র‌্যাব মহাপরিচালক : নাশকতার তথ্য নেই তবুও সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছি

আগের সংবাদ

বাংলাদেশের গর্ব, বিশ্বের বিস্ময় : জাতীয়-আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে যেভাবে ডানা মেলল স্বপ্নের পদ্মা

পরের সংবাদ

দ্য ব্রিজ অন দ্য রিভার কাওয়াই

প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বসভ্যতা, সংস্কৃতি ও সাহিত্যের বিকাশে প্রথমদিকে যে ক’টি নদীর ভূমিকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ তার মধ্যে রয়েছে:
ইউফ্রেটিস : এটাই তুর্কি ভাষায় ফিরাত নেহরি আর আরবি সাহিত্যের ফোরাত নদী। টাইগ্রিস আর ইউফ্রেটিসের মাঝখানের অংশটুকু মেসপোটোমিয়া। এ নদীর জন্ম তুরস্কে, সিরিয়া ও ইরাক হয়ে বিশাল জলস্রোত নিয়ে নেমে আসে পারস্য উপনাসাগরে।
টাইগ্রিস : তুরস্কের পার্বত্যাঞ্চল থেকে নেমে এসে বাগদাদে মিলিত হয় ইউফ্রেটিসের সঙ্গে। তারপর এ নদীর নাম হয় শাতিল-আরব। কৃষি সভ্যতার লালনভূমি এ দুই নদীর মধ্যবর্তী মেসপোটোমিয়া।
নীল : আফ্রিকান নীল নদ ভিক্টোরিয়া হ্রদে উৎপত্তি হয়ে বৃষ্টিপ্রবণ ইথিওপিয়ার স্রোতধারাসহ মিসরকে প্লাবিত করে ভূমধ্যসাগরে পড়েছে। নীল নদে ক্লিউপেট্রার নৌবিহারের বর্ণনা আছে রাইডার হ্যাগার্ডের উপন্যাসে, একালে নীল নদ ফিরে ফিরে এসেছে নাগিব মাহফুজের লেখায়।
টাইবার : রোম ও রোমান সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে টাইবার নদী ঘিরে। অ্যাপেনাইন পর্বতমালায় জন্ম, শেষে সমর্পিত ভূ-মধ্যসাগরে।
হোয়াংহো : ইয়েলো রিভার নামেই একালে খ্যাত হোয়াংহো। চীনের জন্য এই নদী যত দুঃখের কারণই হোক না কেন চৈনিক সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশ হোয়াংহোকে নিয়েই।
সিন্ধু নদ তো সভ্যতারই সৃষ্টি করেছে। আমাদের নিকটতম সভ্যতা মেসপোটোমিয়ার সভ্যতার সমবয়সি।
ঋগবেদে বর্ণিত হয়েছে সরস্বতী নদীর কথা। পবিত্র এই নদী রাজস্থানের মরুভূতিতে শুকিয়ে যায়। সরস্বতীর স্রোত একদা পতিত হতো আরব সাগরে। সভ্যতাই মানুষের গল্পগুলোকে লিপিবদ্ধ করতে শিখিয়েছে। প্যাপিরাসও এসেছে নদীর উপকূল থেকে।
একটি অনুল্লেখ্য নদীর ওপর নির্মিত একটি সেতুর চলচ্চিত্রায়ন কাহিনী তুলে ধরা হচ্ছে।
কাওয়াই নদীর সেতু
ফরাসি ঔপন্যাসিক পিয়েরে বৌল মিখাইল শলোকভ কিংবা ইভো আদ্রের মতো বিশ্বসাহিত্যের সুপ্রতিষ্ঠিত লেখক নন সত্যি, কিন্তু চলচ্চিত্রায়িত সফল উপন্যাস হিসেবে দ্য ব্রিজ অন্য দ্য রিভার কাওয়াইর সঙ্গে কেবল গন উইথ দ্য উইন্ড-এর তুলনা চলে। ১৯৫৮ সালে ডেভিড লিন পরিচালিত এবং অ্যালেক গিনেস অভিনীত এই ছবিটি সাতটি অস্কার জিতে নেয়।