টিপু হত্যা মামলা : মুসার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

আগের সংবাদ

ভিটাহীন সংসার, আকাশ মাথায় : বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো পানির নিচে, সিলেট-সুনামগঞ্জে নতুন করে বাড়ছে পানি

পরের সংবাদ

করোনা যায়নি, ডেঙ্গুও ছাড়েনি

প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বিপর্যয় পিছু ছাড়ছেই না। যাই-যাই করেও যায়নি মহামারি করোনা। খতরনাক চরিত্রে আবার এর সংক্রমণ। বিরতি দিয়ে আবার প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। আক্রান্ত-শনাক্ত হাজার হাজার। এর মাঝে আবার চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু। বন্যা-জলাবদ্ধতা ডেঙ্গুর বংশ বিস্তারে ভূমিকা রাখে। করোনা ‘গুডবাই’ দিয়েছে- কোথাও থেকে এমন কোনো বার্তা না থাকলেও অনেকের মধ্যে একটা ‘গুডবাই’ ভাবভঙ্গি কিছুদিন থেকে। চিকিৎসক এবং সরকারের তরফে বারবার বলা হয়েছে সতর্ক থাকতে। কিন্তু আহ্বানটি সেভাবে আমল পায়নি। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে গাফিলতি এবং এক ধরনের ডেমকেয়ার ভাব চলে এসেছিল। পরিণতি যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। চলতি মাসের শুরু থেকে হঠাৎ করোনার স্বরূপে উৎপাত। সেই সঙ্গে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরাঞ্চলে ডেঙ্গুর হানা। চলতি বছরের প্রথম দিন থেকে গত ২১-২২ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হাজারের কাছাকাছি। মৃত্যু হয়েছে তাদের একজনের। গত বছরের মতো এবারো আক্রান্তদের বেশিরভাগই ঢাকার। এর বাইরে নতুন স্পট কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। ২০২১ সালে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত করে ২৮ হাজার ৪২৯ জনকে। মৃত্যু হয়েছে ১০৫ জনের।
সচরাচর বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতায় মশার প্রজনন বাড়ে। জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে লার্ভা ছাড়ে এডিস মশা। যে কারণে প্রতি বছর এ সময়ে ডেঙ্গু ব্যাপকতা পায়। এ সময়টায় এদের দমনও করা যায় না। গত দুই বছর করোনার মধ্যে শহরাঞ্চলে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বেড়েছে মহামারির মতো। এবারের লক্ষণ আরো খারাপ। এর মাঝেই করোনার ফিরে আসা। বছরের শুরুর দিকে গত জানুয়ারিতে করোনা সংক্রমণের হার কমে যায়। শূন্যে নেমে আসে মৃত্যুর সংখ্যা। অনেকের মাঝে উৎফুল্ল ভাব চলে আসে। তখনই বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, স্বস্তিতে না ভুগতে। কারণ এই মহামারি একেবারে চলে যায়নি। দমেছে মাত্র। আর সরকারের দিক থেকে বলা হয়েছে, উচ্ছ¡সিত না হয়ে সতর্ক থাকতে। কিন্তু মানুষের মধ্যে সেভাবে আমল পায়নি পরামর্শটি। সেই ভবিষ্যদ্বাণী ও পরামর্শ যে কত সঠিক ছিল, করোনার গত ক’দিনের দাপট তা বুঝিয়ে দিচ্ছে হাড়ে হাড়ে।
বাস্তবতা হচ্ছে, করোনার উপযুক্ত প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। মোকাবিলার ভরসা কেবল টিকা ও স্বাস্থ্যবিধি। বুস্টার ডোজও যেখানে করোনা সংক্রমণ থেকে শতভাগ সুরক্ষা দিতে পারে না, সেখানে প্রথম বা দ্বিতীয় ডোজ নেয়াকে কোনোভাবেই নিরাপদ ভাবা যায় না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক-দুই ডোজ বা বুস্টার ডোজ নিলেই সারা জীবন নিরাপদ থাকার গ্যারান্টি নেই। ভয়ের খবর হচ্ছে, সময়ের ব্যবধানে টিকার কার্যক্ষমতাও কমে যায়। যে কারণে অনেক দেশে বুস্টার ডোজ দেয়ার ৬ মাস পার হওয়ার পর চতুর্থ ডোজ টিকা দেয়া শুরু করেছে। এ রকম সময়েই হৃদকম্পন হওয়ার সংবাদ এসেছে হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের বেথ ইসরায়েল ডিকোনেস মেডিকেল সেন্টারের গবেষণায়। তাদের গবেষণায় বলা হয়েছে, কোভিড টিকার পূর্ণ ডোজে শরীরে তৈরি প্রতিরোধ ক্ষমতাও ভেঙে ফেলতে পারে ওমিক্রনের সাব-ভ্যারিয়েন্ট বিএ-ফোর এবং বিএ-ফাইভ। গত বৃহস্পতিবার নিউ ইংল্যান্ড অব জার্নালে গবেষণাটি প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা গেছে, শুধু কোভিড টিকার সুরক্ষা বলয়ই নয়; করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পর শরীরে তৈরি হওয়া প্রতিরোধ ক্ষমতার বলয় খুব সহজে ভেঙে ফেলে ওমিক্রনের বিএ-ফোর এবং বিএ-ফাইভ সাব-ভ্যারিয়েন্ট। এই দুটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাঙার ক্ষেত্রে বিএ-টু এবং বিএ-থ্রির তুলনায় তিনগুণ বেশি কার্যকর। এর আগে কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষণায়ও এ ধরনের ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড আক্রান্তদের ৩৫ শতাংশই সাব-ভ্যারিয়েন্ট বিএ-ফোর এবং বিএ-ফাইভে সংক্রমিত হয়েছেন। এদিকে গত বুধবার মডার্না দাবি করেছে তাদের উৎপাদিত কোভিড টিকার বুস্টার ডোজ বিএ-ফোর এবং বিএ-ফাইভ সাব-ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কার্যকর। বিশেষজ্ঞ বা চিকিৎসাজ্ঞান না থাকলেও সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানে যে কারোই বোঝার কথা কিছুদিন মৃত্যুর ঘটনা না ঘটালেও, সংক্রমণ কম হলেও করোনা বিদায় নেয়নি। ঝিম মেরেছে বা দম ধরেছে। এটি তার বৈশিষ্ট্য। কেবল বাংলাদেশ নয়, উন্নত বিভিন্ন দেশের শিক্ষিত মানুষের মধ্যেও এই বুঝের ঘাটতি ঘটেছে। তারা কেবল মাস্কই খোলেনি। খুলতে খুলতে আরো অনেক কিছু খুলে দিয়েছে। অথচ সবখানে দেখতে পাচ্ছি সবাই মাস্ক ছাড়া চলাফেরা করছেন। গা ঘেঁষে বসছেন। দূর থেকে কথা বলাও বন্ধ করে দিয়েছেন। হাতে হাত মিলিয়ে মোলাকাত, কুশল বিনিময়। এর অনিবার্য পরিণতি এখন সইতে হচ্ছে সবাইকে। ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জার্মানি, ব্রাজিল, ইরান, তুরস্ক, পোল্যান্ড কেউ বাদ নেই। বাংলাদেশের জন্য নতুন করে করোনা সংক্রমণের এ হালদশায় সব ক্ষেত্রে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা, ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নীতি প্রয়োগসহ ছয় দফা ব্যবস্থা জোরদারের পরামর্শ দিয়েছে সরকারের এ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। জ্বর, সর্দি, কাশিতে ভোগা অনেকে করোনা টেস্ট না করায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না বলে কমিটির মূল্যায়ন। করোনায় অতিসংক্রমিত দেশ থেকে বাংলাদেশে আসা আক্রান্ত ব্যক্তিদের মাধ্যমে এই ভাইরাস ঢুকছে বলে মনে করছে পরামর্শক কমিটি। এজন্য বিমান, স্থল ও নৌবন্দরগুলোতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া ও প্রয়োজনে কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ ও টিকা সনদ আবশ্যক করার তাগিদ দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে সেরের ওপর সোয়া সেরের মতো করোনার মধ্যে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। ডেঙ্গুর বিস্তার রোধ করাকে মূল কাজ হিসেবে নিয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। আগামী ৪ মাসের জন্য সিটি করপোরেশনের ১০টি অঞ্চলেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। উত্তর সিটিতেও কিছু পদক্ষেপ কার্যকর করা হচ্ছে। কিন্তু বিপজ্জনক খবর এসেছে কক্সবাজার থেকে। এত দিন ধারণা ছিল, ডেঙ্গু জ্বর ঢাকা শহরকেন্দ্রিক। কিন্তু কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। চলতি বছর রোহিঙ্গা শিবিরে ১ হাজার ৯৩৯ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এমন অবস্থায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, রোহিঙ্গা শিবিরগুলো এখন ডেঙ্গুর হটস্পট। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে সেখানে কারো মৃত্যু হয়নি। অপরদিকে চলতি বছর রোহিঙ্গা শিবিরে ৩১ জন ম্যালেরিয়া রোগীও শনাক্ত হয়েছে। রোহিঙ্গা শিবিরে কাজ করতে গিয়েও কেউ কেউ ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। অবস্থান ও পরিবেশগত কারণে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে এমনিতেই ঘিঞ্জি পরিবেশ। একেকটি ঘরে ৮-১০ জনের গাদাগাদি বসবাস। এ কারণে একজনের ডেঙ্গু হলে অন্যদেরও আক্রান্তের ঝুঁকি থাকে। পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় সেখানে মশা জন্মে বেশি। রোহিঙ্গাদের মধ্যে সচেতনতারও অভাব। সচেতনতা বাড়াতে প্রচার চালানো জরুরি। ডেঙ্গু টেস্টের পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও দরকার। দেশে ডেঙ্গুর বিস্তার বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা সম্প্রতি আরো বেশি। প্রলম্বিত বর্ষা মৌসুম, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার বেশি প্রজননের বার্তা দিচ্ছে। একদিকে নতুন করে করোনার ব্যাপকতা, আরেকদিকে ডেঙ্গুর উৎপাত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাজের পরিধি বাড়িয়ে দিয়েছি। কীটনাশক দিয়ে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করতে না পারলে এর বিস্তার রোখা যায় না। এবার বন্যা দীর্ঘায়িত হওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। সেই ক্ষেত্রে অক্টোবর পর্যন্ত সময়টা বেশ অ্যালার্মিং।

লেখক : সাংবাদিক, কলাম লেখক; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়