টিপু হত্যা মামলা : মুসার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

আগের সংবাদ

ভিটাহীন সংসার, আকাশ মাথায় : বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো পানির নিচে, সিলেট-সুনামগঞ্জে নতুন করে বাড়ছে পানি

পরের সংবাদ

অবৈধ মজুতে নওগাঁয় ধান চালের বাজার অস্থিতিশীল

প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. আব্দুল আজিজ মণ্ডল, ধামইরহাট (নওগাঁ) থেকে : নওগাঁকে বলা হয় ধান-চালের রাজধানী অথচ এখানেই ধান ও চাল নেই। বলা যায় বাজার থেকে ধান-চাল উধাও। নামমাত্র নমুনা নিয়ে বসে আছেন খুচরা চাল ব্যবসায়ীরা। মূলত গোপনে মজুত রাখায় বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না পর্যাপ্ত ধান-চাল। বিশেষ করে টাকা দিয়েও সরু চাল পাওয়া যাচ্ছে না। বাজার দর নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাধারণ মিলার ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে চলছে রশি টানাটানি।
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখতে প্রশাসন অভিযান চালালেও কোনো মজুতদারদের আর্থিক দণ্ড করা হয়নি। অভিযানের সময় চালেল দাম কেজিপ্রতি কিছুটা কমলেও পুনরায় তা বাড়ানো হয়। ধান কাটার শুরুতে ধানের দাম ছিল ৮৫০-৯৫০ টাকা। এখন প্রকারভেদে ধান বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ১ হাজার ৮০ টাকা থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকা ১ হাজার ৬৫০ টাকা। কীটনাশক, পানি ও হাল চাষ এবং শ্রমিকের দাম পরিশোধের জন্য কম দামে আগাম বিক্রি করতে হয়েছে কৃষকদের। এখন কৃষকের ঘরে ধান-চাল নেই।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে- মৌসুমে ইরি ও বোরো ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল- ২৬ হাজার ৮৩৪ টন ও চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৩ হাজার ৯০০ টন। সরকারিভাবে চালের মূল্য ৪০ টাকা প্রতি কেজি, ধানের মূল্য ২৭ টাকা প্রতি কেজি। খোলা বাজারে ধান-চালের মূল্য অধিক হারে বাড়ায় জেলার ১১টি উপজেলায় মাত্র ৮০ টন ধান ক্রয় করা হয়েছে ও চাল ক্রয় করা হয়েছে ৯ হাজার টন।
এ ব্যাপারে ধামইরহাট উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা আতাউর রহমান ভোরের কাগজকে জানান- ধানের দাম বাড়ায় ধান ক্রয় করা সম্ভব হয়নি। ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৪১৪ টন ও চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৮৫ টন। গুদামে ৬ টন চাল ক্রয় করা হয়েছে। ধামইরহাট ২০টি চালের মিল আছে যার কোনোটিতেই চাল উৎপাদন করা হয়নি। বিভিন্ন জেলা, উপজেলা থেকে সরবরাহ করে লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ীরা গুদামে চাল দিচ্ছেন। ধামইরহাটের আড়তদার ও মিল-মালিক সিন্ডিকেট করে ব্যবসা করছেন।
এনতাজ, শফি, হেলাল প্রমুখ চাষির অভিযোগ- টাকা নেই এমন কথা বলে ব্যবসায়ীরা বাকিতে ধান ক্রয় করেন, পরে কৃষকদের কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করেন সারা বছর ধরে। এভাবে কৃষকেরা অবহেলিত। ভর্তুকি নামে শাসকের হাতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন কৃষকরা। ব্যবসায়ীরা জেলা-উপজেলার বাইরে থেকে চাল সংগ্রহ করে প্রতি বছর খাদ্যগুদামে সরবরাহ করেন।
ফার্শিপাড়ার বলাই নামে ব্যবসায়ী জানান- সরকার ভারত বা বিদেশ থেকে চাল আমদানি করলেও দাম কমবে না। এদিকে সঠিক সময়ে চাল গুদামে না দেয়ার কারণে আগে অনেক লাইসেন্স বাতিল হয়েছে। রাণীনগর উপজেলার খাদ্যগুদামে মাত্র ১ ধান ক্রয় করা হয়েছে, সেটাও আবার মোটা ধান। চাল না দেয়ার কারণে ১৩টি লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। সবার প্রশ্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও এত ধান-চাল কোথায় গেল। ধামইরহাট খাদ্য কর্মকর্তা জানান- প্রতিদিনই মজুতদারের কালো তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে মিল-মালিক সমিতির সভাপতি ফজলুর রহমান জানান, ঘাটতি মাথায় নিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করছি। লাইসেন্স করে অনেকেই বাইরের জেলা থেকে চাল সংগ্রহ করে গুদামে সরবরাহ করেন।
মান্দা উপজেলার কৃষক রাজ্জাক আলী জানান, ধান কাটা মাড়াই শেষ করে শ্রমিকদের মূল্য, সার, পানি ও হালের দাম দিতে আগাম ধান স্বল্প মূল্যে বিক্রি করতে হয়েছে। এখন ধানের দাম বাড়লেও কৃষকের ঘরে ধান নেই। মহাদেবপুর উপজেলার সুজাল গ্রামের মোতাহার জানান- আমরা ধান বিক্রি করেছি ৯০০ টাকা মণ দরে। বর্তমান ধানের মূল্য ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা।
জেলার চাল কল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন বলেন চালের দাম কমবে না। কারণ উৎপাদন খরচ বাড়ছে, শ্রমিক সংকট ও শ্রমিকের দাম বেশি। পতœীতলা উপজেলার চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল গফফার বলেন, তার এবং নিজের ছোট ভাইয়ের অটোমিলস রয়েছে। বাকি লাইসেন্সধারী কেউ চাল উৎপাদন করেন না। বাইরে থেকে চাল এনে গুদামে সরবরাহ করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়