পদ্মা সেতু উদ্বোধন : বুয়েটে ক্লাস বন্ধ থাকবে ২৫ জুন

আগের সংবাদ

বর্ণিল উৎসবে খুলল দখিন দুয়ার

পরের সংবাদ

বিস্ময় আর বিস্ময়ভরা পদ্মা সেতু

প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পদ্মা সেতুর ধারণাটা বেশ পুরনো। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের মেনিফেস্টোতে আওয়ামী লীগ তা অন্তর্ভুক্ত করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের পর প্রধানমন্ত্রিত্বকালে বঙ্গবন্ধু এই ধারণাটা বাস্তব রূপ দিতে চেষ্টিত ছিলেন। দেশের অবর্ণনীয় দুর্দশার লাঘবে সীমিত সম্পদ নিয়ে বঙ্গবন্ধু ব্যস্ত থাকলেও তিনি যমুনা ও পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা ভুলে যাননি। কিন্তু সেসব বাস্তবায়নের সুযোগ ঘাতকরা তাকে দেয়নি। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতের পর প্রায় ২১ বছর পর প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা যমুনা সেতুর অসমাপ্ত কাজ শেষ করেন ১৯৯৮ সালে। একই সঙ্গে তিনি পদ্মা সেতুর কথা ভাবতে থাকেন এবং ১৯৯৮-৯৯ সালে প্রাক সম্ভাবনা বা চৎব-ভবধংরনরষরঃু ংঃঁফু সমাপ্ত করেন।
২০০১ সালে তিনি মাওয়া-জাজিরায় প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০০৩-০৫ সালে জাইকা তার চূড়ান্ত ফিজিবিলিটি স্টাডি সমাপ্ত করে। ফিজিবিলিটি স্টাডি বা সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মূল চিন্তা ছিল সেতুর জন্য সর্বাধিক যোগ্য স্থান নির্ধারণ ও তা কীভাবে করলে সর্বাধিক মুনাফা বা উপকার আসবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত। সার্বিক বিবেচনায় অর্থাৎ নদীর গভীরতা, ভাঙনের প্রবণতা, মাটি সরে যাওয়ার প্রবণতাও চূড়ান্ত উপকারিতা বিশ্লেষণে মাওয়া জাজিরাকে নির্বাচন করা হয়। ২০০৬ সালে ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনা পরীক্ষা চূড়ান্ত হয়।
২০০৭ সালে প্রস্তাবিত সেতুর লক্ষ্য প্রণয়নের জন্য ৬ জন দাতার মধ্য থেকে নিউজিল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান মনসেল, কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান নর্থ-ওয়েস্ট হাইড্রোনিক ও অস্ট্রেলিয়ার প্রতিষ্ঠান স্মাক পরামর্শক নির্বাচিত হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে শেখ হাসিনা সরকার এডিবি ও সরকারের অর্থে বিস্তারিত ডিজাইন ও প্রকিউরমেন্ট পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে (২০০৯-১১)। এডিবি ও বিশ্বব্যাংককে অর্থায়নে আমন্ত্রণ জানালে উভয়ই তা প্রথমে প্রত্যাখ্যান করে। এডিবি কোনো কারণ উল্লেখ না করলেও বিশ্বব্যাংক লিখিত জবাবে সম্ভাব্য পরিবেশের ব্যাপক প্রভাব, অজ্ঞাত প্রযুক্তি জটিলতা, ব্যয় অত্যধিক ইত্যাদি বলে প্রকল্পে অংশগ্রহণে অপারগতা জানায়। আসল কারণটি মনে হয় প্রচ্ছন্ন বা লুকায়িত ছিল। বিশ্বব্যাংকের কর্মকাণ্ড ও সাম্প্রতিক তথ্যে প্রমাণিত হয় যে বিশ্বব্যাংক শেখ হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন ঠেকাতে তৎপর ছিল। কিন্তু যখন দেখল যে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা ছাড়াও বাংলাদেশ সে প্রকল্প সমাপ্ত করতে হয়তো পারবে তখন বিশ্বব্যাংক সর্বোচ্চ অর্থায়নকারী হিসেবে সবাইকে ডিঙ্গিয়ে প্রকল্পে যুক্ত হয়। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় সেতুমন্ত্রী ছিলেন সৈয়দ আবুল হোসেন আর সচিব ছিলেন মোশাররফ হোসেন ভূইয়া। তাদের প্রকল্পে জড়াবারই কথা, কিন্তু বিশ্বব্যাংকের অনুরোধে প্রধানমন্ত্রীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানকে প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়। তারা ২০১০ সালের মাঝামাঝি সেতুর ড্রইং শুরু করে এবং ১০ সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেলে মতামতের ভিত্তিতে ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে ডিজাইন প্রায় চূড়ান্ত হয়। প্রাক-যোগ্যতা নির্ধারণের জন্য সরকার আরো একটি কমিটি গঠন করে, যাদের সুপারিশমালা বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাইকা অনুমোদন করে। তবে সরকার যখন চুক্তির সর্বশর্ত পালন সমাপ্ত করেছে, সে সময়ে ২০১২ সালের জুন মাসে বিশ্বব্যাংক একতরফা ঘোষণা দিয়ে প্রকল্প থেকে হাত গুটিয়ে নেয়।
বিশ্বব্যাংক পকেটে বসেই পকেট কাটতে চেয়েছিল বিধায় এবং সহযোগীদের নিয়ে এক সঙ্গে প্রকল্প থেকে হাত গুটিয়ে নিলে জেদি ও দূরদর্শী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অর্থেই সে প্রকল্প বাস্তবায়নে উদ্যোগী হলেন। সেটা জুলাই ২০১২ সালের কথা। সেই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বিস্ময়করভাবে বিশ্বব্যাংক পদ্মা প্রকল্পের অর্থায়নে ফিরে আসতে চায় এবং এমন সব শর্তাবলি দেয় যা কোনো মর্যাদাবান স্বাধীন সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রের পক্ষে মেনে নেয়া যায় না।
ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংক ও তার সাঙ্গাতরা এমন কোনো কাজ বাকি রাখেনি যাতে সাধারণভাবে উপলব্ধি হতে পারত যে তাদের আনীত দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত। কিন্তু বিধিবাম; তারা দেশে ও কানাডায় প্রমাণে অক্ষম হলো যে এই প্রকল্পে না দুর্নীতি না দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে। জনমনে ধারণা হলো যে বিশ্বব্যাংকই বাংলাদেশ ও তার সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে। তদন্ত, কাদা ছোড়াছুড়ি ও মামলা মোকদ্দমার মাঝেও ১৭ জুন ২০১৪ সালে প্রকল্পের মূল সেতুর কাজটি চায়না মেজর ব্রিজ কনস্ট্রাকশন কোম্পানিকে দেয়া হয়; যারা একই বছরের ২৬ ডিসেম্বর প্রকল্পের মূল নির্মাণ কাজ শুরু করে। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর অতি প্রত্যাশিত সেতুর কাজ মাওয়া প্রান্তে উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। দেশে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়। প্রকল্পের কাজে তারপরও বহু প্রাকৃতিক, প্রযুক্তিগত ও মানবসৃষ্ট বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে ২০২১ সালেই তা সম্পন্ন হয়েছে। খুঁটিনাটি সব কর্ম সম্পাদন ও প্রতিবন্ধকতা সমাধা করে আজ ২৫ জুন ২০২২ সালে তা উদ্বোধন হচ্ছে।
পদ্মা বহুমুখী সেতুটি ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সঙ্গে স্বীয় অর্থে প্রকল্প বাস্তবায়ন চুক্তি ২০১৪ সালে করা হয়। শুরুতে তার ব্যয় ১.৬ বিলিয়ন ধরা হলেও সমাপ্তিতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩.২০ বিলিয়ন ডলার। এত ব্যয়ের কারণ যা ইতোমধ্যে সারা জাতি ও বিশ্ব জেনেছে, উদাহরণও দেখেছে। সানফ্রানসিসকো বে ব্রিজ নির্মাণ শুরু হয় ১৯৯৯ সালে, যখন তার ব্যয় ধরা হয়েছিল এক বিলিয়ন ডলার। এই প্রকল্পটি ২০১৩ সালে সমাপ্ত হলে তার ব্যয় দাঁড়ায় ৬.