স্বপ্নজয়ের পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

আগের সংবাদ

হাওর জনপদে স্বাস্থ্যসেবা ‘নেই’

পরের সংবাদ

ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা : মুরাদনগরে নৌকা তৈরির ধুম

প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রায়হান চৌধুরী, মুরাদনগর (কুমিল্লা) থেকে : এখন বর্ষাকাল। নদী, খাল ও বিলে পনি আর পানি। তাই কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় চলছে নৌকা তৈরির হিড়িক। পাশাপাশি চলছে পুরনো নৌকা মেরামতের কাজও। শুরু হয় নৌকা তৈরির কাজ। এরই অংশ হিসেবে বর্তমানে নৌকা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন নৌকা তৈরির কারিগররা। গত বছরের তুলনায় কাঠের দাম বেশি হওয়ায় এবার নৌকার মূল্য একটু বেশি হলেও জমে উঠেছে নৌকা বিক্রির পালা। মুরাদনগরসহ পার্শ্ববর্তী ৬টি উপজেলার দরিদ্র জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত অঞ্চলের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে মাছ শিকার করে জীবনধারণ ও যাতায়াতের জন্য এ কোষা নৌকার ওপর নির্ভরশীল থাকেন।
আগের মতো এখন নৌকার তেমন চাহিদা না থাকলেও আষাঢ় মাসের আগমন ঘিরে বেড়ে যায় নৌকার চাহিদা। প্রতি বছরের মতো এবারো বর্ষা আসার আগে থেকে এ উপজেলার অধিকাংশ জনপদ পানিতে থইথই করে। ডুবে যায় অনেক রাস্তাঘাট, নদীনালা, খাল-বিল। যাতায়াত করতে হয় নৌকায়। মৎস্যজীবীরা মাছ ধরার কাজে ব্যবহার করেন ছোট-বড় নৌকা। তাই বর্ষা মৌসুম এলে এই অঞ্চলে বেড়ে যায় নৌকার কদর। তাই ওই সব অঞ্চলে নৌকার চাহিদা মেটাতে এখন দিন-রাত পরিশ্রম করে একের পর এক নৌকা তৈরি করছেন নৌকা তৈরির কারিগররা।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বালুছনা, কৈজুরী, কাঁঠালিয়াকান্দা ও পাঁচকিত্তাসহ বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা যায় নৌকা তৈরি ও মেরামতের ধুম। কেউ কাঠ কাটছেন, আবার কেউ নৌকায় আলকাতরা লাগাচ্ছেন। হাতুড়ি কাঠের খুটখাটে শৈল্পিক ছন্দে যে কারো মন ভরে যায় সেখানে গেলে। প্রখর রোদ ও বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে বর্ষার আগমনের শুরু থেকে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পরিবারের পুরুষদের পাশাপাশি নৌকা তৈরিতেও কাজ করছেন নারীরা। ক্ষিতিশ চন্দ্র সরকার, বুলু সরকার, খোকন সরকার, বিদুল সরকারসহ অন্তত ১০টি পরিবার নৌকা তৈরির পেশায় যুক্ত। অন্যান্য মৌসুমে তারা কাঠমিস্ত্রির পেশায় যুক্ত থাকলেও বর্ষার মৌসুমে তৈরি করেন কাঠের নৌকা। এখানে তৈরি নৌকা এ উপজেলার শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী বৃহত্তম বাজার রামচন্দ্রপুর, ডুমুরিয়া ও ইলিয়টগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যাওয়া হয় বিক্রির জন্য।
প্রতিটি নৌকা ৬-৮ হাজার টাকা বিক্রি করেন তারা। তা থেকে কোনো কোনো নৌকায় ১২০০-১৫০০ টাকা লাভ হয়।
নৌকার কারিগর লোহাগাড়া গ্রামের মৃত কালাচাঁন চন্দ্র সরকারের ছেলে ক্ষিতিশ চন্দ্র সরকার বলেন, ৫০ বছর ধরে নৌকা তৈরির কাজ করছি। সামনে বর্ষা মৌসুম এরই মধ্যে তৈরি করেছি ৫টি নৌকা। আগের মতো নৌকার চাহিদা তেমন নেই, কিন্তু বর্ষার শুরুতে নৌকার চাহিদা থাকে তাই বসে না থেকে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য নৌকা তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। নৌকা তৈরির অন্য এক কারিগর একই গ্রামের মৃত সনাতন সরকারের ছেলে রাসু সরকার বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই নৌকা তৈরির কাজে জড়িত। বর্ষার মৌসুম তাই এখন ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে জেলেদের মাছ ধরার নৌকা বানানোর কাজে। চাহিদা মোতাবেক ছোট, বড় বিভিন্ন রকম নৌকা বানানো হয়। আর নৌকার আকারভেদে দাম নির্ধারণ করা হয়। এ মৌসুমে ৪০-৫০টি নৌকা বানানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে নৌকা তৈরির মৌসুমে আমাদের একসঙ্গে অনেক টাকার কাঠ কিনতে হয় নৌকা তৈরির জন্য। আর এ টাকা আমরা ঋণ করে এনে নৌকা বিক্রি শেষে লাভের একটা অংশ ওই ঋণদাতাকে দিয়ে দিতে হয়। সরকার যদি এ ব্যাপারে আমাদের সহযোগিতা করত তাহলে আমাদের কষ্ট অকেটাই লাঘব হতো।
কোম্পানীগঞ্জ বদিউল আলম ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ নুরুল হক বলেন, বর্ষার শুরুতে এ উপজেলার নিচু গ্রামে নৌকার চাহিদা বেড়ে যায়। ওই সব এলাকায় যাতায়াত ও জেলেরা মাছ ধরার জন্য নতুন নৌকা কিনে থাকেন। ছোটবেলায় আমরা অনেক নৌকা দেখেছি কিন্তু সেই নৌকার দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না। এ নৌকা তৈরির শিল্পটাকে টিকিয়ে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ নজরদারির দরকার।
মুরাদনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ড. আহসানুল আলম সরকার কিশোর বলেন, যারা নৌকা তৈরিতে জড়িত তারা খুবই দরিদ্র। এ উপজেলায় যারা দীর্ঘদিন নৌকা তৈরির পেশায় জড়িত তাদের খোঁজখবর নেব।
সরকারিভাবে উন্নত প্রশিক্ষণ ও ঋণের ব্যবস্থা করার যদি কোনো সুযোগ থাকে তাহলে অবশ্যই সহযোগিতা করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়