সেন্ট লুসিয়ায় ধীরে এগুগোচ্ছে উইন্ডিজ

আগের সংবাদ

বিধ্বস্ত শহরে ভূতুড়ে নিস্তব্ধতা : আদালতের নিয়মিত বিচারকাজ বন্ধ > অফিসপাড়া নিথর > বন্ধ হাসন রাজা মিউজিয়াম > পথে পথে ক্ষতচিহ্ন

পরের সংবাদ

খুশিতে মাতোয়ারা যাত্রী ও চালকরা : পদ্মা সেতু দিয়ে মাত্র তিন ঘণ্টায় বরিশাল

প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এম কে রানা, বরিশাল থেকে : দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ার প্রথমদিনেই বরিশালে বেড়েছে পরিবহন যাত্রীদের চাপ। বিশেষ করে বরিশালে আসা যাত্রীদের চাপ। ঢাকা থেকে মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টার মধ্যে বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে আসতে পেরে খুশিতে আনন্দিত যাত্রীরা। স্বপ্নের সেতুর প্রথমদিনে যানবাহনের কিছু চাপ থাকার কারণে টোলঘর স্থানে একটু বিলম্বিত হওয়া সত্ত্বে যাত্রীদের মাঝে ছিল ভিন্ন রকম আনন্দ। পানিতে ভেসে নয়, এবারই প্রথম ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকার জন্য পদ্মার পানির উপর নির্মিত সেতু দিয়ে নিজ গন্তব্যে আসতে পেরে এক নতুন আনন্দ পেয়েছে বলে জানান বরিশালে আসা বিভিন্ন পরিবহনের মহিলা ও পুরুষ যাত্রীরা।
গতকাল রবিবার বরিশালের কেন্দ্রীয় নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে সর্বপ্রথম বেসরকারি এসি বাস সাকুরা পরিবহন ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে সকাল সাড়ে ৫টায় ৪০ জন যাত্রী নিয়ে বরিশালের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। গাড়িটি সকাল সোয়া ১০টায় যাত্রীদের নিয়ে বরিশালে আসে। এদিকে বেলা ১১টায় বরিশাল থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে সাকুরা পরিবহনের একটি বাস ছেড়ে যায় বলে জানান সাকুরা পরিবহনের কাউন্টার ইনচার্জ। রবিবার বরিশালে সবার আগে পদ্মা সেতু দিয়ে যাত্রী নিয়ে আসা সাকুরা পরিবহনের সুপারভাইজার নাসির বলেন, বহু কষ্টের পর আজ আমরা মুক্ত হলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে আজ

