স্বপ্নজয়ের পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

আগের সংবাদ

হাওর জনপদে স্বাস্থ্যসেবা ‘নেই’

পরের সংবাদ

সিলেটে ভয়াবহ বন্যা : জীবিকা হারিয়ে অন্ধকারে গোয়াইনঘাটের খাসিয়ারা

প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জাহিদুল ইসলাম, সিলেট অফিস : সিলেটে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো খাসিয়া। ভাষা, সংস্কৃতিতে অনন্য এই সম্প্রদায়ের বাস সিলেটের উত্তর-পূর্ব অংশে। খাসিয়া সম্প্রদায়ের পাঁচটি পুঞ্জি বা গ্রাম অবস্থিত সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা জৈন্তাপুর আর গোয়াইনঘাটে। এর মধ্যে গোয়াইনঘাটের লামাপুঞ্জি, নকশীয়া পুঞ্জি আর সংগ্রাম পুঞ্জিতে বাস করে অন্তত ৫০০ পরিবার। চলমান ভয়াবহ বন্যার প্রথম ধাক্কা গেছে এই খাসিয়া সম্প্রদায়ের ওপর দিয়েই।
ভারতের মেঘালয় থেকে থেকে নেমে আসা উম্নঘট নদী জাফলং সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে নাম নিয়েছে পিয়াইন। আর খরস্রোতা পিয়াইনের পাড়ে অবস্থিত খাসিয়াদের অন্যতম বড় গ্রাম সংগ্রাম পুঞ্জি। ছোট ছোট ঘরগুলোতে বসবাস প্রায় ৩৫টি পরিবারের। মূল পেশা পান আর সুপারি বিক্রি। কেউ টুকিটাকি ব্যবসা করলেও মূলত পান-সুপারি নিয়েই কারবার। চলতি মাসে ১৫ তারিখ পাহাড়ি ঢল প্রথমেই আঘাত হানে এই সংগ্রাম পুঞ্জিতে। স্রোতের তোড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় পানের বরজ, উপড়ে যায় সুপারি গাছ। বানের জল আর অতিবৃষ্টিতে ভেসে যায় প্রধান জীবিকা। খাসিয়াদের বেশির ভাগ ঘরই মাচার উপরে হওয়াতে ঘর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি বানের জল। নদী তীরবর্তী ৪-৫টি ঘরের একটু ক্ষয়ক্ষতি হলেও কোনো পুঞ্জিতেই পানি প্রবেশ করেনি। কিন্তু অতিবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা আর মোবাইল নেটওয়ার্ক ভেঙে পড়ায় কার্যত পুরো উপজেলা থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে খাসিয়াদের তিনটি পুঞ্জি। বেশির ভাগ খাসিয়া পরিবার দিন এনে দিন খায় বলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় তাদের। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে নিজেদের মধ্যেও যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
সংগ্রাম পুঞ্জি গ্রামের প্রধান শরবা সুচেন ভোরের কাগজের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, আমাদের পুঞ্জিগুলো টিলার গায়ে হওয়ায় পুঞ্জিতে তেমন একটা পানি ওঠেনি। তাই অনেকেই মনে করেন বন্যায় আমাদের তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। অথচ আমাদের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস পানের বরজগুলো এক রকম ধ্বংস হয়ে গেছে। বরজের অর্ধেকের বেশি পান গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। এতে জীবিকা হারিয়ে পথে বসার জোগাড় হয়েছে বহু পরিবারের। তিনি বলেন, টানা এক সপ্তাহ বৃষ্টি আর বন্যার কারণে পুঞ্জি থেকে বের হওয়ার উপায় ছিল না, বেশির ভাগ পরিবারেরই দুঃসহ দিন কাটছে। উপজেলা থেকে প্রাথমিকভাবে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। যদিও তা সবার জন্য যথেষ্ট ছিল না, তারপরও তাই দিয়ে চলেছে। এখন পানি নেমে গেছে কিন্তু আমাদের জীবিকার প্রধান উৎস নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ভবিষ্যৎ।
বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে নকশীয়া পুঞ্জিতে। পান-সুপারির পাশাপাশি টিলার মাটি সরে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছেন পুরো পুঞ্জির অধিবাসীরা। ঘরবাড়িতে পানি না উঠলেও অতিবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ব্যাপারে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশনের শাখা ব্যবস্থাপক ঝলমল মারিয়া বলেন, পুরো গোয়াইনঘাট উপজেলাই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত। যাদের ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে তাদের নিয়েই সবাই ব্যস্ত। খাসিয়া পুঞ্জিগুলোতে পানি ওঠেনি। তাই তাদের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হওয়ার কারণে তারা সবার কাছে যেতেও পারবে না। তাই এই মুহূর্তে সরকারকেই তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। আর না হলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হবে এই পরিবারগুলোকে।
জানতে চাইলে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিলুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, বন্যায় খাসিয়া পুঞ্জিগুলোর অনেকটাই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যার শুরুতেই পুঞ্জিগুলোর বসতির আশপাশের পাড় ভেঙে গেছে, এটা প্রতিটি ফ্লাশ ফ্লাডেই (আকস্মিক বন্যা) হয়ে থাকে। বিশেষ করে তাদের জীবিকার মূল উৎস পানের বরজে ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। আমরা প্রাথমিকভাবে বিশেষ ত্রাণ বিতরণ করেছি। তবে এটাই সমাধান নয়। তাদের জীবিকা নির্বাহের কথাটি বিবেচনায় এনে এরই মধ্যে উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য তাগিদ দেয়া হয়েছে। আশা করি খুব দ্রুত ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যাবে।
তাহমিলুর রহমান বলেন, আমরা এরই মধ্যে ত্রাণের ধরন পরিবর্তনের পরিকল্পনা নিয়েছি। যেমন, বন্যায় যাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ঘনবাড়ি মেরামত, গবাদিপশুর খাবার, বীজ সহায়তা, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও চা শ্রমিকদের জন্য আলাদাভাবে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া ইত্যাদি। তিনি বলেন, আশা করি এসব সহায়তায় বন্যাদুর্গতরা খুব দ্রুতই ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়