পদ্মা সেতু উদ্বোধন : বুয়েটে ক্লাস বন্ধ থাকবে ২৫ জুন

আগের সংবাদ

বর্ণিল উৎসবে খুলল দখিন দুয়ার

পরের সংবাদ

পদ্মা সেতু নির্মাণ করে আমরা সক্ষমতার জানান দিয়েছি : অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দেব দুলাল মিত্র : যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক বলেছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ দাতাগোষ্ঠীর ইচ্ছার বাইরে এসে নিজেদের অর্থনৈতিক ও কারিগরি সক্ষমতার জানান দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতু দূরের জেলাগুলোর দূরত্ব কমিয়েছে। অন্যদিকে পদ্মা সেতু কাছের ও দূরের জেলারগুলোর মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনে বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে। পদ্মা সেতুর দ্বার খুলে যাওয়ায় আমি খুবই খুশি। গতকাল শুক্রবার ভোরের কাগজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
পদ্মা সেতুর অর্জন তুলে ধরে অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে আমাদের অনেকগুলো অর্জন হয়েছে। বড় মাপের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যেতে হলে নিজের সক্ষমতা থেকেই যেতে হবে। আগে অবকাঠামোগুলো দাতাগোষ্ঠীর ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল ছিল। এখন সেই জায়গায় আমরা নিজেদের সক্ষমতা অর্জন করেছি। এতো বড় মাপের একটি সেতু গুণগত মান বজায় রেখে নিজস্ব কারিগরি দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে, যা ভবিষ্যতে এ ধরনের বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন ও টেকসই উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পদ্মাসেতু নির্মানের মাধ্যমে আমরা একদিকে অর্থায়নে সক্ষমতা দেখিয়েছি, অন্যদিকে কারিগরি পর্যায়ে দক্ষ জনশক্তি তৈরী করতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি বলেন, অর্থায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নের একটা বাঁধা ছিল। পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে আমরা জানিয়ে দিলাম বাংলাদেশের উন্নয়নে কোনো বাঁধাই কাজে আসবে না। আত্মমর্যাদার জায়গায় বাংলাদেশের অবস্থান দেশে এবং বিদেশে অন্যমাত্রায় ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে উপ আঞ্চলিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে কোনো উন্নয়ন প্রকল্পে দর কষাকষির জায়গায় নিজেদের ইচ্ছের প্রতিফলন ঘটাতে পারব। পুরো বিশ্ব দেখল দাতাগোষ্ঠীর অর্থায়ন ছাড়াও বাংলাদেশ এখন বড় অবকাঠামো নির্মাণে সফল হতে পারে। বাংলাদেশকে মূল্যায়নে পূর্বের প্রতিবন্ধকতা আমরা ভেঙে দিয়েছি।
অর্থনীতির উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উত্তরাঞ্চলে উন্নয়নের ছোঁয়া দেয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু সেতু তৈরি হয়েছে। ২৫ বছর পর অর্থনৈতিক অবস্থা এমন জায়গায় এসেছে যে আমাদের বড় মাপের উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে, বড় ধরনের কাজ করার মতো বিনিয়োগকারী রয়েছে। পদ্মা সেতু কাছের ও দূরের জেলারগুলোর মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করেছে। বিনিয়োগকারীরা অর্থনৈতিকভাবে বিনিয়োগের আবেদন সৃষ্টিকারী পরিবেশ পেয়ে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান তৈরি করবে। মানুষের কর্মসংস্থান হবে। কর্মসংস্থানের কারণে অর্থনীতি আরো চাঙ্গা হবে।
তিনি বলেন, এই সম্ভাবনা বাস্তবায়নে পদ্মা সেতুর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ করিডরকে অর্থনৈতিক করিডর করতে হবে। ২১টা জেলার ওপর নজর দিয়ে স্মার্ট সিটি করতে হবে। প্রতিটি জেলায় শিল্পায়নের পাশাপাশি নগরায়ণও হবে। ঢাকা দিন দিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তাই এই নগরগুলোকে যদি আমরা একবিংশ শতাব্দীর স্মার্ট সিটির আদলে গড়ে তুলতে পারি, তাহলে মানুষ এলাকামুখী হবে এবং ঢাকা আবার বসবাসের যোগ্যতা অর্জন করবে। এই সেতু ব্যবহার করে উভয়দিকে অর্থনৈতিক করিডর করতে ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’-এই মূলমন্ত্র সামনে রেখে মাস্টারপ্ল্যান করতে হবে। ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জে এই ধরনের প্ল্যান নিয়ে কাজ করার সুযোগ এখন আর নাই।
যোগাযোগ ও উন্নয়নে পদ্মা সেতুর ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যোগাযোগের ক্ষেত্রে পদ্মা সেতু একা কিছু করতে পারবে না। পদ্মা সেতুর যোগাযোগের ক্ষেত্রে সার্বিকভাবে যদি উপযোগিতা তৈরি করতে হয় তাহলে সম্পূরক কিছু প্রকল্প নিতে হবে। সেতু উদ্বোধনের পর ঢাকার ওপর চাপ বাড়বে। সেতুর সঙ্গে কানেকটিং নেটওয়ার্কগুলো ঢেলে সাজাতে হবে। আশপাশে রিংরোড করতে হবে।
রিংরোডের সমীক্ষাগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। চাঁদপুর ও শরীয়তপুরের মাঝে মেঘনা সেতু নির্মাণ করা খুবই জরুরি। আঞ্চলিক ও উপআঞ্চলিক সংযোগ সড়ক ও সেতু নির্মাণ করতে হবে।
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের উদাহরণ টেনে অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে যোগাযোগ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে কাজ করার সুবাদে মহাসড়কগুলো দেখে মর্মাহত হতাম। একই রাস্তায় সব যানবাহন চলছে। কিন্তু দেশের সবগুলো মহাসড়ক যদি ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের মতো মানদন্ডে নিয়ে যেতে পারি তাহলেই যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। দুই লেনকে চার লেনে, চার লেনকে ছয় লেনে নিয়ে যাওয়ার মধ্যে মেধা বা বুদ্ধিমত্তার কিছুই নেই। তখন এক্সপ্রেসওয়ে করার পরামর্শ দেয়া হয়। সবাই সুফল পাচ্ছে। ভবিষ্যতে দেশের সব মহাসড়ককে এক্সপ্রেসওয়ে হিসাবে গড়ে তুলতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়