আব্দুল মজিদ মল্লিক, আত্রাই (নওগাঁ) থেকে : নওগাঁ-আত্রাই-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়কের নির্মাণকাজ শেষের দিকে। নওগাঁর ঢাকা রোড থেকে শুরু করে রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলার রেললাইনের পাশ দিয়ে চলে গেছে রাণীভবানীর স্মৃতিবিজড়িত নাটোর শহরের এ বাইপাস সড়ক। কিন্তু উদ্বোধনের আগেই আত্রাই উপজেলার শাহাগোলা রেলওয়ে স্টেশনের উত্তর দিকের সড়কের ১৫০-২০০ ফুট রাস্তা গত শনিবার বিকালে হঠাৎ করেই দেবে গেছে এবং সড়কের মাঝে বড় ধরনের ফাটল ধরেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, মানসম্পন্ন কাজ না করার কারণেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
নওগাঁ-আত্রাই-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়কটি দিয়ে উত্তরবঙ্গের বিশেষ করে দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, জয়পুরহাটসহ বিভিন্ন জেলার ঢাকাগামী যানবাহন নাটোর হয়ে খুব সহজেই ঢাকা যেতে পারবে। এতে করে ঢাকা যেতে প্রায় ১ ঘণ্টা সময় কম লাগে। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই এই সড়কে চলাচল করতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করার পাশাপাশি হঠাৎ দেবে যাওয়ায় পুরো সড়ক নিয়ে নতুন করে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
যাত্রীরা বলছেন, পুরো সড়কটিই অনেক গভীর খালের পাশ দিয়ে মাটি ভরাট করে অপরিকল্পিকভাবে তৈরি করা হয়েছে। ফলে সড়কের নিচে মাটি ধরে রাখার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। ধীরে ধীরে মাটি সরে গেলে পুরো সড়কটিই ভেঙে খালের মধ্যে চলে যাবে।
সড়কের নওগাঁর অংশের ২৯ কিলোমিটার রাস্তার রাণীনগর রেলওয়ে স্টেশনসংলগ্ন এলাকায় সামান্য অংশ পাকা করার কাজ বাকি থাকলেও ইতোমধ্যে বিভিন্ন যানবাহন চলাচল শুরু করেছে। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন না হলেও এই জনপদের বসবাসরত মানুষ সরাসরি বিভিন্ন পরিবহন ব্যবহার করে নওগাঁ থেকে শুরু করে রাণীনগর, আত্রাই, নলডাঙ্গা, বাসুদেবপুর হয়ে অল্প সময়ে কম খরচে জেলা শহর নাটোরে পৌঁছে যাচ্ছেন।
সওজ সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের সংসদ এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবির নওগাঁর ঢাকা রোড নামক স্থানে সড়কটির নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সেই মোতাবেক কিছু কাজ শুরু হলেও রাজনৈতিক নানা জটিলতার কারণে তা ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে থাকে।
সওজ আরো জানায়, এরপর ঢাকা রোড থেকে রাণীনগর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার অংশ অনেক আগেই পাকা করা হয়। পরে অনেক জটিলতা কাটিয়ে নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের প্রয়াত সাংসদ ইসরাফিল আলম ২০১৮ সালে পুনরায় রাণীনগর রেলওয়ে স্টেশন থেকে আত্রাই হয়ে নাটোর জেলার সীমানা পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়কের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর থেকে এই সড়কের নির্মাণকাজ এলাকাবাসীর কাছে অনেকটাই দৃশ্যমান হয়।
পুরো সড়কে ৫টি সেতু ও ১০টি কালভার্ট নির্মাণ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। বর্তমানে সড়কের উপরিভাগের কাজও শেষের দিকে। কিছু কিছু জায়গায় শুধু কার্পেটিং বাকি আছে। নির্মাণকাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৯ কোটি টাকা। পুরো প্রকল্পটিকে ৪টি ফেজে ভাগ করে ৪টি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। নওগাঁ-নাটোর অঞ্চলিক মহাসড়কটির নির্মাণকাজের দেখভাল করছে নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগ। নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজেদুর রহমান সাজিদ বলেন, সড়ক দেবে যাওয়ার খবর পেয়েই আমি ও আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গত শনিবার বিকালে পরিদর্শন করেছি। আমিও বুঝতে পারছি না কী কারণে সড়কের ওই অংশটুকু এমনভাবে দেবে গেল। ইতোমধ্যেই দেবে যাওয়া সড়কের ওই অংশটুকু পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু করেছি। আমি আশাবাদী দ্রুতই সড়কটি চলাচলের জন্য স্বাভাবিক হবে।