স্বপ্নজয়ের পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

আগের সংবাদ

হাওর জনপদে স্বাস্থ্যসেবা ‘নেই’

পরের সংবাদ

দুই পাড়ে লাখো মানুষের বাঁধভাঙা উচ্ছ¡াস

প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ছিল বাঁধভাঙা উচ্ছ¡াস ও উল্লাস। আনন্দে আত্মহারা হয়ে উৎসবে মেতে ওঠেন নানা বয়সি লাখো লাখো মানুষ। পাল্টে যায় পদ্মার দুপাড়ের চিরচেনা রূপ। মুন্সীগঞ্জ ও মাদারীপুর পদ্মা প্রান্তের মানুষের দিনের শুরুটা ছিল অন্যরকম। বহু যুগের, বহু কালের কাক্সিক্ষত সেতু পাওয়ার আনন্দে সবার চোখ-মুখে ছিল তৃপ্তির ঢেঁকুর। নানা রঙে রঙিন হয়ে ওঠে পদ্মা পাড়ের আকাশ। শিশু থেকে শুরু করে আবাল-বৃদ্ধবণিতা সবার চোখে-মুখে ছিল রঙিন আয়োজনের আমেজ। দৈনন্দিন সব কাজ ফেলে তারা সেতু উদ্বোধনের আয়োজনে শামিল হন। সেতুর দুই প্রান্তে আসা অনেকের হাতে ছিল বাঁশি। এক রকম গেঞ্জি পরে অনেকে দলবেঁধে আসেন অনুষ্ঠানে। শুধু পদ্মার দুপাড়েই নয়, সারাদেশেই ছিল বর্ণিল আয়োজন, গ্রাম থেকে শহরে হয়েছে দোয়া মাহফিল ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। একযোগে রঙিন আয়োজন ছিল বৃহত্তর সিলেট জেলা বাদে অন্য সব জেলায়। ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু পেয়ে যেন ঈদের আনন্দে মেতে ওঠে ২১ জেলার মানুষ। গতকাল শনিবার পদ্মা নদীর দুই তীরসহ সারাদেশের চিত্র ছিল এটি।
উদ্বোধনকালে বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার থেকে ফুল ছিটিয়ে জনসভায় আসা লোকজনকে অভিবাদন জানানো হয়। মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ীতে দুপুর ১২টায় পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে সমাবেশ শুরু হয়। ভোরের আলো

