টিপু হত্যা মামলা : মুসার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

আগের সংবাদ

ভিটাহীন সংসার, আকাশ মাথায় : বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো পানির নিচে, সিলেট-সুনামগঞ্জে নতুন করে বাড়ছে পানি

পরের সংবাদ

এবার স্বপন কুমার বিশ্বাস : শিক্ষকদের ধর্ম অবমাননার ফাঁদে ফেলে হেনস্তা আর নয়

প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দেবাশিষ, রসরাজার, হৃদয় মণ্ডলের পর স্বপন কুমার বিশ্বাস শিকার হলেন। ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে শিক্ষক অবমাননা ও নির্যাতনের ঘটনা দুঃখজনক। জানা গেছে, হযরত মুহাম্মদ (সা.)কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য সমালোচনায় থাকা ভারতের বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার ছবি দিয়ে ফেসবুকে নড়াইলের এক কলেজছাত্র একটি পোস্ট দেয়। ওই পোস্টকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত। সে সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের শিক্ষার্থী। গত ১৭ জুন পোস্টটি দেয়ার পরদিন ওই ছাত্র কলেজে গেলে কিছু মুসলমান শিক্ষার্থী তাকে পোস্ট মুছে ফেলার জন্য বলে। এরই মধ্যে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস ওই ছাত্রের পক্ষ নিয়েছেন এমন কথা রটানো হয়। এই কথাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা দেখা দেয় এলাকায়। স্থানীয়দের একটি পক্ষ অধ্যক্ষ ও দুজন শিক্ষকের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে স্থানীয়দের সঙ্গে তাদেরও সংঘর্ষ হয়। ওই সময় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ছাত্র ও স্থানীয়রা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরিয়ে তাকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করে। ঘটনার কিছু ছবি এবং ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সেসব ছবি ও ভিডিওতে ঘটনাস্থলে পুলিশের উপস্থিতিও দেখা যায়। এ ঘটনার ছবি ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। পুলিশের উপস্থিতিতে কীভাবে একজন শিক্ষককে এভাবে অসম্মান করা হলো, উঠেছে সেই প্রশ্নও। আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একদল শিক্ষার্থী কর্তৃক, বিশেষ করে অমুসলিম ও মুক্তমনা শিক্ষকদের ধর্ম অবমাননার ফাঁদে ফেলে হেনস্তা করার একটা প্যাটার্ন গড়ে উঠেছে; অথচ সরকারের দিক থেকে এর প্রতিকারমূলক কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। আমরা বলি আমাদের দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। কিন্তু ইদানীংকালে অসহিষ্ণুতা ও অধৈর্যের যে প্রকাশ প্রায়ই দেখা যাচ্ছে, তা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। আমরা লক্ষ করছি, ইসলামের অবমাননা করা হয়েছে- এই জিকির তুলে স্বার্থান্ধ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী মাঝে মাঝেই ধর্মপ্রাণ নিরীহ মানুষকে এমনভাবে উত্তেজিত করছে যে, তারাও হয়ে পড়ছে উন্মত্ত। সত্যি সত্যি ধর্মের অবমাননা হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে না অথবা হলেও প্রকৃত অপরাধীর পরিবর্তে টার্গেট হয়ে পড়ছে সামগ্রিকভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। এ প্রবণতা বিপজ্জনক। ফেসবুকের পোস্টকে কেন্দ্র করে প্রায়ই উত্তেজনাকর পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। সংখ্যালঘু মানুষের ওপর এ রকম আক্রমণ জাতীয় সংহতির ওপর বিরাট আঘাত। এ হামলার ফলে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আরো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে না পারলে বাংলাদেশে মিলেমিশে বসবাসের যে সংস্কৃতি তা বাধাগ্রস্ত হবে এবং মানুষের জীবনযাপনের স্বাভাবিকতা হারাবে। অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের ঘটনা তদন্ত করে দেখা দরকার। যারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত তাদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত। পাশাপাশি তার সপরিবারে নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও জরুরি মনে করছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়