গ্রেপ্তার ৪ ডাকাত : বন্যার কারণে বেড়ে যেতে পারে ডাকাতি আশঙ্কা পুলিশের

আগের সংবাদ

আ.লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

পরের সংবাদ

প্রস্তাবিত বাজেটের সাধারণ আলোচনায় এমপিরা : স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে আরো বরাদ্দ বাড়াতে হবে

প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা খাতে আরো বরাদ্দ বাড়ানো এবং জীবনঘাতী তামাক ও তামাকজাত পণ্যের ওপর আরো অতিরিক্ত করারোপের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় সংসদে সরকারি ও বিরোধী দলের এমপিরা। তারা বলেছেন, স্বাস্থ্য খাতে অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো হলেও তা অপ্রতুল। একইভাবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনে এ খাতে আরো বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। একই সঙ্গে টেকসই উন্নয়নের জন্য ধনী দরিদ্রের বৈষম্য হ্রাস করা ও তামাকের ওপর নামমাত্র করারোপ করায় রাষ্ট্রের ১২ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। তারা জানান, তামাক পণ্যের ওপর আরো করারোপের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে সুপারিশ দিয়েছেন ১০০ জন এমপি।
গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এমপিরা এসব দাবি জানান। গতকাল আলোচনায় অংশ নেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, বেসরকারি বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, ডা. রুস্তম আলী ফরাজী, গোলাম মোহম্মদ সিরাজ, শিরীন আখতার, নজরুল ইসলাম বাবু, আবুল কালাম আজাদ, ফরিদুর রহমান, সামশুল হক চৌধুরী, বজলুল হক হারুন, ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা, মৃণাল কান্তি দাস, ছলিম উদ্দিন তরফদার, আয়েন উদ্দিন, এ বি তাজুল ইসলাম, বেগম নাহিদ ইজাহার খান, নজরুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ। দরিদ্র ও মধ্যবিত্তদের সুবিধার্থে বাজেটে ছোট ও মাঝারি শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে আরো অর্থ বরাদ্দের আহ্বান জানান তারা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, বাজেটে নিত্যপণ্যের আমদানির ওপর করারোপ করা হয়নি, করারোপ করা হয়েছে ধনিক শ্রেণির মানুষের বিলাস সামগ্রীর ওপর যেমন প্রসাধন সামগ্রী, গাড়ি ইত্যাদি। বিএনপির আমলে রিজার্ভ ছিল সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার, এখন হয়েছে ৪১ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে শিল্পের কাঁচামালে কর কমানো হয়েছে। স্বাস্থ্যে এবার বাজেট বাড়ানো হয়েছে ৪ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু গত বছর বাজেট বাড়ানো হয়েছিল ১৪ শতাংশ, এবার সেটা নামিয়ে আনা হয়েছে ১২ শতাংশে।
স্বাস্থ্য খাতে বাজেটে আরো বেশি বরাদ্দ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এবারের বাজেটে অর্থ আরো বাড়ানো দরকার। কোভিড নিয়ন্ত্রণে ৫ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে, কিন্তু করোনা এখনো যায়নি। এ খাতে ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দেয়া হোক। বাজেটে দেশীয় ভ্যাকসিন উৎপাদনের কথা বলা হয়েছে। আশা করি, আমরা দেশীয় পর্যায়ে ভ্যাকসিন উৎপাদনে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারব।
তিনি বলেন, দেশে অসংক্রামক রোগ বেড়ে যাচ্ছে। ক্যান্সার, কিডনি, হার্টের জন্য আমরা আটটি হাসপাতাল উদ্বোধন করেছি। জেলা পর্যায়ে আইসিইউ, ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত সামগ্রীর ওপর প্রস্তাবিত কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তিনি তামাকের ওপর বেশি করে করারোপ করা ও পলিথিন ব্যাগের ওপর কর বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।
বিএনপির কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে তিনি বলেন, অনেক বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন। ফ্রান্সের জন্য আইফেল টাওয়ার যেমন গর্বের, স্ট্যাচু অব লিবার্টি যেমন আমেরিকানদের জন্য গর্বের, চীনের জনগণের জন্য যেমন গ্রেট ওয়াল গর্বের, তেমনি বাংলাদেশের জন্য পদ্মা সেতু গর্বের বস্তু।
