কাগজ প্রতিবেদক : ঢাকায় রাশিয়ান ফেডারেশন দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন একাতেরিনা সেমেনোভা বলেছেন, চলমান ইউক্রেন সংকটে বাংলাদেশ তার পররাষ্ট্রনীতির মূল সুর ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এর ভিত্তিতে একটি নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখে চলেছে। এটি প্রশংসনীয়। এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলাদেশ-রাশিয়া সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে বলেন, দুদেশের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদারে ঢাকায় রুশ দূতাবাস নতুন উপায় বের করায় সচেষ্ট।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীতে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ল’ এন্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স (বিলিয়া) কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ-রাশিয়া রিলেশনস : ইমপেরাটিভস, পটেনশিয়ালস এন্ড রিস্কস’ শীর্ষক বক্তৃতার আয়োজন করা হয়। একই শিরোনামে এটি সংস্থাটি আয়োজিত তৃতীয় লেকচার। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পশ্চিম) সাব্বির আহমেদ চৌধুরী।
বাংলাদেশের মানুষ আজও মহান মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের অবদানের কথা স্মরণ করায় একাতেরিনা সেমেনোভা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সময় থেকেই দেশটির অর্থনৈতিক অংশীদার রুশ ফেডারেশন। এগুলো হলো বাংলাদেশ-রাশিয়া সম্পর্কের সোনালি ইতিহাস। দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপ চলে আসছে সেই ১৯৭২ সাল থেকে। বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে বর্তমান সহযোগিতার ভিত্তি স্থাপিত হয় ২০১৩ সালে, যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাশিয়া সফর করেন।
বক্তৃতা অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দা রোজানা রশীদ। প্রবন্ধে তিনি তুলে ধরেন যে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে প্রথম যে কয়েকটি দেশ বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়েছিল রাশিয়া তাদের অন্যতম। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই রাশিয়া বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। সেই থেকেই, দেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নানা পরিবর্তনের কারণে দুদেশের সম্পর্ক অনেক উত্থান-পতনের সম্মুখীন হয়েছে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক সম্পর্কে পদ্ধতিগত পরিবর্তন আসে। তখন তার উত্তরসূরি হিসেবে রুশ ফেডারেশন একটি পরাশক্তির ভূমিকা বজায় রাখার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। ঠিক একই সময়ে বাংলাদেশ বড় ধরনের গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা প্রত্যক্ষ করে। বাংলাদেশ ও রাশিয়া উভয়েই অটল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পশ্চিম) সাব্বির আহমেদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক ঐতিহাসিক ও ধারাবাহিক। এ প্রসঙ্গে তিনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়ার অবদানের কথা তুলে ধরে উল্লেখ করেন যে, ১৯৭২ সালের মার্চে জাতির পিতা মস্কো সফর করেন। সাম্প্রতিক ইউক্রেন ইস্যু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মানুষ খুব সহজেই একটি মতামত দিয়ে দেয় যে, বাংলাদেশ বর্তমানে এই পক্ষ বা ওই পক্ষ নিয়েছে অথবা বিশেষ একটি দেশের বিরুদ্ধে। আসলে তা নয়। আমরা প্রকৃতপক্ষে জাতির পিতার অনুশাসন অনুসরণ করি, আর তা হলো- ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (গবেষণা) নওরীন আহসান বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক আরো গভীর করায় বাংলাদেশের আগ্রহেরই বহিঃপ্রকাশ। ইউক্রেন সংকট শুরু হওয়ায় আমরা এক বিশাল ক্ষমতার প্রতিযোগিতার যুগে প্রবেশ করেছি। তিনি মনে করেন, রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আর পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে এর সম্পর্ক এক নয় এবং কিছুটা সীমিত। তিনি আরো বলেন, একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন পশ্চিমা দেশগুলো এবং রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।