র‌্যাব মহাপরিচালক : নাশকতার তথ্য নেই তবুও সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছি

আগের সংবাদ

বাংলাদেশের গর্ব, বিশ্বের বিস্ময় : জাতীয়-আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে যেভাবে ডানা মেলল স্বপ্নের পদ্মা

পরের সংবাদ

আ.লীগের প্রতিষ্ঠাবাষিকীর আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা : জনগণের কাছে নৌকার কোনো বিকল্প নেই

প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রতিষ্ঠা থেকেই আওয়ামী লীগ জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে আসছে। তাই দেশের জনগণের কাছে নৌকা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। তারা জানে নৌকা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক। নৌকা ছাড়া তাদের গতি নাই। কারণ নিজের ভাগ্য গড়তে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে মানুষের ভাগ্য গড়তে। সেই আদর্শ নিয়েই আওয়ামী লীগের রাজনীতি।
৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, আব্দুর রহমান, এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আন্তর্জাতিক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, কেন্দ্রীয় সদস্য পারভীন জামান কল্পনা, মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও আবু আহমেদ মান্নাফী। গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন দলটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ।
বিএনপিকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেতৃত্ব শূন্য কোন দল নির্বাচন করবে। জনগণ তাদের ভোট দেবে কী দেখে? ওই চোর, ঠকবাজ, এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী অথবা খুন, অস্ত্র চোরাকারবারি, সাজাপ্রাপ্ত আসামি তাদের জনগণ ভোট দেবে দেশ পরিচালনার জন্য? তারা তা দেবে না। বাংলাদেশের মানুষ এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন। আমরা পদ্মা সেতু করেছি নিজেদের অর্থে। অথচ এটা নিয়ে বিএনপি প্রশ্ন তোলে। যাদের আপাদমস্তক দুর্নীতিতে ভরা তারা প্রশ্ন তোলে কোন মুখে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা প্রথম জাপান সফরে যমুনা সেতু করার উদ্যোগ নেন। ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর জিয়াউর রহমান তা বন্ধ করে দেয়। এরশাদ ক্ষমতায় এসে আবার উদ্যোগ নেন সেতু করার। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পর সেতুর কাজ খুব বেশি এগোতে পারেনি। কারণ সব জায়গায় তাদের ছিল কমিশন খাওয়ার অভ্যাস। মায়ের জন্য, দুই ছেলের জন্য, ফালুর জন্য-অমুক-তমুককে ভাগে ভাগে দিতে দিতে সেখানে আর কেউ কাজ করতে