আমরা দক্ষিণাঞ্চলবাসী বড় একটি উপহার পেয়েছি। যার নাম পদ্মা সেতু। তিনি আরো বলেন, এখন আর যাত্রীদের খারাপ আচরণ শুনতে হবে না। ঢাকা থেকে সঠিক সময় যাত্রীদের নিয়ে বরিশালে পৌঁছাতে পারব। ফেরির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে না।
অন্যদিকে সাকুরা পরিবহনের অপর একটি গাড়ি সকাল সাড়ে ৬টায় ঢাকার গাবতলী থেকে বরিশালে যাত্রীদের নিয়ে তিন ঘণ্টার মধ্যে নথুল্লাবাদ এসে পৌঁছায়। এছাড়া ঢাকা থেকে সকাল ৮টায় ছেড়ে আসা ইলিশ পরিবহনের চালক মোখলেস বলেন, টোলঘরে প্রথমদিন একটু ভিড় থাকার কারণে যাত্রীদের নিয়ে বরিশালে আসতে তিন ঘণ্টা সময় লেগেছে। টোলঘরে ভিড় না হলে আরো আগে বরিশালে এসে পৌঁছে যেতাম। তিনি অভিযোগ করেন, আমরা ইচ্ছে করলে আরো দ্রুত কম সময়ের মধ্যে বরিশালে আসতে পারব যদি বরিশালে আসার সড়কগুলো যানজট মুক্ত করা হয়। তবে সড়কে জায়গা কম তার উপরে বিভিন্ন ছোট যানবাহন থাকার কারণে তাদের দ্রুত আসার ক্ষেত্রে বড় সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়।
এদিকে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা গ্রিন লাইন এসি পরিবহন কর্তৃপক্ষ প্রথমদিনে ৪০ ও ২৭ সিটের ১২টি গাড়ি চালু করেছে। বরিশাল গ্রিন লাইন কাউন্টার ইনচার্জ হাসান সরদার বাদশা জানান, তাদের মালিক ব্রান্ড এসকানিয়া ও ম্যান নামের গাড়িগুলো জার্মানি থেকে আমদানি করেছেন। এছাড়া ভলবো নামের গাড়িগুলো সুইডেন থেকে আমদানি করেছেন। তারা প্রথমদিন বরিশালে ১২টি গাড়ি দিয়ে সার্ভিস শুরু করেছে। তারা ৪০ সিটের এসি গাড়ির জনপ্রতি সিটভাড়া ৭৫০ টাকা করে নিচ্ছেন। অপরদিকে ২৭ সিটের এসি গাড়ির ভাড়া জনপ্রতি ১ হাজার টাকা করে নির্ধারণ করা হয়েছে।
গ্রিন লাইন পরিবহনের চালক ইয়াসিন জানান, সকাল সাড়ে ৬টায় ঢাকার আরামবাগ থেকে ছেড়ে আসার পর ৪০ মিনিট টোলঘরে বিলম্ব হওয়ার পরও তারা তিন ঘণ্টায় বরিশালে আসতে পেরেছেন।
সরজমিন বরিশাল কেন্দ্রীয় নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে দেখা গেছে ঢাকাগামী বিভিন্ন পরিবহন কাউন্টারে যাত্রীদের প্রচণ্ড চাপ। স্বাচ্ছন্দ্যে স্বল্প সময়ে ঢাকা যাওয়ার পাশাপাশি স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন এমন আশায় অনেকেই কাউন্টারগুলোর সামনে টিকেটের জন্য ভিড় জমিয়েছেন। একই সময় দেখা গেছে সরকারি বিআরটিসি কাউন্টারেও ঢাকাগামী যাত্রীদের প্রচুর ভিড়। টিকেট কাউন্টারে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেটের জন্য অপেক্ষা করছেন অনেকেই। ঢাকাগামী যাত্রী আব্দুল হালিম বলেন, ফেরিঘাটের দীর্ঘদিনের বিড়ম্বনা না থাকায় বাসে ঢাকা যাবেন তিনি। পাশাপাশি স্বপ্নের পদ্মা সেতুও দেখা হবে। আরেক যাত্রী সাবিনা সাজ্জাদ বলেন, পদ্মা সেতু দেখার জন্য তিন দিন আগে তিনি টিকেট কেটে রেখেছেন।
বরিশাল বিআরটিসির ডিপোর ইনচার্জ মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিআরটিসি এবার বরিশাল-ঢাকার জন্য ১৪টি এসি বাস সার্ভিস চালু করেছে। এর মধ্যে ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা রুটে ২টি, ভাণ্ডারিয়া ১টি ও বরিশাল-ঢাকা রুটে ১১টি এসি বাস সার্ভিস চালু করেছে। তিনি জানান, তারা বরিশাল থেকে ঢাকার গুলিস্তান পর্যন্ত জনপ্রতি ৫০০ টাকা ভাড়া নেয়ার কারণে তাদের গাড়িতে যাত্রীর চাপ বেশি রয়েছে।
অন্যদিকে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার প্রথমদিনেই বরিশাল সিটির আওতাধীন বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে বিভিন্ন যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী গাড়ির চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানকার সড়কে দায়িত্বরত ট্রাফিক সদস্যদের হিমশিম খেতে দেখা গেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়