সেন্ট লুসিয়ায় ধীরে এগুগোচ্ছে উইন্ডিজ

আগের সংবাদ

বিধ্বস্ত শহরে ভূতুড়ে নিস্তব্ধতা : আদালতের নিয়মিত বিচারকাজ বন্ধ > অফিসপাড়া নিথর > বন্ধ হাসন রাজা মিউজিয়াম > পথে পথে ক্ষতচিহ্ন

পরের সংবাদ

পদ্মা সেতুতে প্রথম ১৫ ঘণ্টায় আয় দেড় কোটি টাকা : মানুষের মাঝে স্বস্তি

প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি : নির্ধারিত সময়ের আগেই পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। গতকাল রবিবার প্রথম ১৫ ঘণ্টায় সেতুর উভয় পাড় থেকে আয় হয়েছে ১ কোটি ৪৮ লাখ ৫২ হাজার ৪০০ টাকা। রবিবার সকাল ৬টা থেকে উভয়মুখী যানবাহনের চাপ শুরু হয় এ রুটে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেতুর জাজিরা পয়েন্ট টোল প্লাজায় ঢাকামুখী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলের দীর্ঘ লাইন পড়ে। বিকালে বাইকারদের অতিরিক্ত চাপে অন্য যানবাহনের টোল প্লাজা অতিক্রমে বাড়তি সময় লাগে। সেতু চালু হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা।
রবিবার সকাল ৬টা থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভোর থেকেই ঢাকামুখী যানবাহনের ভিড় শুরু হয় পদ্মা সেতুর উভয় টোল প্লাজায়। বাধ্য হয়ে সকাল ৬টার ২০ মিনিট আগে জাজিরা প্রান্ত উন্মুক্ত করা হয়। দুপুর ২টা পর্যন্ত উভয় টোল প্লাজায় টোল আদায় হয়েছে ৮২ লাখ ১৯ হাজার ৫০ টাকা। জাজিরা প্রান্তে এ সময় পার হয় ৬ হাজার ৭৬২টি যানবাহন ও মাওয়া প্রান্ত থেকে পার হয় ৮ হাজার ৪৩৮টি গাড়ি। জাজিরা প্রান্ত থেকে আদায় হয় ৩৫ লাখ ২৯ হাজার ৫০০ টাকা ও মাওয়া প্রান্ত থেকে আদায় হয় ৪৬ লাখ ৮৯ হাজার ৫৫০ টাকা।
পটুয়াখালী, বরিশাল, খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন ঢাকা যায় বিভিন্ন কাজে। তবে এ দিন বেশি ভিড় ছিল একনজর পদ্মা সেতু দেখতে আসাদের ভিড়। আবার কেউ এসেছেন প্রথমদিন পদ্মা সেতু দিয়ে পারাপার হওয়ার স্মৃতি ধরে রাখতে। বিকালে মোটরসাইকেলের ঢল নামে উভয় প্রান্তে। অধিকাংশই ঘুরতে আসেন ১০০ টাকা টোল দিয়ে। এদের মধ্যে অনেকেরই ছিল না নিরাপত্তা সরঞ্জাম। তবে টোল প্লাজায় টিকেটের জন্য খুব বেশি দেরি করতে হয়নি যানবাহনগুলোকে। মোটরসাইকেল কাউন্টারে দেখা যায় প্রতি ১০-২০ সেকেন্ডে টিকেট দেয়া হচ্ছে। টাকা দিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই টিকেট নিয়ে যানবাহনগুলো সেতু পার হচ্ছে।
ট্রাকচালক আলমগীর বলেন, ঘাটে দিনের পর দিন আটকে থেকে আমাদের যে ভোগান্তি হতো তা থেকে রক্ষা পেয়েছি প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণে। তাইতো আজ প্রথমদিনে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা যাচ্ছি। খুব ভালো লাগছে। টোল পরিশোধের রসিদটি আমি সংরক্ষণ করে রাখব স্মৃতি হিসেবে।
সাতক্ষীরা থেকে আসা বাসযাত্রী মো. আশরাফ হোসেন বলেন, আগে সাতক্ষীরা থেকে ঢাকা যেতে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা খরচ হতো। সময় লাগত ৭-৮ ঘণ্টা। আর আজ সেতু চালু হওয়া ও এক্সপ্রেস হাইওয়ের কারণে প্রথমদিনে সেতুর টোল প্লাজা পর্যন্ত এলাম ৩ ঘণ্টায়। ঢাকা পৌঁছতে আর মাত্র ৪০ মিনিট লাগবে। বাসে ভাড়াও নিয়েছে মাত্র ৩০০ টাকা। তাই প্রধানমন্ত্রীকে অসংখ্য ধন্যবাদ পদ্মা সেতু করে দেয়ার জন্য। শরীয়তপুর থেকে আসা অ্যাম্বুলেন্সচালক নিয়ামুল হক বলেন, আজ প্রথম পদ্মা সেতু দিয়ে রোগী নিয়ে ঢাকা যাচ্ছি, অনেক খুশি লাগছে। ফেরিঘাটে আটকে থেকে চিকিৎসার অভাবে অনেক রোগীকে চোখের সামনে মারা যেতে দেখেছি। অনেক কষ্ট লাগত। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের জন্য পদ্মা সেতু করে দিয়েছেন। এখন অন্তত চিকিৎসার অভাবে কোনো রোগীর মৃত্যু হবে না।
নওগাঁ থেকে আসা বাসচালক মাহবুব বলেন, এই সেতু আমাদের জন্য আশীর্বাদ। টোল একটু বেশি হলেও সমস্যা নেই। আগে ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে হতো। এখন আর তা লাগবে না। যাত্রীরাও ভোগান্তির হাত থেকে রক্ষা পাবেন। টোল প্লাজায় টিকেটের জন্য অপেক্ষা করতে হয়নি। টাকা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই টিকেট দিয়ে দিয়েছে।
মোটরসাইকেল আরোহী ইব্রাহিম বলেন, বরিশাল থেকে ঢাকা যাচ্ছি জরুরি কাজে। আশা করি আজই আবার বরিশাল ফিরে বাড়িতেই দুপুরের ভাত খাব। আমাদের এই দীর্ঘদিনের স্বপ্নই আজ বাস্তবায়ন হয়েছে। এজন্য সরকারের প্রতি আমরা চির কৃতজ্ঞ।
নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী কাউসার আহমেদ বলেন, ব্যবসায়িক কাজে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় প্রতিনিয়তই আসা-যাওয়া করতে হয়। ঢাকা থেকে অনেক পণ্য আসে এসব জেলায়। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকার কারণে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসায়ীদের দূরত্ব ছিল। এখন পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এসব অঞ্চল ব্যবসায়িক জোন হয়ে উঠবে। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী জোবায়ের মিয়া বলেন, পদ্মা সেতু ও এই হাইওয়ে দেখে আমি মুগ্ধ।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবুল হোসেন বলেন, আজ সকাল ৬টা থেকেই যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। প্রথমদিন হওয়ায় যানবাহনের চাপ একটু বেশি মনে হচ্ছে। টোল প্লাজায়ও একটু সময় বেশি লাগছে। দুয়েক দিনে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়