গ্রেপ্তার ৪ ডাকাত : বন্যার কারণে বেড়ে যেতে পারে ডাকাতি আশঙ্কা পুলিশের

আগের সংবাদ

আ.লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

পরের সংবাদ

শুল্কায়ন জটিলতা : কাস্টমসের সিদ্ধান্তহীনতায় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আলী ইব্রাহিম : চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি করা শিটের কোয়ালিটি নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় আটকে আছে প্রায় সাড়ে চারশ পণ্যবাহী ট্রাক। কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তহীনতায় চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন আমদানিকারকরা। এতে প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ টাকা করে গচ্ছা দিতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। গত আড়াই মাসে আটকা এসব পণ্যে প্রায় ৬০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছেন তারা। এতে বন্দরে পণ্য জটও তৈরি হয়েছে। আর আড়াই মাস পণ্য আটকে রাখার পর গত রবিবার শিটের কোয়ালিটি নির্ধারণে একটি কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এনবিআর ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে সেকেন্ডারি শিটের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কারণ এসব শিট দিয়ে গৃহস্থালিসহ বেশকিছু প্রয়োজনীয় পণ্য তৈরি হয়। আর প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ৪ লাখ পরিবার। আমদানি নীতি আদেশে অবাধে আমদানিযোগ্য এসব সেকেন্ডারি কোয়ালিটির শিট। এসব শিট ছাড়করণের শর্ত হচ্ছে মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিএসটিআইর মান সনদ। বিএসটিআই এসব পণ্য সেকেন্ডারি কোয়ালিটির শিট হিসেবে মান সনদ দেয়ার পরও আটকে রেখেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এতে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন আমদানিকারকসহ এই খাতের ব্যবসায়ীরা। গত রমজানে হুট করে এসব পণ্য আটক করা শুরু করে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এখনো প্রায় সাড়ে ৪শ পণ্যবাহী ট্রাক আটকে আছে বন্দরে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, বন্দরে আটকে থাকা শিট প্রাইম কোয়ালিটির। কোনো ধরনের নির্দেশনা ছাড়া খালাস হওয়া পণ্য আটকে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। বন্দরে আড়াই মাস পণ্য আটকে রাখার পর সর্বশেষ গত রবিবার কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার মো. জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। অথচ যিনি গত আড়াই মাস ধরে পণ্য বন্দরে আটকে রেখেছেন তাকে এই কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। এতে জটিলতা আরো বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ আয়রন এন্ড স্টিল ইম্পোর্টার এসোসিয়েশনের সহসভাপতি মর্তুজা আলীর সঙ্গে তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা সরকারের আমদানি নীতি আদেশ মেনে শিট আমদানি করেছি। আর শিট খালাসের ক্ষেত্রে মান সনদ বাধ্যতামূলক। আমরা বিএসটিআইর ছাড়পত্রসহ কর পরিশোধের পরও পণ্য খালাস করতে পারছি না। প্রাইম শিটের উদাহরণ হিসেবে এই ব্যবসায়ী বলেন, বাইরের ছোট ফ্যাক্টরিও প্রাইম কোয়ালিটির শিট ২শ টনের কম আমদানি করা যায় না। আমরা তো বাইরের ফ্যাক্টরি থেকেও এসব শিট নেই না। বিভিন্ন বায়ার থেকে বিভিন্ন সাইজের শিট নিয়ে আসি। এগুলো বিএসটিআইসহ সরকারি নিয়মে সেকেন্ডারি হিসেবে বলার পরও কী কারণে চট্টগ্রাম কাস্টমস প্রাইম হিসেবে শুল্কায়ন করতে চায় আমাদের বোধগম্য নয়। তিনি আরো বলেন, সেকেন্ডারি কোয়ালিটির এসব আমদানি করা শিটের পণ্যবাহী সাড়ে ৪শ ট্রাক গত আড়াই মাস ধরে বন্দরে আটকে আছে। পোর্ট চার্জ ছাড়াও প্রতিদিন গড়ে সব মিলে প্রায় ২০ লাখ টাকা করে গচ্ছা দিতে হচ্ছে আমাদের। এতে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘদিন ধরে বন্দরে আটকে পণ্যে জং ধরতে শুরু করেছে। এই সংকট নিরসনে এনবিআর চেয়ারম্যান বরাবরে আবেদন করেছি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও চান এই ব্যবসায়ী নেতা।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, প্রাইম ও সেকেন্ডারি কোয়ালিটির শিটের এইচএস কোড এক। শুধু পরিবর্তন ভ্যালুতে। সেকেন্ডারি শিটের ভ্যালু প্রাইম শিটের প্রায় অর্ধেক। এই কারণে জটিলতা আরো দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এই সংকটের অবসান চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান বরাবর চিঠিও দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদনও করেছেন ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে জেটির দায়িত্বে আসা নতুন এক যুগ্ম কমিশনার মো. জাকির হোসেনের এই সিদ্ধান্তে হতবাক হয়ে পড়েন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বড় বড় শিল্প গ্রুপকে সুবিধা দিতেই ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের প্রতি বৈষম্য করছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। আমদানি করা স্টিল শিটের কোয়ালিটি নির্ধারণ নিয়ে দফায় দফায় কমিটি গঠিত হয়। প্রায় প্রতিটি কমিটি এসব স্টিল শিট সেকেন্ডারি শিট হিসেবে রিপোর্ট দেয়। এর আগে ২০১৬ সালে হোসেন আহমদ কমিশনার থাকাকালে জিপি সিট নিয়ে জটিলতা তৈরি হলে বিশেষজ্ঞ টিম গঠন করে কোয়ালিটি নির্ধারণে তদন্ত কমিটি গঠন করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। এই রিপোর্টেও বলা হয়েছে, জিপি সিটে ঘোষণা ও পণ্য চালানে কোনো অসঙ্গতি না পেলে খালাসের ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমান কর্তৃপক্ষ হাউসের এই আদেশও মানছে না। এই সংকটের দ্রুত নিরসন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইও।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফখরুল আলম ভোরের কাগজকে বলেন, আমদানি করা শিটের কোয়ালিটি নিয়ে কোনো জটিলতা নেই। ইতোমধ্যে আমরা পণ্যবাহী ট্রাক ছাড় করতে শুরু করেছি। শিগগিরই সব পণ্য ছাড় করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়