত কয়েক দিন বৃষ্টি না হওয়ায় বন্যার পানি বাড়িঘর থেকে নেমে গেছে। সড়কগুলোও জেগে উঠেছে। তবে উপজেলার অনেক নিচু এলাকা এখনো পানিতে তলিয়ে আছে। রয়েছে ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ।
রমনা মডেল ইউনিয়নের জোড়গাছ পুরান বাজার বাঁধ এলাকার লাল মিয়া (৬০) ও তালেব মিয়া (৫৫) বলেন, পানি নেমে গেছে ঠিকই কিন্তু দুর্ভোগ এখনো কমেনি। ঘরের বেড়ার মাটি ধসে গেছে, খুঁটি নড়বড়ে হয়ে গেছে। কোনো মতে ঠিক করতে গেলেও অনেক টাকার দরকার। আমাদের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। একই কথা বললেন, চিলমারী ইউনিয়নের কড়াই বরিশাল এলাকার মোস্তফা (৪৫) ও হোসেন আলী (৫৫)।
এদিকে পরিবেশ দূষিত হওয়ায় পানিবাহিত রোগ ছড়ানোরও আশঙ্কা করছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমাদের সচেতন থাকতে হবে, সচেতনতাও বাড়াতে হবে। আমাদের ৮টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। এখন পর্যন্ত সেভাবে পানিবাহিত রোগ ছড়ায়নি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, আমাদের ত্রাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করা হচ্ছে। অর্থ বরাদ্দ পেলে তালিকা অনুযায়ী সহায়তা করা হবে।
তাহিরপুর, (সুনামগঞ্জ) : হাওরবেষ্টিত ভাটির জনপদ সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হচ্ছে। তবে বাড়িঘরে পানি থাকায় এখনো অনেক মানুষ রয়েছেন আশ্রয় কেন্দ্রেই। বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বানভাসিদের মধ্যে দেখা দিয়েছে পানিবাহিত নানা রোগবালাই। এর মধ্যে ডায়রিয়া, পেটের পীড়া ও চর্মরোগই বেশি।
গত ৫ দিন সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সুনামগঞ্জ শহরের কিছু কিছু পরিবার বাড়িঘরে ফিরতে পারলেও হাওরবেষ্টিত গ্রামগুলোর অনেক পরিবার এখনো বাড়িঘরে যেতে পারছে না। এদিকে এখনো জেলার তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, ধরমপাশা, জগন্নাথপুর, জামালগঞ্জ, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় পানিবন্দি রয়েছেন অনেক মানুষ। এসব উপজেলার নিচু এলাকায়

বাড়িঘর ও রাস্তাঘাটে বানের পানি রয়ে গেছে। জেলা, উপজেলার প্রধান সড়কগুলো থেকে পানি নামলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামীণ সড়ক এখনো পানিতে তলিয়ে আছে। পানি নামার পর নানা রোগবালাই দেখা দিচ্ছে বানভাসিদের মধ্যে।
সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আহম্মদ হোসেন জানান, পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে জেলা সদরসহ সবকটি উপজেলাতেই পানিবাহিত নানা রোগবালাই দেখা দিয়েছে। তবে এতে ভয়ের কোনো কারণ নেই। জেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ রয়েছে। সেই সঙ্গে প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে বানভাসিদের চিকিৎসাসেবায় যেন কোনো ধরনের ত্রæটি না হয়। সেজন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, জেলায় ৬২০টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। পানি কমতে শুরু করায় অনেকেই বাড়িঘরে ফিরে গেছেন। এখনো ৩০০ আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ৫০ হাজারের মতো মানুষ রয়েছেন। সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত বন্যায় সুনামগঞ্জে ৯০ হাজার পরিবারের সাড়ে ৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ১৫ জন।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল জানান, উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা বেশির ভাগ মানুষই বাড়িঘরে ফিরেছেন। এখনো যারা আছেন, তারা শ্রমজীবী মানুষ। অনেকের বাড়িঘর নিচু এলাকায়। আবার কারো কারো ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ফিরতে সমস্যা হচ্ছে।
জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ জানান, জামালগঞ্জে এখনো বহু মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন। মানুষের বাড়িঘরসহ রাস্তাঘাটে এখনো পানি রয়েছে। পানি কমছে খুবই ধীরগতিতে। এতে মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছে পানিবাহিত নানা ধরনের রোগবালাই।
গত এক সপ্তাহ ধরে সুনামগঞ্জে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে না। কোনো কোনো দিন কেবল রাতে হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। এর মধ্যে গত শুক্রবার থেকে রোদ আছে। পাহাড়ি ঢলও নামেনি। এ কারণে জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরো উন্নতি হয়েছে। তবে পানি কমছে ধীরগতিতে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম জানান, সুরমা নদীর পানি এখন বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। আগামী ৭১ ঘণ্টা ভারি বৃষ্টিপাতের কোনো আশঙ্কা নেই। তবে হালকা বৃষ্টিপাত হতে পারে জেলায়।
জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, জেলার দু-তিনটি উপজেলায় এখনো পানি আছে। তবে সব জায়গার পরিস্থিতিই উন্নতির দিকে। ধীরে ধীরে সব কিছু স্বাভাবিক হচ্ছে।
১৬ জুন থেকে সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। জেলার প্রতিটি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। অসংখ্য বাড়িঘর, অফিস-আদালত, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, রাস্তাঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। টানা চার দিন সুনামগঞ্জ ছিল সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন। এ সময় পানি, বিদ্যুৎসহ মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কও বন্ধ ছিল।
শাল্লা (সুনামগঞ্জ) : র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, আমরা সবাই এই ভয়াবহ বন্যায় দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে আছি। প্রধানমন্ত্রীও সিলেট-সুনামগঞ্জে এসেছিলেন। এই ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত মানুষকে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছে সরকার। কেউ ত্রাণ থেকে বঞ্চিত হবেন না। সব জায়গায় ত্রাণ দেয়া হচ্ছে। গতকাল সোমবার উপজেলার হবিবপুর ইউপির আনন্দপুর গ্রামের বাজারসংলগ্ন ফুটবল খেলার মাঠে ত্রাণ বিতরণ শেষে একান্ত সাক্ষৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।
বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করতে বেলা ১১টায় আনন্দপুর গ্রামে খেলার মাঠে হেলিকপ্টারযোগে আসেন তিনি। বন্যার কারণে উপজেলায় আর কোথাও হেলিকপ্টার অবতরণ করার জায়গা না থাকায় ওই মাঠেই তাকে বহন করা হেলিকপ্টারটি অবতরণ করে। ত্রাণ বিতরণকালে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথাও বলেন র‌্যাবের মহাপরিচালক। এ সময় তার ছোট ভাই ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদসহ র‌্যাব, পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে তিনি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাহাড়া ইউপির সুখলাইন, শাল্লা ইউপির শ্রীহাইল ও শাল্লা সদরে ত্রাণ বিতরণ করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়