স্বপ্নজয়ের পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

আগের সংবাদ

হাওর জনপদে স্বাস্থ্যসেবা ‘নেই’

পরের সংবাদ

বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও দুর্ভোগে মানুষ

প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : সব নদনদীর পানি কমতে থাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে। তবে পানি কমছে ধীরে ধীরে। ফলে পানিবন্দি লাখো মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম দুর্ভোগে দিন পার করছেন। এদিকে সরকারি ত্রাণ তৎপরতা চললেও ত্রাণের পরিমাণ খুবই অপ্রতুল। ফলে এখনো বেশির ভাগ বন্যার্ত কোনো ত্রাণ সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সম্পর্কে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট-
কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জে প্রতিদিন ধীরে ধীরে বন্যার পানি কমছে। ফলে পানিবন্দি লাখো মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম দুর্ভোগে দিন পার করছেন। চলছে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবীদের ত্রাণ তৎপরতা। তবে ত্রাণের পরিমাণ খুবই অপ্রতুল থাকায় এখনো বেশির ভাগ বন্যার্ত কোনো ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্যাপ্ত ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, জেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহমান কালনী, কুশিয়ারা, ধনু ও বালাই নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর মেঘনা ও পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে ইটনা জিরো পয়েন্টে পানিতে অজ্ঞাত পরিচয়ের অর্ধগলিত একজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সকালে বন্যার পানিতে ৫০ বছর বয়সি এক ব্যক্তির মরদেহ ভেসে আসতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ সে মরদেহ উদ্ধার করে।
নোত্রকোনা : নেত্রকোনায় নদনদীর পানি কমছে। তবে বন্যাকবলিত এলাকায় যেসব বাড়িঘর থেকে পানি নেমে গেছে সেসব বাড়িঘরে ফিরে চরম দুর্ভোগের শিকার বন্যার্তরা। জেলার ৭৩টি ইউনিয়নে পানিবন্দি ৮০ হাজার ২০৩টি পরিবারের মোট ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা ৫ লাখ ৫২ হাজার জন। তবে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে সেনাবাহিনী বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ, চিকিৎসাসেবাসহ বাড়িঘর মেরামতে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন।
জামালপুর : জামালপুরে কমছে যমুনা নদীর পানি।
এতে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক আব্দুল মান্নান জানান, শনিবার দুপুরে দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
শনিবার জেলার ইসলামপুর উপজেলার চীনাডুলি ইউনিয়নের চীনাডুলি গ্রামে সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষজন তাদের কর্দমাক্ত বাড়িঘর পরিষ্কার করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এছাড়া যারা আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিলেন তারাও নিজ গৃহে ফিরেছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ জানান, যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে চলে গেছে। এখন আর পানি বাড়ার সম্ভাবনা নেই।
গাইবান্ধা : গাইবান্ধায় সব নদনদীর পানি কমতে শুরু করলেও হঠাৎ করে আবারো বাড়তে শুরু করেছে তিস্তা নদীর পানি। গত শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে গতকাল শনিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি বেড়েছে ৮ সেন্টিমিটার। তিস্তার এই পানি এসে পড়বে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনায়। তবে বিপৎসীমার অনেক নিচে চলে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদসহ ঘাঘট ও করতোয়া নদীর পানি। মানুষ আশ্রয় কেন্দ্র থেকে নিজ বাড়িতে ফিরছেন। বন্যায় অনেক নলকূপ ডুবে যাওয়ায় ঘরে ফিরে বিশুদ্ধ পানির কষ্টে ভুগছেন মানুষ। গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্যমতে, বন্যায় এ পর্যন্ত গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ২৩টি ইউনিয়নের ৯ হাজার ২৫৮ পরিবারের ৬১ হাজার ৫১৪ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সাঘাটা উপজেলার ৩৫ হাজার ৪০ জন। এখনো ১০টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৭৭৬ জন মানুষ ও ১৩২টি গবাদিপশু আশ্রয় নিয়ে আছে। বন্যাকবলিতদের জন্য বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৬০৫ টন চাল, নগদ ২২ লাখ টাকা, শিশুখাদ্য কেনার জন্য ১৮ লাখ ৯৩ হাজার টাকা, গো-খাদ্য কেনার জন্য ৩৭ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। এর মধ্যে বন্যাকবলিত চার উপজেলায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৮০ টন চাল, নগদ ৬ লাখ টাকা, শিশুখাদ্য ক্রয়ের জন্য ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা, গো-খাদ্য ক্রয়ের জন্য ১৬ লাখ টাকা ও ২০৫ প্যাকেট শুকনা খাবার। মজুত রয়েছে ৫২৫ টন চাল, নগদ ১৬ লাখ টাকা, শিশুখাদ্যের জন্য তিন লাখ ৪৩ হাজার টাকা ও গো-খাদ্যের জন্য ২১ লাখ ৯৯ হাজার টাকা।
এসব বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এস এম ফয়েজ উদ্দিন বলেন, দিন দিন পানি কমতে থাকায় মানুষ ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুত আছে। ইউএনওরা ত্রাণের চাহিদা দিলে তা বরাদ্দ দেয়া হবে। নারী ও শিশুদের নিরাপত্তায় আনসার-ভিডিপি সদস্য, গ্রাম পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবক এবং এনজিও প্রতিনিধিরা নিয়োজিত আছেন।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু রায়হান জানান, শনিবার বিকাল ৩টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার, ঘাঘট নদীর পানি বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার, তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার ও করতোয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ২২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে শনিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত হিসাব করে দেখা গেছে, শুধু তিস্তা নদীর পানি বেড়েছে। এছাড়া ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও করতোয়ার পানি কমেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়