র‌্যাব মহাপরিচালক : নাশকতার তথ্য নেই তবুও সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছি

আগের সংবাদ

বাংলাদেশের গর্ব, বিশ্বের বিস্ময় : জাতীয়-আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে যেভাবে ডানা মেলল স্বপ্নের পদ্মা

পরের সংবাদ

দাম না থাকায় লোকসানে নওগাঁর লেবুচাষিরা

প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. আবু বকর সিদ্দিক, নওগাঁ থেকে : নওগাঁয় ফেরি করে ৭ টাকা কেজি দরে লেবু বিক্রি হচ্ছে। তবে খুচরা বাজারে লেবু কেজি হিসাবে না করে ৫ টাকা হালি হিসাবে বিক্রি হচ্ছে। নওগাঁর বদলগাছী ও সদর উপজেলায় এবার লেবুর ফলন ভালো হয়েছে কিন্তু বাজারে লেবুর দাম একেবারে কম হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন লেবুচাষিরা।
জেলার বিভিন্ন হাটবাজারের আড়তে প্রতি কেজি লেবু ৫ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে, এতে ব্যাপক লোকসান গুনতে হচ্ছে লেবুচাষিদের। পৌর পাইকারি তরকারি বাজার ও সদর উপজেলার কীর্তিপুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আড়তদাররা কৃষকদের কাছ থেকে পানির দরে লেবু কিনছেন। যেখানে গাছ থেকে ১ হাজার লেবু সংগ্রহ করতে শ্রমিকের মজুরি দিতে হয় কমপক্ষে ২০০ টাকা। এছাড়া পরিবহন খরচও রয়েছে। এ কারণে বর্তমান দরে লেবু বিক্রি করে লোকসান গুনতে হচ্ছে। নওগাঁ সদর উপজেলার কীর্তিপুর, বদলগাছী উপজেলার কোলা ও উপজেলা সদর বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই সব বাজারে প্রতি মণ লেবু বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা দরে। আমদানির তুলনায় চাহিদা কম থাকায় লেবুর ভালো দাম পাচ্ছেন না চাষিরা।
নওগাঁ পৌর পাইকারি তরকারি বাজারে লেবু বিক্রি আসা সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের মোক্তারপুর গ্রামের রমজান আলি জানান- ভাই আর বলেন না, দেড় হাজার লেবু আনিছিনু। পানির চেয়েও কম দামে সেই লেবু ২৮০ টাকা মণ হিসাবে বিক্রি করনু। সাত বছর ধরে এক বিঘা জমিতে চায়না-৩ জাতের লেবু চাষ করছেন। এত দিন খরচ বাদ দিয়ে বছরে ৩০-৪০ হাজার টাকা লাভ থাকত। তিন-চার সপ্তাহ ধরে যে দামে লেবু বিক্রি হচ্ছে, তাতে সার-কীটনাশক ও পরিচর্যার তো দূরের কথা, গাছ থেকে লেবু সংগ্রহে শ্রমিকের খরচও উঠবে না। আবার সেই লেবু বাজারে নিতেও আলাদা খরচ হয়। এবার একেবারে লোকসান হয়ে গেল।
পৌর পাইকারি বাজারের লেবু ব্যবসায়ী লোকমান আলি নওগাঁর স্থানীয় বাজার ছাড়াও বগুড়া ও রাজশাহীর বাজারে লেবু বিক্রি করেন। তিনি বলেন, নওগাঁ সদরের কীর্তিপুর, বক্তারপুর, বর্ষাইল, বদলগাছী উপজেলার কোলা, ভাণ্ডারপুর ও আধাইপুর ইউনিয়নে প্রচুর পরিমাণে লেবুর চাষ হয়ে থাকে। এ অঞ্চলে উৎপাদিত লেবু স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে বাইরের জেলাতেও বিক্রি হয়ে থাকে। এবার বাজারে প্রচুর লেবুর আমদানি হলেও চাহিদা নেই। বদলগাছী উপজেলার কাস্টডোব গ্রামের লেবুচাষি খয়বর কবিরাজ বলেন, কৃষকরা বাজারে প্রতি কেজি লেবু ৭ থেকে ৮ দরে বিক্রি করছেন। লেবুর লাভের বেশির ভাগই খাচ্ছেন পাইকার ব্যবসায়ীরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর ৭৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের লেবুর চাষ হয়েছে। এর মধ্যে বদলগাছী উপজেলায় সর্বোচ্চ ৪০ হেক্টর জমিতে লেবুর চাষ হয়েছে। নওগাঁ সদর উপজেলায় চাষ হয়েছে ২৭ হেক্টর জমিতে। এবার লেবু চাষের জন্য উপযোগী আবহাওয়া থাকায় এবং খেতে রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম হওয়ায় ফলন ভালো হয়েছে। অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপরিচালক (উদ্যান) খিজির হোসেন প্রামাণিক বলেন, এ অঞ্চলে প্রতিবছরই লেবুর আবাদ বাড়ছে কিন্তু বাজারে দাম কম হওয়ার কারণে কৃষকদের এবার লোকসান গুনতে হচ্ছে। কৃষি বিভাগের হিসাবে, এক বিঘা জমিতে সারা বছর লেবু উৎপাদনে খরচ হয় প্রায় ৬০ হাজার টাকা। সে হিসাবে প্রতি হাজার লেবু দুই হাজার টাকায় বিক্রি হলে কৃষকের কিছুটা লাভ থাকার কথা। সেখানে ১ হাজার লেবুর দাম মাত্র ২৫০ টাকা। এ দাম খুবই অস্বাভাবিক। বাজারে এত কম দাম থাকলে কৃষকরা লেবু উৎপাদনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। কৃষকদের উৎপাদিতে পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে জরুরি উদ্যোগ নেয়া উচিত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়