র‌্যাব মহাপরিচালক : নাশকতার তথ্য নেই তবুও সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছি

আগের সংবাদ

বাংলাদেশের গর্ব, বিশ্বের বিস্ময় : জাতীয়-আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে যেভাবে ডানা মেলল স্বপ্নের পদ্মা

পরের সংবাদ

সাড়ে ৪০০ গরু, ৪ লাখ হাঁস-মুরগির মৃত্যু : বন্যায় সিলেট ও সুনামগঞ্জে প্রাণিসম্পদের ব্যাপক ক্ষতি

প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জাহিদুল ইসলাম, সিলেট ব্যুরো : একমাসের ব্যবধানে দুই দফা বন্যায় সিলেট ও সুনামগঞ্জে প্রাণিসম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্মরণকালের ভয়াবহ এই বন্যায় সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকায় তলিয়ে গেছে প্রায় সাতশ খামার। সামনেই কুরবানির ঈদ হওয়ায় বন্যার ক্ষয়ক্ষতির প্রভাব কুরবানির বাজারে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে সিলেট ও সুনামগঞ্জে কুরবানির পশু কীভাবে সরবরাহ করা হবে তার দিশা দেখাতে পারেননি সিলেটের প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
বন্যায় চারণভূমি তলিয়ে যাওয়ায় এবং মজুতকৃত দানাদার-অদানাদার খাদ্য নষ্ট হওয়ায় চরম খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হাঁস, মুরগি ও গবাদি পশুর খামারিরা। স্থানীয় খামার মালিকদের মতে, সরকারি সহযোগিতা ছাড়া এ সংকট থেকে উত্তরণের পথ নেই।
সিলেট ও সুনামগঞ্জের প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, সাম্প্র্রতিক ভয়াবহ বন্যায় সিলেট ও সুনামগঞ্জের অন্তত ৭০০টি খামার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছে ৪৪১টি গরু, ৪৩টি মহিষ, ৬৫২৫টি ছাগল, ৫৩১টি ভেড়া। এছাড়া প্রলয়ঙ্করী এই বন্যায় প্রায় ৪ লাখ হাঁস-মুরগি মারা গেছে। সব মিলিয়ে অন্তত ৫ কোটি টাকারও বেশি আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সিলেট ও সুনামগঞ্জের খামারিরা। অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করলে এই অঙ্ক আরো কয়েক কোটি টাকা বাড়বে।
সিলেট বিভাগের তিন জেলায় যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ক্ষতি হয়েছে সুনামগঞ্জে। বানের জলে দানাদার খাদ্য, খড় ও কচি ঘাস নষ্ট হয়েছে গেছে কয়েক কোটি টাকার। মানুষজন এখনো আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে না পারায় প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাচ্ছে না। সিলেট অঞ্চলের কুরবানির পশুর একটি বড় অংশ সুনামগঞ্জের বলে এবারের কুরবানির হাটে এর প্রভাব পড়বে।
বন্যার পানি না কমায় সৃষ্ট খাদ্য ও আশ্রয় সংকটের কারণে অনেকেই নামমাত্র মূল্যে গবাদি পশু বিক্রি করে

দিচ্ছেন। আবার অনেকেই সরকারি সাহায্যের আশায় গবাদি পশুসহ আশ্রয় কেন্দ্রসহ বিভিন্ন উঁচু এলাকায় অবস্থান করছেন। কিছু কিছু এলাকায় বন্যার পানি নেমে গেলেও এখনো গবাদি পশু নিয়ে চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন স্থানীয়রা।
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং ইউনিয়নের আব্দুল আহাদ বলেন, ৭টি গরু ছিল আমার। প্রথমদিন পানি বেড়ে যখন খড়ের গাদা আর গোয়ালঘর ডুবে গেল তখন চেষ্টা করেছি অন্য কোথাও সরিয়ে নিতে। তবে পানি এত দ্রুত বাড়ছিল যে বাধ্য হয়েই গরুগুলো পরিচিত একজনের কাছে বেচে দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, আমার নিজেরই আশ্রয় নেই। বউ ছেলেমেয়ে নিয়ে সাঁতরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে উঠেছি। নিজেদের খাবার সংকটের মধ্যে গরু-ছাগলের খাবার জোগাড় করব কীভাবে?
তিনি বলেন, পরিস্থিতি ভালো হলে এ বছর কুরবানিতেও আমি এই গরু বিক্রি করতাম না। কিন্তু বন্যার কারণে এছাড়া আর উপায় ছিল না। একই রকম ক্ষতির মুখোমুখি লেঙ্গুরা ইউনিয়নের আজাদ মিয়া, মাশুক উদ্দিন, মনাফ উদ্দিনসহ শতাধিক খামারি।
বন্যায় সবচেয়ে বেশি প্রাণিসম্পদের ক্ষতি হয়েছে সুনামগঞ্জ জেলায়। জেলার ১১ উপজেলায় অন্তত সাড়ে চারশ গরু মহিষ, এক হাজারের ওপরে ছাগল ও ভেড়া, তিন লাখ ৮৭ হাজার হাঁস-মুরগি মারা গেছে। এসব তথ্য উল্লেখ করে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বন্যার আকস্মিকতায় বেশির ভাগ জায়গাতেই আশ্রয় কেন্দ্রে আসা সম্ভব হয়নি। আবার অনেক জায়গা দুর্গম হওয়ায় সঠিক সময়ে সাহায্য পাওয়া যায়নি। তাই প্রাণহানি কিছুটা বেশি হয়েছে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত যেসব এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক সেসব এলাকায় আমাদের টিম কাজ করছে। এছাড়া দুর্গম এলাকাগুলোতেও আমরা যোগাযোগ করছি। গবাদি পশুর প্রাণহানির সংখ্যা বেশি হলেও কুরবানির পশুর বাজারে এর প্রভাব খুব বেশি হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সিলেট বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক ড. মো. জাকির হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যেই আমাদের সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়েছে। গোখাদ্যের জন্য বিশেষ বরাদ্দ ও ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের প্রণোদনা দেয়ার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। আশা করি, খুব শিগগিরই এ সম্পর্কিত বরাদ্দ পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, বন্যার ব্যাপকতা এতটাই তীব্র ছিল যে বেশির ভাগ জায়গাতেই যোগাযোগ পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন ছিল। তারপরেও আমাদের কর্মকর্তারা সাধ্যমতো সহযোগিতা করেছেন। গবাদিপশুর প্রাণহানিজনিত ক্ষতির পরিমাণ কম হলেও খাদ্য নষ্ট হয়েছে বিশাল পরিমাণের। যারা এখনো গবাদি পশুর খামার পরিচালনা করছেন, তারা মারাত্মক খাদ্য সংকটের মুখোমুখি। এখন পর্যন্ত আমাদের উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। সিলেট বিভাগে উপজেলাভিত্তিক ৫০টিরও বেশি ভেটেরিনারি টিম কাজ করছে। যা বন্যাপরবর্তী সময়েও অব্যাহত থাকবে। তিনি নিজে পুরো পরিস্থিতি মনিটরিং করছেন বলেও জানান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়