পদ্মা সেতু উদ্বোধন : বুয়েটে ক্লাস বন্ধ থাকবে ২৫ জুন

আগের সংবাদ

বর্ণিল উৎসবে খুলল দখিন দুয়ার

পরের সংবাদ

কোভিড-১৯ পরিস্থিতি : সামাজিক সংক্রমণ শুরু, ঈদের পর সংক্রমণ চূড়ায় উঠতে পারে

প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সেবিকা দেবনাথ : দীর্ঘদিন নিয়ন্ত্রণে থাকার পর আবারো ফুঁসে উঠছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। চলতি মাসের শুরু থেকেই আবারো ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ভাইরাস। সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কার কথা আগেই প্রকাশ করেছিলেন জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটিসহ বিশেষজ্ঞরা। ভারত, চীন, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডেও এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বুস্টার ডোজ নিয়েও মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে গত ২২ জুন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে সংস্থার সর্বশেষ সাপ্তাহিক বিশ্লেষণ বলছে, ইউরোপ, আমেরিকা, পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ বেড়েছে। তবে বাংলাদেশের মতো কোথাও বাড়েনি। এক সপ্তাহে বাংলাদেশে শনাক্ত বেড়েছে ৩৫০ শতাংশ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী, সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের বেশি হলে সংক্রমণ ‘পরবর্তী ঢেউ’ এর দিকে আর ৫ শতাংশের নিচে নামলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ধরা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩ সপ্তাহ ধরে সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হারও ৫ শতাংশের বেশি ধরা পড়ছে। গত ২০ জুন দেশে শনাক্তের হার ছিল ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এরপর থেকে সংক্রমণের হার বেড়েই চলছে। সংক্রমণের এমন ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা এবং অধিকাংশ রোগী ঢাকায় শনাক্ত হওয়ার তথ্য ইঙ্গিত দিচ্ছে ভাইরাসটির সামাজিক সংক্রমণ আবারো শুরু হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামে ভাইরাসটির সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়েছে। অন্যান্য এলাকায় গুচ্ছ সংক্রমণ হচ্ছে। দৈনিক শনাক্তের সংখ্যাটি আরো বেশি। কারণ, অনেকের উপসর্গ থাকলেও পরীক্ষা করাচ্ছেন না। রোগতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী ১ জন রোগী শনাক্ত হলে অন্তত ৫ জন শনাক্তের বাইরে থাকেন। এ হিসাবে অনেক সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্তের বাইরে রয়েছেন। কিন্তু বড় একটি জনগোষ্ঠী টিকা নেয়ায় মারাত্মক আক্রান্ত কম হচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যু কম হচ্ছে। তবে যে হারে রোগী বাড়ছে তাতে আগামী ২ থেকে ৩ সপ্তাহের মধ্যে দৈনিক মৃত্যু ৩ থেকে ৫-এর ঘরে চলে যাবে। এটি প্রতিরোধে এখনই স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং টিকা নেয়া জরুরি বলে মত বিশেষজ্ঞদের। গতকাল শুক্রবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ হাজার ৮৩৩টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৬৮৫ জন। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১২ দশমিক ১৮ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় কারো মৃত্যু হয়নি। মোট শনাক্ত ১ হাজার ৬৮৫ জনের মধ্যে ১ হাজার ৫৮৪ জনই ঢাকা বিভাগের। এর মধ্যে ১ হাজার ৫১১ জন ঢাকা (মহানগরসহ) জেলাতে শনাক্ত হয়েছেন। অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার ৯ হাজার ২১৪ টি নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্ত হন ১ হাজার ৩১৯ জন। ১ জনের মৃত্যু এবং শনাক্তের হার ছিল ১৪ দশমিক ৩২ শতাংশ।
এদিকে দেশে এখন ওমিক্রনের নতুন উপধরন বিএ.২ এর প্রাধান্য দেখা গেছে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর), আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি), ইনস্টিটিউট ফর ডেভেলপিং সায়েন্স এন্ড হেলথ ইনেশিয়েটিভস, চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন (সিএইচআরএফ) এবং বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের করা এই গবেষণায় বলা হয়, ১ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত দেশে করোনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করে ওমিক্রনের বিএ.৫ উপধরন ৯ শতাংশ, বিএ.২ উপধরন দিয়ে ৯১ শতাংশ সংক্রমণ হয়েছে।
২১ জুন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারের একদল গবেষক যশোরের দুজন আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে সংগৃহীত ভাইরাসের আংশিক (স্পাইক প্রোটিন) জিনোম সিকুয়েন্স করে দেশে ওমিক্রনের নতুন উপধরন শনাক্তের বিষয়টি জানিয়েছেন। সেটি হচ্ছে বিএ.৪/৫। করোনার এই নতুন উপধরন শনাক্তের বিষয়ে যবিপ্রবির উপাচার্য ও জেনোম সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেছিলেন, আগামী দিনে ?এই উপধরনটি বর্তমানে সংক্রমণশীল অন্যান্য উপধরনের তুলনায় বেশি সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এছাড়া মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সহজেই ফাঁকি দিতে সক্ষম এই নতুন উপধরন।
আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, দেশে করোনা ভাইরাসের সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়ে গেছে। তবে এটি এখনো ঢাকা ও চট্টগ্রামেই। অন্যান্য এলাকায় গুচ্ছ সংক্রমণ হচ্ছে। আমাদের দৈনিক নমুনা পরীক্ষা কম হলেও শনাক্তের হার ৫-এর বেশি। আশঙ্কাজনক হলো, ওমিক্রনের মূল ধরনের চেয়ে এটি আরো দ্রুতগতিতে ছড়ায়। আমাদের দেশেও এমনটি হচ্ছে। সংক্রমণ দ্রুতই বাড়ছে। আবার দ্রুত তা নেমেও যাবে। সংক্রমণের গতিবিধি দেখে মনে হচ্ছে ঈদুল আজহার পর সংক্রমণ চূড়ায় উঠতে পারে। কিছু দিন স্থিতিশীল থাকার পর তা আবার নেমে যাবে।
সংক্রমণ প্রতিরোধ প্রসঙ্গে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, মানুষ এখন সংক্রমণকে ভয় পায় না। মাস্ক পরা মানুষ ছেড়েই দিয়েছে। মাস্ক শুধু করোনার সংক্রমণ থেকেই নয় মাঙ্কিপক্স থেকেও রক্ষা করবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়