স্বপ্নজয়ের পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

আগের সংবাদ

হাওর জনপদে স্বাস্থ্যসেবা ‘নেই’

পরের সংবাদ

পদ্মা সেতু একটি স্বপ্ন

প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৬, ২০২২ , ১:২৪ পূর্বাহ্ণ

জাতির একটি স্বপ্ন। একটি প্রতিশ্রæতির বাস্তবায়ন। একটি চ্যালেঞ্জ। সব মিলিয়ে আমরা সফল। শেখ হাসিনা সফল। বাংলাদেশ সফল। বাংলাদেশের অগ্রগতির যে ধারা সেটি বহমান। স্বাধীনতার পরে পদ্মা সেতু আমাদের জাতির জন্য বড় প্রাপ্তি। বড় ঘটনা। আমাদের বীর সন্তানরা তাদের প্রাণের মায়া তুচ্ছ করে যুদ্ধ করেছিলেন। জাতির পিতার একটি ডাকে ১৯৭১ সালে লাখ লাখ মানুষ ছুটে এসেছিলেন। তাদের কোনো পিছুটান ছিল না। একটিই লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা, না হয় মৃত্যু। স্বল্পসংখ্যক মানুষ ছাড়া সবাই ছিলেন স্বাধীনতাকামী। যার কারণে আমাদের স্বাধীনতা ত্বরান্বিত হয়েছিল।
পদ্মা সেতু নির্মাণের আগে অনেক প্রোপাগান্ডা হয়েছে। এখনো হচ্ছে। যেখানে দেশের একটি বড় সম্পদ তৈরি হলো, সেখানে সবাই মিলে সরকারকে অভিনন্দন দেবে তা নয়, সরকার কেন পদ্মা সেতু তৈরি করে ফেলল সেটা তাদের মাথাব্যথা। এতে করে একটি রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বিএনপি জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অন্ধ ভক্ত বা সমর্থক ছাড়া আসলে সাধারণ জনগণ তাদের এই কর্মকাণ্ডে বিব্রত। বিএনপি মহাসচিবের যে মিথ্যাচার সেটাও জাতির কাছে সুস্পষ্ট। এভাবে একটি রাজনৈতিক দল টিকে থাকতে পারে না। সরকার ভুল করলে অবশ্যই সমালোচনা করতে হবে। সরকারের ভুল ধরিয়ে দিতে হবে। শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকলে সরকারও নিজের ইচ্ছামতো কার্য সম্পাদন করে। তবে দেশের ভালো কাজে সবার অভিনন্দন দেয়া প্রয়োজন। পদ্মা সেতু একটি স্বপ্ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বের কারণে আমরা সেই স্বপ্নের বাস্তব রূপ পেয়েছি। সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে আমাদের পদ্মা সেতু উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জাতির পিতার কন্যা। দৃঢ় মনোবল তার। সদিচ্ছা থাকলে যে সব কিছু সম্ভব তা তিনি করে দেখিয়ে দিলেন। বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। দেশের অনেকেই তখন বিশ্বাস করতে পারেননি যে পদ্মা সেতু হবে। নিজ দলেরও কেউ কেউ ভেবেছিলেন এটা অসম্ভব। সেই অসম্ভবকে সম্ভব করল বাংলাদেশ। পদ্মা সেতুর কারণে দেশের দক্ষিণ এবং দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হলো। প্রমত্ত পদ্মার বুকে হেসে উঠেছে পদ্মা সেতু। এ এক স্বপ্নের বাস্তবায়ন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দল। জনগণের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতাও বেশি। তাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। তাদের প্রতি মানুষের প্রত্যাশাও বেশি থাকে। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগের কাছে প্রত্যাশা অনেক। সব তো আর পূরণ করা সম্ভব নয়। দীর্ঘদিন দল ক্ষমতায় থাকার কারণে অনেকেই দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন, এটাও সত্য। এসব কর্মকাণ্ডে দল যেমন বিব্রত হচ্ছে তেমনি সরকারের ভাবমূর্তিও নষ্ট হচ্ছে। আমাদের এই অর্জনকে বিতর্কিত করছেন সামান্য কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী। আমরা যদি লোভ সংবরণ করতে পারি তাহলে জাতি হিসেবে আরো অনেক দূর যেতে পারব।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করেছে। বাংলাদেশের প্রতি এই দলের দায়িত্ব অনেক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাঙালির প্রাণের নেতা। তার সেই উদাত্ত আহ্বান, ‘আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি…’। বাঙালি তার কথা রেখেছিল। মুষ্টিমেয় সংখ্যক বাদে সবাই ছিলেন জাতিকে মুক্তির স্বাদ দেয়ার সংকল্পে বিভোর। বন-বনানী, পাহাড় ডিঙিয়ে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল বাঙালির একতাবদ্ধতায়। একাত্ম হয়েছিলেন স্বাধীনতা নামক সোনার হরিণ ধরতে। সেই সোনার হরিণ ধরা দিয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। বাঙালির হাজার বছরের লালিত স্বপ্ন ধরা দিয়েছিল জাতির পিতার নেতৃত্বে। শেখ মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা। একটি জাতির জন্ম। একটি রাষ্ট্রের জন্ম। আর এই জন্মের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক নিবিড়। অত্যন্ত গভীর সম্পর্ক। তাই প্রত্যাশার মাত্রাও বেশি জনতার। এটা স্বাভাবিক। জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা প্রবল। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন পিতার মতোই। বাংলাদেশকে তিনি অনেক কিছুই দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ দিয়েছে, দিচ্ছে। দেয়ার তো শেষ নেই। অনেক প্রতিকূল অবস্থা থেকে উঠে এসেছে। এদেশের মানুষের পাশে ছায়ার মতো আছে। জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর অনেকেই মনে করেছিলেন আওয়ামী লীগ হয়তো আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। কিন্তু তাদের সেই ধারণাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে দলের হাল ধরলেন শেখ হাসিনা। তখন জিয়াউর রহমান ক্ষমতায়। তার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশমাতৃকাকে ভালোবেসে চলে এলেন নিজভূমে। স্বাধীনতার শত্রæরা তখন একত্রিত। পথে পথে শ্বাপদের পদচারণা। তবুও তিনি দেশে এলেন। দেশের মানুষের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিলেন।
১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলো। শেখ হাসিনা হলেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের মানুষ আশায় বুক বাঁধল। অনেক প্রকল্প হাতে নিলেন। ২০০১-এর ১ অক্টোবর আবারো আওয়ামী লীগের পরাজয় (কৌশলে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করা হলো)। দেশে জঙ্গি উত্থান। অর্থনীতিকে ধ্বংস। বিদ্যুৎ খাতকে নিঃস্ব করে দেয়া, সবই করেছিল তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। ২০০৮ সালে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে আবারো ক্ষমতায় এলো আওয়ামী লীগ। আবারো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আবারো স্বপ্ন। বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন। মেট্রোরেল, উড়াল সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আর সবচেয়ে বড় স্বপ্ন পদ্মা সেতু। আমাদের টাকায় আমাদের সেতু। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু- যা গৌরবের স্মারক হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে পদ্মার বুকে। আমাদের এ এক বিরাট অর্জন।

ইমরান পরশ, কবি ও লেখক
ঢাকা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়