গ্রেপ্তার ৪ ডাকাত : বন্যার কারণে বেড়ে যেতে পারে ডাকাতি আশঙ্কা পুলিশের

আগের সংবাদ

আ.লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

পরের সংবাদ

ডুরা সংলাপ : এডিস মশা ধ্বংসে মেয়র তাপসের ৪ প্রস্তাব

প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : মশা ধ্বংসে ৪টি কাজের প্রস্তাব দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। আর জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এখন মশা রাতেও কামড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার। ‘ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ : আমাদের করণীয়’- শীর্ষক ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন-ডুরা সংলাপে এসব কথা বলেন তারা। গতকাল বুধবার বিকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
ডুরার সভাপতি রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। ডুরার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জয়শ্রী ভাদুড়ীর সঞ্চালনায় সংলাপে আরো বক্তব্য রাখেন ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট-আইপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. আদিল মোহাম্মদ খান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম ও ঢাকা দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে সামসুল কবির। শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, বর্তমানে রাত ৮টার পর দোকানপাট ও বিপণিবতান বন্ধ থাকায় ঢাকা শহরকে বিশ্রাম দেয়া শুরু হয়েছে। এখন রাজধানীর বায়ুমানও ভালো হচ্ছে। এটি অর্থনীতির সূচককেও ভালো করবে। মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম আগে ভঙ্গুর ছিল। বেড়ে গেলে পদক্ষেপ নেয়া হতো। এটি বার্ষিক কর্মপরিকল্পনায় ছিল না। প্রতিটি দেশেই সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম নেয়া হয় বছরব্যাপী। আমরা দায়িত্ব নিয়ে সে কাজ শুরু করেছি।
এ সময় মেয়র মশার বিনাশ করতে ৪টি কাজের প্রস্তাব দেন। প্রথমত উৎস ধ্বংস, দ্বিতীয়ত রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার, তৃতীয়ত জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও চতুর্থত ওয়ার্কার ম্যানেজমেন্ট (কর্মী ব্যবস্থাপনা) করা। তিনি বলেন, এই

৪টি কাজ করলে মশা ধ্বংস করা সম্ভব। ঢাকায় দুই প্রকার মশা রয়েছে। একটি কিউলেক্স। এটি বেশি কামড়ালেও মৃত্যু হয় না। আর এডিস মশা। এটির কামড়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় বলে আমরা বেশি গুরুত্ব দেই। এটি নির্মূলের ওষুধ এখনো আবিষ্কার হয়নি। এক বছর ডিমগুলো অক্ষত থাকে ও পানি পেলে লার্ভা হয়ে ধীরে ধীরে মশায় পরিণত হয়।
কীটনাশকের মজুত সম্পর্কে তিনি বলেন, আগে মজুতের ব্যবস্থা ছিল না। এক বছরের পূর্ণাঙ্গ মজুত প্রয়োজন তা সংগ্রহ করে ব্যবস্থা নেয়া হয়। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত কীটনাশক মজুত রয়েছে। ২০২০ সালের ৭ জুন এই কার্যক্রম শুরু করা হয়।
তাপস বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে মশার জন্ম বেশি। জীববৈচিত্র্যের মাধ্যমে মশক নিয়ন্ত্রণ শূন্যের নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব। যেমন তেলাপিয়া মাছ মশা খায়, কদমগাছে ফিঙে পাখি এসে কীটপতঙ্গ খায়। হাঁস দিয়ে মশা নির্মূল করা হচ্ছে। সে পানি পরিষ্কার রাখে। জলবায়ুর প্রভাবে এডিসের বিস্তারের আশঙ্কা রয়েছে।
মেয়র বলেন, জনসম্পৃক্ততা ও জনসচেতনতা না থাকলে এডিস মশার নিধন সম্ভব নয়। এজন্য ঢাকাবাসীর প্রথম করণীয় পানি জমতে না দিয়ে ফেলে দিতে হবে। প্রতিদিন জমা পানি ফেলে দিতে হবে। দ্বিতীয় করণীয় হচ্ছে তথ্য দিতে হবে। তথ্য পেলে সেখানে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়। আমরা সঠিক তথ্য সবসময় পাই না। ২০২১ সালে ভ্রাম্যমাণ আদালত দিয়ে এক কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মানুষের সচেতনতার চেয়ে সয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। জরিমানা কাজে আসছে না। মশকবাহিনীর লোকদের নাজেহাল ও অপমান করা হয়।
মেয়র বলেন, সবাইকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা সব সরঞ্জাম নিয়ে কাজ করব। ঢাকাবাসীকে সুফল দিতে চাই কিন্তু সবার সহযোগিতা না পেলে আমরা কাজ করতে পারব না।
ড. কবিরুল বাশার বলেন, বর্তমানে ব্রাজিলে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১১ লাখ ১৪ হাজার ৭৫৪ ও বাংলাদেশে ৬৯৭ জন। জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পদক্ষেপ নিলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ওয়াসার পানি নিরবচ্ছিন্ন থাকলে এডিস মশা হতো না। এটি শুধু দিনে নয় রাতেও কামড়ায়। বিভিন্ন কারণে এডিসের চরিত্র পাল্টে গেছে। থেমে থেমে বৃষ্টি হলে এডিসের মাত্রা বেড়ে যায়। মশা মারার বাজেটে গবেষণায় বরাদ্দ নেই।
ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, মহামারির কারণ মূলত নগরায়ণ সমস্যা। এসির কারণে ডেঙ্গু হচ্ছে সিঙ্গাপুরে। এ জন্য প্রয়োজন মুক্ত বাতাস ও এলাকা। বর্জ্য ব্যবস্থা ঠিক না হলে মশার জন্ম হবেই। কালভার্টে ডেঙ্গুর লার্ভার জন্ম। নগরের বিল্ডিং কোড ও পরিকল্পিত নগরায়ণ প্রয়োজন। জলাশয়গুলো পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। নগরে ৭০-৮০ শতাংশ শিল্পায়ন হচ্ছে আবাসিক এলাকায়। এটি হলে বাঁচা সম্ভব নয়।
ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প এডিস মশার হট স্পটে পরিণত হয়েছে। ১৯৬০-এর দশকে এডিস বাহিত রোগ চিহ্নিত করা হয়। দীর্ঘদিন জ¦রসহ বিভিন্ন রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এটি বিনাশে জনসম্পৃক্ততা ও জন সচেতনতা প্রয়োজন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়