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় থাইল্যান্ডের পশ্চিমাঞ্চলের ব্রিটিশ কয়েদিদের জাপানি প্রিজন ক্যাম্পে ঢোকানো হয়। জাপানি কমাড্যান্ট কর্নেল সাইতো আদেশ দেন পদ-পদবি নির্বিশেষে সব যুদ্ধবন্দিকে কাওয়াই নদীর ওপর রেলওয়ে সেতু নির্মাণ কাজে অংশগ্রহণ করতে হবে। জ্যেষ্ঠ ব্রিটিশ অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল নিকলসন জানান, জেনেভা কনভেনশনে অফিসারদের কায়িক শ্রম থেকে অব্যাহতি দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এ নিয়ে দু’পক্ষের প্রবল দ্ব›দ্ব। বন্দি ব্রিটিশরা চরম নির্যাতনের শিকার। পরিকল্পিত সেতু কাওয়াই নদীর দুপ্রান্ত সংযোজিত করে থাইল্যান্ড ও বার্মার (মিয়ানমার) মধ্যে সরাসরি যোগসূত্র নির্মাণ করবে।
অনিচ্ছাসত্ত্বেও কর্নেল নিকলসন যখন সেতু নির্মাণের কাজে হাত দেন তখন তিনি প্রত্যাশা করেন এই সেতু হবে ব্রিটিশ সৈনিকদের শ্রম ও সেবায় নির্মিত একটি উন্নতমানের স্মরণীয় সেতু। কিন্তু তার পরিকল্পনা উপেক্ষা করে জাপানি প্রকৌশলীরা সেতুর জন্য একটি ভুল জায়গা বেছে নেয়।
যুদ্ধবন্দিদের তিনজনের একটি দল পালাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করে। আহত অবস্থায় নৌ কমান্ডার শিয়ার্স পালাতে সক্ষম হয়।
নিকলসন তার সৈনিকদের চাপ দিচ্ছেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করতে হবে আর পলাতক শিয়ার্স পরিকল্পনা করছেন কমান্ডো কায়দায় সেতু উড়িয়ে দেবেন।
সেতু নির্মিত হওয়ার পরদিন প্রথম যাত্রায় সৈন্য ও গুরুত্বপূর্ণ লোকজনকে নিয়ে ট্রেন রওনা হয়েছে। শিয়ার্স বিস্ফোরক স্থাপন করেছেন। শেষ মুহূর্তে এটা ধরা পড়ে যায় নিকলসনের হাতে। ঘাতক রণকৌশল শিয়ার্স কিংবা নিকলসন কিংবা সাইতো- কাউকেই বাঁচাতে সক্ষম হয়নি। আহত নিকলসন বিস্ফোরক ডেটোনেটর অকেজো করতে ছুটে এসেও লক্ষ অর্জন করতে পারেননি। তিনি উপুড় হয়ে খঞ্জরের ওপর পড়ে মৃত্যুবরণ করেন। ভয়াবহ দৃশ্যের অবতারণা করে বিধ্বস্ত হয় সেতু, প্রথম ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করে মর্মান্তিক পরিণতি। তবে বাস্তবে শেষ দৃশ্যটি কল্পিত যুদ্ধবন্দিরা তখন দুটো সেতু নির্মাণ করে। একটি কাঠের এবং একটি স্টিলের। মিত্রবাহিনীর বোমাবর্ষণে দুটোই দুবছর পর ধূলিসাৎ হয়ে যায়। স্টিলের সেতুটি পুনর্নির্মাণ করা হয় এবং তা এখনো আছে।
দ্য ব্রিজ অন দ্য রিভার কাওয়াই শ্রেষ্ঠ ছবি, শ্রেষ্ঠ পরিচালক শ্রেষ্ঠ নায়ক, শ্রেষ্ঠ কাহিনী ও নাট্যরূপ শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত শ্রেষ্ঠ সিনেমাটোগ্রাফি এবং শ্রেষ্ঠ সম্পাদনার জন্য অস্কার লাভ করে। আমরাও অপেক্ষায় থাকবো আমাদের সৃজনশীল নির্মাতাগণ পদ্মা ও পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের কী উপহার দেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়