০৫ বিলিয়ন ডলার। পদ্মায় পানির নিচে প্রায় ৪০ তলা ভবনের সমান পাইলিং করে নির্মিত এই সেতুতে ৪২টি পিলারের ওপর ৪১টি স্প্যান বসানো হয়েছে। প্রতিটি স্প্যান ১৫০ ফিট দৈর্ঘ্যরে বলে সেতুর দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৬.১৫ কিলোমিটার। দুই স্তরবিশিষ্ট সেতুর উপরের স্তরে আছে ২২ মিটার প্রস্থের চারলেনের সড়ক এবং নিচের স্তরে নির্মাণ করা হচ্ছে ব্রডগেজ সিঙ্গেল লাইন রেলপথ। সেতুর দুই প্রান্তে উড়াল পথ, রেলওয়ের জন্য উড়াল পথ, সংযোগ সড়ক এবং সেতুতে রয়েছে গ্যাস, টেলিফোন ডাক্ট, সেতুর ভাটিতে তৈরি হচ্ছে হাই ভোল্টেজ বিদ্যুৎ লাইন। এছাড়া সেতুর দুপাশে টোল প্লাজা, পুলিশ স্টেশন, সেনাবাহিনীর অবস্থান, সার্ভিস এরিয়া, জরুরি সহায়তা কেন্দ্র, বক্স কালভার্ট, আন্ডার পাসসহ অন্যান্য সুবিধাদি। তাছাড়া আছে নদী শাসনের জন্য স্থায়ী অফিস, যা চলবে সেতুর আয়ুষ্কাল অর্থাৎ ১০০ বছর ধরে। স্পষ্টত সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই, সংযোগ সড়ক নির্মাণ, মূল সেতু প্রকল্প, নদী শাসন এবং নিবিড় দেখভাল যার জন্য খরচ হয়েছে সর্বমোট ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। রেললাইনসহ দ্বিতল সেতুর নির্মাণ ব্যয় হয়েছে ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা, ১৪ কিলোমিটার নদী শাসনে আপাতত ব্যয় হয়েছে ৯৪০০ কোটি টাকা, পুনর্বাসনে ১৫০০ কোটি টাকা, ২৭০০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণে ২৭০০ কোটি টাকা, ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ ছয়লেন বিশিষ্ট সড়ক সংযোগ নির্মাণে ১৯০৭ কোটি, পরামর্শক, সেনা নিরাপত্তা কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড ও অন্যান্য ব্যয় ২৫০০ কোটি টাকা।
পদ্মা সেতুতে ২৯৪টি পাইল রয়েছে। এসব পাইলের গড় গভীরতা ১২২ মিটার অর্থাৎ প্রায় ৪০ তলা ভবনের সমান। নদীর তলদেশের মাটির অবস্থা খারাপ হওয়ায় ২২ পিলারের ৭১টি পাইলে স্কিন গ্রাউট করতে হয়েছে। পদ্মা সেতু খরস্রোতা বিচারে বিশ্বে দ্বিতীয়, পানি প্রবাহের দিক থেকে শীর্ষ। মাটির অবস্থা বিবেচনায় রেখেই এত গভীরে ফাইলিং করতে হয়েছে। পাইলের ওপর প্রতিটিতে ১০ হাজার ৫০০ টন সহনশীল বেয়ারিং বসানো হয়েছে; যা একটি বিশ্বরেকর্ড।
পদ্মার তলদেশের মাটি বালি ও নরম কাদা টাইপ। শক্ত মাটি বা বেডরক পেতে ৮ কিলোমিটার নিচে যেতে হবে, যা ছিল অসম্ভব। বর্ষাকালে যখন অতিরিক্ত স্রোত থাকে, এই পদ্মার তলদেশের বালির মতো মাটি ধুয়ে চলে যায়; যার সর্বোচ্চ রেকর্ড হচ্ছে ৬৫ মিটার; মানে ২১৩ ফিট মানে ২১ তলা বিল্ডিংয়ের উচ্চতা। এই মাটি ধুয়ে যাওয়ায় বা সরে যাওয়ার ব্যাপারে পদ্মা বিশ্বে সর্বপ্রথম। সে কারণে প্রতিটি কলাম হতে হবে কমপক্ষে ১০৫ মিটারের মতো। কিন্তু সতর্কতাবসত সেগুলো করা হয়েছে গড় ১২০ মিটার। পাইলগুলো বানানো হয়েছে স্টিলের পাত দিয়ে যার ঘনত্ব হচ্ছে প্রায় ৬৫ মিলিমিটার এবং ফাইলগুলো সিলিন্ডারের মতো; যার ব্যাসার্ধ হচ্ছে তিন মিটার। এই পাতগুলোকে মুড়িয়ে সিলিন্ডার বানানো হয়েছে। এই ফাইলগুলোর জন্য জার্মানি থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হ্যামার আনা হয়েছিল। এই ফাইলগুলো ফাঁপা এবং মাটিতে বসানোর পর সেগুলোকে বালি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। পাইলগুলোতে জং ধরতে পারে তবে তা ১০০ বছরে মাত্র ১০ মিলিমিটার ক্ষয় হবে। পাইলের নিচের মাটি যাতে সরে না যায় বা ভেঙে না যায়, তাই প্রতিটি কলাম বা পিয়ারে ৬টা করে পাইল রয়েছে। পাইলগুলো খাড়াখাড়ি না বসিয়ে কিছুটা হেলান দেয়া অবস্থায় বসানো হয়েছে; যার ফলে বালি সরে যাওয়া বন্ধ হবে এবং তাদের লোড বা বহন ক্ষমতাও বাড়বে। লোড বহন ক্ষমতা বাড়াতে প্রতি দুটো পিলারের মাঝে ট্রাস বা সোজা বাংলায় ত্রিভূজাকৃতি বহু ঠেকা দেয়া হয়েছে।
