টিপু হত্যা মামলা : মুসার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

আগের সংবাদ

ভিটাহীন সংসার, আকাশ মাথায় : বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো পানির নিচে, সিলেট-সুনামগঞ্জে নতুন করে বাড়ছে পানি

পরের সংবাদ

আনন্দে ভাসছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ : পদ্মা পারাপারে দুর্ঘটনায় বুক খালি হবে না কোনো মায়ের

প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জাহাঙ্গীর আলম, মাদারীপুর থেকে : অবশেষে শেষ হলো পদ্মা পারাপারের সব ভোগান্তি। এতে আনন্দে উদ্বেলিত গোটা দেশের মানুষের সঙ্গে শামিল হয়েছেন বিগত দিনে নৌদুর্ঘটনায় নিহতদের স্বজনরাও। আবেগাপ্লুত স্বজন হারানোদের একটাই সান্ত¡না- পদ্মা পারাপারে আর দুর্ঘটনার শিকার হতে হবে না। বুক খালি হবে না কোনো মায়ের।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে দক্ষিণাঞ্চলের নদী পাড়ের মানুষ আনন্দে ভাসছেন। অন্যদিকে বিগত দিনে পদ্মায় নৌদুর্ঘটনায় নিহতদের স্বজনরা প্রিয়জন হারোনোর বেদনায় ভেঙে পড়েন। সেই দিনের স্মৃতি মনে করতে গিয়ে এখনো আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তারা বলছেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু ঠিকই নির্মিত হলো, কিন্তু আমাদের স্বজনদের আর ফিরে পাব না। তারপরও সান্ত¡না পদ্মায় নৌদুর্ঘটনায় কোনো মায়ের বুক আর খালি হবে না।
২০১৪ সালের ৪ আগস্ট স্মরণকালের ভয়াবহ নৌদুর্ঘটনায় আড়াই শতাধিক যাত্রী নিয়ে পদ্মায় ডুবে যায় পিনাক-৬ নামের একটি লঞ্চ। সরকারি হিসাবে ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজ থাকেন ৬৪ জন। উদ্ধার হওয়া লাশের মধ্যে ২১ জনকে মাদারীপুরের শিবচর পৌর কবরস্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। গত ৮ বছরেও তাদের কারো পরিচয় চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। হদিস পাওয়া যায়নি দুর্ঘটনার শিকার পিনাক-৬ লঞ্চটিরও।
আর ২০২১ সালের ৩ মে কাঁঠালবাড়ীর বাংলাবাজার পুরনো ঘাটে পদ্মা নদীতে যাত্রীবোঝাই স্পিডবোট বালুবোঝাই একটি বাল্কহেডের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে যায়। এতে তিন শিশুসহ ২৬ জন যাত্রী মারা যান। স্পিডবোটটি দুমড়ে-মুড়চে পানিতে নিমজ্জিত হয়। পরে নদী থেকে একে একে ২৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। একই বছর মাত্র ১০ দিনের মাথায় ১২ মে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটের

পদ্মা নদীতে একটি রোরো ফেরিতে প্রখর রোদের তাপে প্রচণ্ড গরমে ৫ যাত্রী মারা যান। ওই এনায়েতপুরী ফেরিটি এসে ভিড়লে দেখা যায় অর্ধশতাধিক যাত্রী জ্ঞান হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এছাড়া প্রায় বছরই পদ্মায় স্পিডবোট উল্টে বা স্পিডবোটের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণহানি ঘটত।
এভাবে কত যে মায়ের বুক খালি হয়েছে পদ্মা পারাপারের সময়। চরম ভোগান্তির মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই এই রুটের যাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেছেন। স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, পদ্মা পার হতে এ পর্যন্ত কত শত মানুষ যে মারা গেছেন তার কোনো হিসাব নেই। প্রায়ই স্বজনহারা মানুষের কান্নায় নদীর দুপাড় শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়ত। তবে এখন কান্নার দিন শেষ। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় শেষ হলো নদী পারাপারের ভোগান্তি।
মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান জানান, বিভিন্ন উৎসবে নদী পারাপারে জনসাধারণের ভোগান্তির শেষ ছিল না। নৌদুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। সেই সঙ্গে অনেক সম্পদেরও ক্ষতি হয়েছে। এখন নদী পারাপারে সেই আশঙ্কা নেই। গত ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে দখিন জনপদের মানুষের জন্য নতুন দিগন্তের সূচনা হলো।
জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ ও মাদারীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য নূর-ই-আলম চৌধুরী বলেন, পদ্মা পার হতে গিয়ে অনেক মা তার সন্তান হারিয়েছে। কত দুর্ভোগ-দুর্দশার মধ্যে দিয়ে প্রমত্তা পদ্মা পার হতে হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে মানুষের ভোগান্তির শেষ ছিল না। তাইতো প্রধানমন্ত্রী এক বুক সাহস নিয়ে দেশীয় অর্থায়নে জাতিকে পদ্মা সেতু উপহার দিলেন। এতে আর থাকবে না ভোগান্তি। কোনো মাকে আর তার আদরের সন্তান হারাতে হবে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়