স্বপ্নজয়ের পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

আগের সংবাদ

হাওর জনপদে স্বাস্থ্যসেবা ‘নেই’

পরের সংবাদ

স্বপ্নের পদ্মা সেতু বদলে দেবে গোটা দক্ষিণের অর্থনীতি

প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এস কে রঞ্জন, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) থেকে : অবশেষে খুলে গেল বহুল আকাক্সিক্ষত স্বপ্নের পদ্মা সেতুর দ্বার। আর এই সেতুর ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ঘটতে চলেছে অর্থনৈতিক বিপ্লব। ঘুরে দাঁড়াবে স্থবির হয়ে থাকা নামিদামি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। পর্যটন শিল্পের পাশাপাশি পায়রা সমুদ্রবন্দরসহ শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকা রাখবে পদ্মা সেতু। তাই এখন শুধু স্বপ্ন নয়, বাস্তবেই গোটা দক্ষিণাঞ্চলের ভাগ্য বদলে যাবে।
এরই মধ্যে ব্যবসায়ীরা তাদের বাণিজ্যিক প্রসার ঘটাতে নতুন পরিকল্পনা শুরু করেছেন। এছাড়া এ জনপদের অন্যতম আলীপুর মহিপুর মৎস্যবন্দরের ব্যবসায়ীরা সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্তের প্রহর গুনছেন। স্বপ্নের এ সেতুটি উদ্বোধনের পর সর্বদক্ষিণের উপকূলীয় এলাকায় সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের দুয়ার খুলে যাবে। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মানুষ সেই কাক্সিক্ষত মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা, সমুদ্রবন্দর পায়রাসহ অপার সৌন্দর্যের বিস্তীর্ণ উপকূল। গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে কুয়াকাটায় আগমন ঘটছে দেশি-বিদেশি হাজারো পর্যটকের। কিন্তু এতে প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিল যোগাযোগ ব্যবস্থা। এবার পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে তার অবসান ঘটবে। আর পর্যটকদের সেবার মান বাড়াবে আগের থেকে কয়েকগুণ। একই সঙ্গে দ্বার খুলবে অর্থনীতির চাকার। নদীবেষ্টিত এলাকার উন্নয়নে থাকছে না বাধার দেয়াল। দক্ষিণাঞ্চলবাসীর ভাগ্য উন্নয়নে তৈরি হবে নতুন নতুন শিল্পায়ন। চাহিদামতো গ্যাস, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পেলে গতি ফিরবে অর্থনীতিতে- এমনটাই জানিয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর দ্বার খুলে দেয়া হলে অল্প সময়ের মধ্যে কুয়াকাটায় পৌঁছানো যাবে। দুর্ভোগ থাকবে না। আগমন ঘটবে দেশি-বিদেশি পর্যটকের। তাই এখানে আরো হোটেল-মোটেলের প্রয়োজন হবে। এ ব্যাপারে জল তরণী ট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফুর রহমান জানান, কুয়াকাটাকে নতুন দিগন্তে উন্মোচিত করে দেবে পদ্মা সেতু। ইকো-ট্যুরিজমের প্রসার বাড়বে। সারা বছর পর্যটকে মুখর থাকবে কুয়াকাটার সৈকত।
ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার ভোরের কাগজকে জানান, পদ্মা সেতু চালু হলে কুয়াকাটার ১০-১২ ঘণ্টার পথ ৫-৬ ঘণ্টায় পৌঁছানো যাবে। এর ফলে কয়েকগুণ পর্যটক বেশি আসার সম্ভাবনা রয়েছে। কুয়াকাটা ও আলীপুর মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আনছার উদ্দন মোল্লা বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর গভীর সমুদ্র থেকে আহরণকৃত মাছ খুব অল্প সময়ের মধ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান করতে পারবে জেলেরা।
কুয়াকাটা পৌর মেয়র মো. আনোয়ার হাওলাদার জানান, দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের প্রধান ভূমিকা রাখবে এই পদ্মা সেতু। উদ্বোধনের পর কুয়াকাটায় দ্বিগুণ নয়, শতগুণ বেড়ে যাবে পর্যটক। এছাড়া এ অঞ্চলের মৎস্য খাতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবে এই সেতু। একই সঙ্গে বাড়বে বিনিয়োগ- এমনটাই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।
কুয়াকাটা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল বারেক মোল্লা বলেন, স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়া এই পদ্মা সেতু শুধুমাত্র জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অবদান। এর সুফল ভোগ করবে গোটা দক্ষিণাঞ্চলের সাগর পাড়ের মানুষ। সচল হবে অর্থনীতির চাকা। তাই প্রধানমন্ত্রীকে কুয়াকাটাসহ নদীবেষ্টিত উপকূলের মানুষ ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
কলাপাড়া পৌরশহর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. দিদার উদ্দিন আহমেদ মাসুম বেপারী বলেন, বাণিজ্যিকভাবে কলাপাড়ার ইতিহাস-ঐতিহ্য ছিল শত বছরের। কিন্তু উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে ‘ধান-নদী-খাল’ এই তিনের সমন্বয়ের বরিশালের শস্য ভাণ্ডারের ফসল এবং গভীর সমুদ্র থেকে আহরিত মৎস্য সম্পদ দ্রুত দেশের বিভিন্ন মোকামে পৌঁছে যাবে। এতে প্রকৃত ব্যবসায়ী কিংবা মালিক ফসল ও মৎস্য সম্পদের যথাযথ মূল্য প্রাপ্তি হবে, একই সঙ্গে দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রা থেকে অল্প সময়ের মধ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানি দ্রুত হবে। এতে বাংলাদেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়