পদ্মা সেতুর রেললাইনে মিটারগেজ ও ব্রডগেজ গাড়ি চলবে, ভূমিকম্প নিরোধ ব্যবস্থা এমনভাবে নেয়া হয়েছে যাতে ভূমিকম্পে ফাউন্ডেশন মুভ করবে কিন্তু উপরের ব্রিজটা মুভ করবে না। ব্রিজের ওপর দিয়ে কিছু অত্যাবশ্যকীয় সেবাসমূহ নদী পার হবে।
এই প্রকল্পে অতি জটিল ও সমধিক জটিল কাজটি হলো নদী শাসন। নদী শাসনে বা নিয়ন্ত্রণে রাখা না গেলে এক সময় দেখা যাবে সেতুর জায়গায় সেতু রয়ে গেছে, নদী সরে গেছে। নদী শাসনের মূল কাজটা হচ্ছে ব্রিজের তলদেশ দিয়ে যাতে আগামী ১০০ বছরে প্রতি সেকেন্ডে ১ লাখ ৪০ হাজার ঘনলিটার পানি সাগরে চলে যেতে পারে। এটা বাধাগ্রস্ত হলে উজানে ভেঙে যাবে, সেতুর ওপর চাপ পড়বে অথবা আশপাশে পানি জমে নদীর গতিপথ বদলিয়ে দিয়ে সেতুর কার্যকারিতা নিষ্ফল করবে। নদী শাসনের বড় কাজটা হচ্ছে ড্রেজিং বা পলিমাটি বা বালি নিষ্কাশন। ইতোমধ্যে মাওয়া প্রান্তে ১০ মিলিয়ন কিউবিক মিটার আর জাজিরার প্রান্তে ৪০ মিলিয়ন কিউবিক মিটার বালি নিষ্কাশন করা হয়েছে। নদী শাসনের অন্য দিকটা হচ্ছে কিনারা ভাঙা রোধে পাথর, কংক্রিট ব্লক, জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ব্যবহার করা; তাও করা হয়েছে। এরপর তীক্ষè নজর ও ব্যবস্থা দিতে হবে যাতে মাটি সরে না যায়। নদী শাসন প্রকল্প প্রায় ১০০ বছরই সচল রাখতে হবে। সেতুর তলদেশ দিয়ে যাতে জলজান নির্বিঘেœ যাতায়াত করতে পারে তজ্জন্য সুদীর্ঘ স্প্যানসহ পানি থেকে ব্রিজের উচ্চতা ১৮.৩ মিটার রাখা হয়েছে।
এসবের কারণে আমি পদ্মা সেতুকে বিস্ময়কর পদ্মা সেতু বলছি। তার ধারণা, তার ফিজিবিলিটি স্টাডি, ডিজাইন, অর্থায়ন ও অর্থায়ন নিয়ে স্বীয় আধিপত্য বিস্তার, তার প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য সবই বিস্ময়ে ভরা। কেউ কেউ এটাকে আমাদের গর্বের সেতু বলছেন, সক্ষমতার পরিচায়ক বলছেন, শেখ হাসিনার অনন্য নেতৃত্বের এবং অভঙ্গুর ব্যক্তিত্বের প্রতিচ্ছবি বলেন, একটা মধুর প্রতিশোধও বলতে পারেন। তবে চূড়ান্ত বিশ্লেষণে পদ্মা সেতু বিস্ময় আর বিস্ময়ে ভরা।
কারণ দেশের প্রারম্ভিক দৈন্যদশার মধ্যেও এই অতি প্রয়োজনীয় সেতুটির কথা জাতির পিতা ভোলেননি। বহু বছর পর হলেও তার সুযোগ্যকন্যা তা ভোলেননি। তাই তো প্রথম সুযোগেই তিনি পদ্মার সম্ভাব্যতা যাচাই সমাপ্ত করে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। অর্থ দাতাদের ভানুমতির খেলা, তেলেসমাতি ও ষড়যন্ত্রের জবাবে স্বীয় অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণে অটল থেকেছেন। শত প্রতিকূলতার মাঝেও সহকর্মীদের রক্ষায় অনড় ছিলেন। বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তাদের যাকে যেখানে নির্বাচিত করে বসিয়েছিল, তাকে বা তাদের সেখানে রেখে দেয়া হয়েছিল, যার সুফল প্রকল্প পেয়েছে। পদ্মা সেতুর ফলে দেশের জিডিপি আগামী ৫ বছরে ৬৩ লাখ কোটি টাকায় উন্নীত হবে। যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে তা ৩০ হাজার কোটি টাকায় সৃষ্ট হতো কিনা সন্দেহ। আরো বিস্ময় অপেক্ষা করছে। আশা করতে দ্বিধা নেই যে দ্বিতীয় পদ্মা সেতুটিও শেখ হাসিনার কালেই কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও উপাচার্য, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়