ডা. রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, পদ্মা সেতু দেশীয় অর্থে নির্মাণ একটি প্রজ্ঞা ও সাহসের বিষয়। এতে দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আনবে। দেশের উন্নয়ন ঘটবে। এটা আমাদের জন্য বিশাল একটা প্রাপ্তি, এ অঞ্চলের মানুষ আজ আনন্দে আত্মহারা। এবার আমরা টেকসই অর্থনীতি চাই। এজন্য দেশে দারিদ্র্য কমাতে হবে।
তিনি বলেন, বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে আরো বরাদ্দ বাড়াতে হবে। করপোরেট বাণিজ্যের জন্য ট্যাক্স বাড়িয়ে আজ দরিদ্র মানুষকে পরোক্ষভাবে জর্জরিত করা হয়েছে। সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষি খাতে উন্নয়ন না ঘটালে বৈষম্য দূর করা যাবে না। এটা দুঃখজনক যে, দেশে ৫০ বছরে একটা শিক্ষানীতি হয়নি। ফলে প্রকৃত শিক্ষার উন্নয়ন ঘটেনি।
তিনি বলেন, আমাদের করের আওতা বাড়িয়ে অন্তত করদাতার সংখ্যা ১ কোটি করতে হবে। কর ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতে হবে। অর্থ পাচার বন্ধ ও খেলাপি ঋণ আদায়ে তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। বিদেশে পাচারকৃত টাকা ফেরত আনার সুযোগ দিয়ে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে।
নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ধারাবাহিকভাবে উন্নয়ন ঘটেছে দেশের। করোনা অভিঘাত আসার পরে এবং সাম্প্রতিক ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধের পরে পুরো বিশ্বে যে অর্থনৈতিক মন্দা ও মূল্যস্ফীতি ঘটেছে, তা নিয়ন্ত্রণে একটি কৌশল এ বাজেটে লক্ষ্য করেছি। আজকের টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন অবকাঠামো উন্নয়ন। প্রধানমন্ত্রী রেলকে প্রাধান্য দিয়েছেন। অনেকগুলো প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে ও হয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশ রেলওয়ে ট্রান্স এশিয়ান রেলরুটে যুক্ত হবে।
মাহবুব আলী বলেন, বিশ্বব্যাংকের মতে বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থায়িত্বশীল ও অগ্রগামী। কোভিডের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বিশ্বের বিমান পরিবহন। কিন্তু সেই সময়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স চালিয়ে গিয়েছি, নিজেদের উপার্জিত অর্থে কর্মচারীদের বেতন দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর এক হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দেন, আমরা এরই মধ্যে আমাদের সব দায়দেনা পরিশোধ করে ২০২১-এর নভেম্বর থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত বিমানের আয় হয়েছে ৪ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা। নিট মুনাফা হয়েছে ২৮৯ কোটি টাকা। এরই মধ্যে আমরা প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনার ৮৭০ কোটি পরিশোধ করেছি।
শিরীন আখতার বলেন, কৃষি উৎপাদনে বরাদ্দ বাড়ানো, সংস্কৃতি ও নারীদের ক্ষুদ্র উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। পর্যটন খাতে আয় বাড়াতে পর্যটন স্থলগুলোকে আন্তর্জাতিক মানের করা, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যে বরাদ্দ দেয়া, বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে গবেষণা বাড়াতে বরাদ্দ দেয়ার দাবি জানান তিনি।
বিলাসী পণ্য এক বছরের জন্য আমদানি বন্ধ করা, বড় বড় প্রকল্প আপাতত স্থগিত করার আহ্বান জানান গোলাম মোহম্মদ সিরাজ। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী বাজেটে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষি খাতে বরাদ্দে তেমন নজর দেননি। বাজেটে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বাজেটে দুর্নীতি প্রতিরোধে স্পষ্ট পদক্ষেপ না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, গত ১২ মাসে সুইস ব্যাংকে আরো জমা পড়েছে সাড়ে ২ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা। বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ নামমাত্র কর দিয়ে দেশে আনার সুযোগ দেয়া অসাংবিধানিক, এতে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া হবে। এরপর তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়