ফুটতে না ফুটতেই সাধারণ মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে জনসভাস্থল। দক্ষিণের নানা প্রান্ত থেকে দলে দলে মানুষ আসেন সমাবেশস্থলে। বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেল- যে যেভাবে পারেন দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন। নানা রঙের টি-শার্ট ছিল তাদের গায়ে। ঢাক-ঢোল ও বাঁশি বাজিয়ে আসেন তারা। নাচতে নাচতে, মিছিল করতে করতে আসেন তারা। অনেকের হাতে ছিল ব্যানার ও ফেস্টুন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষে পদ্মা তীরের ৬ কিলোমিটার এলাকা পরিপূর্ণ হয়ে যায়। নৌকা মাথায় নিয়ে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ীতে আওয়ামী লীগের জনসভাস্থলে হাজির ছিলেন ভৈরবের নুরুল ইসলাম।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর জাজিরা প্রান্তে লাখো মানুষের সমাবেশে বাবার সঙ্গে স্কুল শিক্ষার্থী জান্নাতুল নাঈম পিয়াও ছিল। মাদারীপুরের শিবচর থেকে তৃতীয় শ্রেণির এই শিক্ষার্থী এসেছিল বাবার হাত ধরে। প্রতিক্রিয়ায় পিয়া বলে, খুবই ভালো লাগছে। এত মানুষ এখানে। ঈদের মতো খুশি লাগছে। পিয়ার বাবা ফজলু কবীর বলেন, মাদারীপুরের বাসিন্দাদের জন্য আজকে সত্যিই ঈদ। এই সেতু আমাদের জন্য স্বপ্ন ছিল। শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ঘড়িসার থেকে আসা একজন উচ্ছ¡সিত কণ্ঠে বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হচ্ছে- এর চেয়ে খুশির দিন আমাদের কাছে আর কী হতে পারে। পিরোজপুর থেকে উদ্বোধন দেখতে আসা সাইদ শিকদার বলেন, পুরো দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ এখানে এসেছেন তাদের স্বপ্নকে সামনা-সামনি বাস্তবায়ন হতে দেখার জন্য। প্রধানমন্ত্রীকে অনেক ধন্যবাদ। তিনি পেরেছেন।
এদিকে অনুমতি না থাকলেও প্রধানমন্ত্রী সেতু উদ্বোধন করার পর দুপুর ১টার দিকে মাওয়া প্রান্তে অসংখ্য মানুষ ঢুকে পড়ে সেতুতে। জাজিরা এলাকার উৎসুক জনতা উল্লাসে ফেটে পড়েন। প্রায় এক ঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। উৎসুক সাধারণের সেতু থেকে নামানোর জন্য লাঠিপেটাও করে তারা। প্রধানমন্ত্রী সেতু পার হওয়ার পর আওয়ামী লীগ নেতাদের বহনকারী কিছু বাসও পার হয়।
দুপুর ১টার দিকে সেতুর উল্টো পথের মুখ থেকে পুলিশ পাহারা কিছুক্ষণের জন্য শিথিল ছিল। এই সুযোগে বেশ কিছু মোটরসাইকেল ও কয়েকটি মাইক্রোবাস সেতুতে উঠে পড়ে। এর সঙ্গে সঙ্গে কোথাও নিরাপত্তাবেষ্টনী টপকে, কোথাও ভেঙে, আবার কোথাও বেষ্টনীর নিচের মাটি সরিয়ে উৎসুক জনতা সেতুতে ঢুকে পড়ে। মুহূর্তেই মাওয়া প্রান্ত থেকে পায়ে হেঁটে জাজিরা প্রান্তে ছুটতে থাকেন তারা। একই সময়ে সেতুতে উঠে সেলফি তোলা, ভিডিও ধারণ থেকে শুরু করে মাওয়া প্রান্তের ইলিশ ফোয়ারায় নেমে হাত-মুখ ধোঁয়া শুরু করেন তারা। সেতু বুঝি খুলে দিল সরকার। এমন বিভ্রান্তিতে পড়ে খাবার ও খেলনা বিক্রি করতেও সেতুতে উঠে পড়েন হকাররা। সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিতে একযোগে কাজ শুরু করে র‌্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। তারা সেতু থেকে বাহন ও মানুষ নামাতে লাঠিচার্জও করে। বাহিনীর সদস্যদের প্রতিরোধের মুখে ফিরে আসে উৎসুক জনতা ও বাহনগুলো। সেতুতে ওঠা বরিশালের তরুণ শামীম আহমেদ বলেন, বেলা ১১টা থেকে সেতুর টোল প্লাজার সামনে ছিলাম। তখন সেখানে হাজার হাজার মানুষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টোল দেয়ার পর সবাই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সেতুর উপরে উঠে যান। তাদের দেখাদেখি আমিও সেতুতে উঠি। সেতুর উপরে অনেক উল্লাস করেছি। সবাই চিৎকার দিয়ে জয় বাংলা বলেছি।
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থেকে আসা সাইদুল ইসলাম বলেন, যেভাবেই হোক প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরপরই সেতুতে উঠতে পেরেছি। এর চেয়ে আনন্দের আর কিছুই নেই। তবে সেতুতে ওঠায় পুলিশ তাদের সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করেছে। আজকের দিনে পুলিশ এমন না করলেও পারত বলে জানান তিনি।
পদ্মা সেতুতে চড়ে মার খেয়ে ফিরেছেন মিন্টু ও তার বন্ধুরা। মিন্টু বলেন, ‘যহন দেখলাম একটা দুইডা গাড়ি যাইতাছে, তখনই ঠিক করলাম, যেমনেই হোক বিরিজে (ব্রিজ) উঠমু। আমরা তারের বেড়ার উপর দিয়া বিরিজে উঠলাম। বহুত মজা করছি, ভাবছিলাম ওই পাড় যামুগা। কিন্তু অর্ধেক বিরিজে যাওয়ার পর র‌্যাব পুলিশ আইসা লাঠি দিয়া মাইর শুরু করল। এমন মাইর দিছে শরীর ফুলাইয়া ফেলছে। মাইর খাইলে খাইছি কোনো সমস্যা নাই, বিরিজে তো উঠছি।’ উজ্জ্বল নামের আরেক মধ্যবয়সি বলেন, ‘সবার দেখাদেখি শখ কইরা গেলাম বিরিজে, পুলিশ পিটাইয়া লাল কইরা দিল। কামডা ঠিক করল না।’ পদ্মা সেতুর উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, হঠাৎ করে সেতুর সীমানা প্রাচীর টপকে মানুষ ঢুকে পড়ে। আমরা অল্প সময়ের মধ্যেই সেই ক্রাউড কন্ট্রোল করি।
এ বিষয়ে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীর মোহম্মদ পাশা বলেন, সেতুতে গাড়ি ও মোটরসাইকেল কীভাবে উঠল, এ বিষয়ে আমার কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। আমাদের সেতুর সব (জন¯্রােত) কন্ট্রোল করতে বলা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে দুই প্রান্ত থেকে আমরা অ্যাপ্রোচ নিয়ে সব কন্ট্রোল করি। গাড়ি মোটরসাইকেল বা মানুষ কোনোটিকেই আমরা সেতু অতিক্রম করতে দেইনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়