গ্রেপ্তার ৪ ডাকাত : বন্যার কারণে বেড়ে যেতে পারে ডাকাতি আশঙ্কা পুলিশের

আগের সংবাদ

আ.লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

পরের সংবাদ

পর্যাপ্ত ত্রাণ ঘোষণার পরও দুর্ভোগে মানুষ : সিলেটে ত্রাণের জন্য হাহাকার

প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জাহিদুল ইসলাম, সিলেট অফিস : সিলেট ও সুনামগঞ্জের চলমান বন্যায় সরকারি হিসাবে অন্তত ৪০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি হবে বলেই ধারণা করেন অনেকে। বন্যাকবলিত সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের ভাষ্যমতে, ত্রাণের কোনো সংকট না থাকলেও বন্যার ব্যাপকতায় অনেক জায়গায় ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। আর এ অবস্থায় মারাত্মক দুর্ভোগে পড়েছেন বন্যার্তরা।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, সিলেট মহানগরীসহ জেলার ১৩টি উপজেলার সবকটিই বন্যাকবলিত। একই সময়ে সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলার সবটিতেই বন্যা হানা দিয়েছে। এ দুই জেলার এসব এলাকার আনুমানিক ৪০ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন। এদের ভেতর ৪ লাখের কাছাকাছি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন ১ হাজার ২৪টি আশ্রয় কেন্দ্রে। এছাড়া লক্ষাধিক মানুষ নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে আত্মীয়স্বজনের পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় পানিবন্দি অবস্থায় নিজ ঘরেও কোনোমতে আশ্রয় নিয়ে আছেন বহু মানুষ। কোনোমতে মাথা গুঁজে থাকতে পারলেও ত্রাণের জন্য এক রকম হাহাকার চলছে বন্যাদুর্গত এলাকায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ নিয়ে বারবার আশ্বস্ত করা হলেও বাস্তবে এর মিল নেই কোথাও।
এ ব্যাপারে সিলেটের জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান জানান, ত্রাণের কোনো সংকট নেই। বুধবার দুপুর পর্যন্ত সিলেট জেলার জন্য ৮০০ টন চাল, ১৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ২ কোটি ৭ লাখ নগদ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। যার অর্ধেকেরও বেশি ইতোমধ্যেই বিতরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়েও বরাদ্দকৃত ত্রাণ পাঠিয়ে দিয়েছি। এখানে প্রশাসনের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি, স্বেচ্ছাসেবকদেরও সম্পৃক্ত করা হয়েছে। তাই ত্রাণবঞ্চিত থাকার সুযোগ নেই।
অপরদিকে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, এখন পর্যন্ত ৭৭০ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের পর নগদ টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এছাড়া শুকনা খাবার বরাদ্দ রয়েছে

১২ হাজার প্যাকেট। বরাদ্দ ত্রাণের বেশির ভাগই ইতোমধ্যে উপজেলা ও ইউনিয়ন প্রশাসনের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, দুর্গম কিছু এলাকায় আমরা ত্রাণ পৌঁছাতে না পারলেও সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের মাধ্যমে সেসব এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানো হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বলেন, ত্রাণের কোনো ঘাটতি নেই, ত্রাণ পর্যাপ্ত আছে। প্রয়োজনে আরো বরাদ্দ চাওয়া হবে। আমরা চেষ্টা করছি বন্যাকবলিত প্রতিটি মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিতে।
বিভাগীয় কমিশনার আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার বন্যাকবলিত সিলেট অঞ্চল পরিদর্শন করে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা আক্রান্ত প্রতিটি উপজেলার জন্য ৫ লাখ টাকা করে মোট ১ কোটি ২০ লাখ টাকা তার নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ দিয়েছেন। এছাড়া বেসরকারি পর্যায় থেকেও বিপুল পরিমাণে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
তবে প্রশাসনের এমন ভাষ্যের সঙ্গে মিল নেই বাস্তবতার। বন্যাকবলিত স্থানীয় একাধিক সূত্র বলছে ত্রাণের জন্য এখনো হাহাকার চলছে। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাঁক ইউনিয়নের বাসিন্দা মকরম আলী বলেন, বন্যা আসার পর আমি আমার পরিবার নিয়ে পাশের একটি দোতলা ভবনে অবস্থান নেই। দেখতে দেখতে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভবনটির নিচতলা পানির নিচে চলে যায়। প্রথম তিন দিন আমরা দুই পরিবার খাবার আর পানীয় জলের জন্য অনেক কষ্ট করেছি। চতুর্থ দিন কয়েকজন যুবক কিছু শুকনো খাবার আর পানি দিয়ে যায়। সরকারি ত্রাণ নিয়ে কেউ আসেনি। তিন গ্রামে আমার মতো ভুক্তভোগীর সংখ্যা হাজারখানেক হবে।
তিনি বলেন, এখন পানি অনেকটাই কমে গেছে। অনেকেই ত্রাণ দিতে আসছেন। তবে তার পরিমাণ একেবারেই কম। খাবারের পাশাপাশি এখনো বিশুদ্ধ পানির কষ্ট রয়ে গেছে।
এদিকে প্রশাসন যখন ত্রাণ নিয়ে দূরবর্তী এলাকায় পৌঁছাতে সমস্যার কথা বলছে, তখন বেসরকারি উদ্যোগে দূরবর্তী জায়গায় ত্রাণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন অসংখ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।
বিনয় ভদ্র নামের এক স্বেচ্ছাসেবী বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগে আমরা সিলেট মহানগরীর পাশাপাশি জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জে ত্রাণ বিতরণ করেছি। বেশির ভাগ জায়গাতেই আমাদের আগে কোনো সরকারি সংস্থা পৌঁছায়নি। লোকজন খুব খারাপ অবস্থায় আছেন। অনেকে বৃষ্টির পানি বোতলে জমিয়ে পান করেছেন। দুর্গতদের অবস্থা দেখলে চোখে পানি ধরে রাখা যায় না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়