স্বপ্নজয়ের পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

আগের সংবাদ

হাওর জনপদে স্বাস্থ্যসেবা ‘নেই’

পরের সংবাদ

সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া : পদ্মা পাড়ের ভোগান্তি এখন শুধুই স্মৃতি

প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রকি আহমেদ : ফেরিঘাটে দীর্ঘ যানজট, ফেরির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা, লঞ্চডুবিতে মৃত্যু, খরস্রোতা পদ্মায় স্রোতের ধাক্কায় লঞ্চ-ফেরিতে ভয়ের আতঙ্ক, পাড়ে দীর্ঘ অপেক্ষার জন্য মালবাহী ট্রাকে ফল, সবজিসহ খাদ্যদ্রব্য নষ্ট হওয়া ছিল পদ্মার দক্ষিণপাড়ের মানুষের জন্য নিত্যঘটনা। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে এসব ভোগান্তি লাঘব হবে বলে প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের সাধারণ মানুষ। তাদের ভোগান্তি এখন শুধুই স্মৃতি হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন তারা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আশরাফুজ্জামান বলেন, গত রমজানের ঈদের আগে লডকাউনে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে শুনে রাত ১টায় সেহরি খেয়ে গুলিস্তান থেকে বাসে উঠি। অনেক কষ্ট করে রাতে ছিনতাই আতঙ্ক নিয়ে লেগুনায় করে মাওয়া পৌঁছালাম। ভালো লাগছিল এই ভেবে যে, লকডাউনের আগেই ঈদে বাড়ি ফিরতে পারব। কিন্তু ভোরে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হওয়ার কথা থাকলেও তার আগেই বন্ধ হয়ে যায়। যখন আমি ঘাটের পাড়ে পৌঁছালাম দেখি, শেষ লঞ্চটা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আমি পাড়ে দাঁড়িয়ে লঞ্চটা যতদূর পর্যন্ত দেখা যায় হতাশ চোখে তাকিয়ে রইলাম। আর যদি পাঁচ মিনিট আগে আসতে পারতাম! মনে হচ্ছিল, লঞ্চটার সঙ্গে সঙ্গে আমার ঈদটাও চলে গেল। পরে আমার মতো ঘাটে আসা হাজার হাজার দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে থাকি যদি লঞ্চ ছাড়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত না ছাড়ায় ঢাকায় চলে আসতে হলো। তখন মনে হচ্ছিল, পদ্মা সেতু যদি হয়ে যেত তাহলে আর দুর্ভোগে পড়তে হতো না। সেতু হয়ে যাওয়ায় আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। এগুলো এখন শুধুই স্মৃতি হয়ে থাকবে।
আজিজুর রহমান নামে এক ব্যাংকার ভোরের কাগজকে বলেন, ব্যাংকের চাকরি সূত্রে ঢাকায় বসবাস করছি। গত বছর আব্বা হঠাৎ করে মারা যান। কিন্তু খবর শুনেও দ্রুত যেতে পারিনি। মাওয়াতে জ্যামের কারণে সাতক্ষীরায় বাড়ি যেতে ১০ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। তখন ভাবতাম আমি মারা গেলেও হয়তো গ্রামে লাশ নিয়ে যেতে অনেক সময় লাগবে। তবে পদ্মা সেতু যেন আমাদের অঞ্চলের জন্য আশীর্বাদ। এখন আর এত সময় লাগবে না। ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রীকে।
মৃত্যুঞ্জয় দাশ জয় নামে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জানান, দুই মাস আগেও ঈদে বাড়ি যেতে ভোগান্তিতে পড়েছিলাম। ঘাটে গিয়ে দেখি ফেরি কম। যানবাহন অনেক বেশি। তীব্র রোদে পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষা করে প্রতিযোগিতা করে ফেরিতে উঠি। অথচ মোটরসাইকেলে মাত্র পাঁচ মিনিটে পদ্মা পার হওয়া যাবে এখন থেকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু উদ্বোধন করে দলমত নির্বিশেষে সবার মন জয় করে নিয়েছেন।
লিমন আলী নামে মৌচাকের এক মুদি দোকানদার জানান, পাঁচ-সাত মাস আগে আমার মা স্ট্রোক করেন। তাকে জরুরি ঢাকায় আনতে গিয়ে নিরুপায় হয়ে লঞ্চ ব্যবহার করতে হয়। নদীতে লঞ্চে উঠলে ঝড় শুরু হয়ে যায়। মা ভয়ে চিৎকার করতে থাকেন। আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন। এখন তো পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হলো। আল্লাহ ভরসা এবার থেকে কম সময়ে পদ্মা সেতু দিয়ে আমরা পারাপার করতে পারব।
এমন অসংখ্য মানুষ যাদের বাড়ি দক্ষিণবঙ্গে তারা পদ্মা সেতু উদ্বোধনে আনন্দে উচ্ছ¡সিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন। শুধু নিজ সময়, ভোগান্তি লাঘবই নয়। দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ব্যবসার নতুন দিগন্ত তৈরি হবে বলে মনে করছেন কাঁচামাল ব্যবসায়ীরা। কারওয়ান বাজারে আলী হোসেন নামে এক সবজি পাইকার ব্যবসায়ী বলেন, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর থেকে প্রতিদিন সবজি এনে ঢাকায় দেই। কিন্তু মাওয়া ঘাটে যানজট থাকায় কিছু কিছু দিন সবজি নষ্ট হয়ে যায়। ঈদের সময় বেশি এ ঘটনা ঘটে। এমনো দিন গেছে এত পরিমাণ সবজি নষ্ট হয়ে গেছে যে, চোখে পানি চলে আসত। পদ্মা সেতু উদ্বোধনে এখন আর এমন হবে না বলে আশা ব্যক্ত করেন আলী হোসেন। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ফলে আলী হোসেনের মতো অনেক ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসার স্বপ্নের জাল বুনছেন বলে জানিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়