পারত না। ১৯৯৬ সালে সরকারে এসে আওয়ামী লীগ এই যমুনা সেতুর সঙ্গে রেললাইন, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইনজুড়ে দিয়ে একে বহুমুখী করেছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এদেশের পল্লী প্রকৃতি, মাটি ও মানুষের কল্যাণ যতটা উপলব্ধি করতে পারে আর কেউ ততটা বুঝবে না। কারণ তাদের মনে এখনো রয়ে গেছে ‘পেয়ারা পাকিস্তান’। জিয়া, খালেদা জিয়া, এমনকি এরশাদ কারো জন্মই বাংলাদেশে নয়। আর আমি ও জাতির পিতা এই মাটিরই সন্তান। মাটির টানে, নারীর টানেই এদেশের মানুষের ভাগ্য বিনির্মাণে কাজ করছি। আওয়ামী লীগের আদর্শই হচ্ছে জনগণের সেবা করা।
সম্প্রতি লন্ডন থেকে ‘ইউটিউব’ চ্যানেলে প্রচারিত তারেক রহমান ’৭৫-এর পরাজিত শক্তি’ কথা উল্লেখ করেছেন। সে বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী খালেদা জিয়া জাতির পিতাকে হত্যার সঙ্গে যে জড়িত সেটা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সমর্থন দিয়ে তাদের ছেলে তারেক রহমান প্রমাণ করেছে। কারণ খুনিদের বিচারের হাত থেকে মুক্ত করেছিল জিয়া। ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে সে খুনিদের দায়মুক্তি দিয়ে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল। আজকে যখন শুনলাম খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান স্লোগান দেয় ‘৭৫-এর পরাজিত শক্তি’। এতেই সে প্রমাণ করেছে যে, তার বাবা-মা দুুজনেই পাকিস্তানের দালাল ছিল। যার জন্য মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও ইতিহাস তারা একে একে মুছে ফেলেছিল। এমনকি জাতির পিতার নামটাও মুছে ফেলেছিল। পাকিস্তানি সেনাদের পদলেহন করে চলাটাই তো তাদের অভ্যাস। এটাই বাস্তবতা। এটাই মনে করতে হবে। এদের করুণা করতে হবে। এরা চক্রান্তকারী, ষড়যন্ত্রকারী সেটাও মনে রাখতে হবে।
তারেক রহমানকে দেশে আসতে দেয়া হচ্ছে না- বিএনপি নেতাদের এমন অভিযোগ খণ্ডন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৭ সালে তারেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়েছিল, সে আর রাজনীতি করবে না। এই শর্তে কারাগার থেকে মুক্তি নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমায়। এটা তো বিএনপি নেতাদের ভুলে যাওয়ার কথা না। কাজেই তাকে তো কেউ বিতাড়িত করে নাই। স্বেচ্ছায় চলে গিয়েছিল। তারপরে আর সে ফিরে আসেনি। একজন রাজনৈতিক নেতার যদি এই সাহস না থাকে ফিরে আসার, সে আবার নেতৃত্ব দেয় কীভাবে?
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, পাপ বাপকেও ছাড়ে না। জিয়াউর রহমানকে কিন্তু নিহত হতে হয়েছিল। তার লাশ কেউ খুঁজে পায়নি। মৃতদেহ সৎকারের নামে একটা বাক্স সংসদ ভবনের চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার কবর দেয়া হয়। সেখানে গিয়ে ফুল ও মালাও দেয়া হয়। কিন্তু সেখানে খালেদা জিয়ার স্বামীও নাই, আর বিএনপি নেতাও নাই। এটা হলো বাস্তবতা। বাস্তব সত্যটা একদিন না একদিন প্রকাশ হবে।
নিজের জীবনে আসা নানা ঘাত-প্রতিঘাতের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে সাজা পেয়েছে খালেদা জিয়া। শুধু এতিমের অর্থ আত্মসাতই নয়, নাইকো, গ্যাটকো- এ রকম বহু মামলা ঝুলে আছে। খালেদা জিয়াতো কোর্ডেই যেতে চাইত না। প্রত্যেকটি প্রকল্প থেকে তারা দুর্নীতি করে টাকা বানিয়েছে। যদি দুর্নীতি করে টাকা না বানাতো তাহলে বিদেশে তারেক এত বিলাসবহুল জীবনযাপন করে কীভাবে? কত টাকা খরচ করে ব্রিটিশ নাগরিক সেজে কোম্পানি খুলেছে? ধরা পড়ার এক বছর পর সেখানে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিয়েছে। কারণ আমরা কথা তুলেছিলাম একজন সাজাপ্রাপ্ত বাংলাদেশিকে ব্রিটেন নাগরিকত্ব দেয় কী করে? একেই বলে চোরের মার বড় গলা।
শেখ হাসিনা বলেন, এদেশের মানুষের যতটুকু অর্জন সবটুকুই আওয়ামী লীগের হাতে। আওয়ামী লীগ সরকারে আমলেই মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে। এজন্য বারবার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে দেয়া হয়নি। যাতে মানুষকে আরো বেশি শোষণ ও নির্যাতন তারা করতে পারে। ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ যা অর্জন করেছিল। ২০০১ সালের পর বিএনপি-জামায়াত সরকারে এসে সব নস্যাৎ করে। তারা দেশকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত করে। টানা পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়। সেই অসম্মানজনক জায়গা থেকে দেশের ভাবমূর্তির আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে আমরা দেশকে একটি সম্মানজনক অবস্থায় আনতে পেরেছি। আজকের বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্যা এখানেই থামবে না। এই পানি আস্তে আস্তে নিচে যত নামতে থাকবে ধীরে ধীরে একেকটা এলাকা প্লাবিত হবে। এটা প্রকৃতির সঙ্গে জড়িত। ভাদ্র মাস অর্থাৎ সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বন্যা চলবে। কাজেই আমাদের সেই প্রস্তুতি রাখতে হবে। আমাদের নেতাকর্মীরা সবাই প্রস্তুত থাকবে।
দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোয় নিজ দলের নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এটাই আওয়ামী লীগ। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আওয়ামী লীগ জনগণের সেবক। জনগণের পাশে থাকে। জনগণের পাশেই থাকবে। এই আদর্শই আমাদের জাতির পিতা শিখিয়েছেন। এটা নিয়েই আওয়ামী লীগ চলবে। মানুষের শক্তিই আওয়ামী লীগের শক্তি। সেই শক্তি নিয়েই আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যাব। জয় বাংলা ফিরে এসেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়