গ্রেপ্তার ৪ ডাকাত : বন্যার কারণে বেড়ে যেতে পারে ডাকাতি আশঙ্কা পুলিশের

আগের সংবাদ

আ.লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

পরের সংবাদ

কোথাও বাড়ছে পানি, কোথাও অপরিবর্তিত : বানভাসিদের দুর্ভোগ, নেই পর্যাপ্ত ত্রাণ

প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : জামালপুরে বিভিন্ন নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ৭০ হাজার মানুষ। শেরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। নেত্রকোনার সব উপজেলাতেই বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও এখনো জেলার কংশ ও ধনু নদের পানি বিপৎসীমার উপর দিয়েই বইছে। মদন উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে হাফিজুর রহমান নামে এক স্কুুল শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া কেন্দুয়ায় এখনো বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে।
এদিকে বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে জেলার অভ্যন্তরীণ নদনদী ও খাল-বিলের পানি বাড়ছে। ফলে জেলার বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে। গত দুই দিনে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করলেও এখন তা কমতে শুরু করেছে। ফলে নীলফামারীর ডিমলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। অন্যদিকে গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামে বন্যার কিছুটা উন্নতি হলেও ফের পানি বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা। নওগাঁর ধামইরহাট আত্রাই নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আকস্মিক নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চর অঞ্চলের ক্ষেত-খামার তলিয়ে গেছে। কিশোরগঞ্জের ১০ উপজেলাও বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ। বানভাসিরা পর্যাপ্ত ত্রাণ পাচ্ছেন না। ভোরের কাগজের মেলান্দহ ও জামালপুর, মদন, কেন্দুয়া ও নেত্রকোনা, শেরপুর, সিরাজগঞ্জ, নীলফামারী, গাইবান্ধা, নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম), ধামইরহাট (নওগাঁ), কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি : জামালপুরে বিভিন্ন নদনদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ৭০ হাজার মানুষ। গতকাল বুধবার দুপুর ২টায় দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বুধবার চিকাজানী ইউনিয়নের চর ডাকাতিপাড়ায় সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা। বাড়িঘর নদীভাঙনে বিলীন হওয়ায় অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন খোলা আকাশের নিচে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, জেলার ৬ উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এতে ১৫৫টি গ্রামের ৬৯ হাজার ৭৬২ জন বাসিন্দা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন। জেলার ৬টি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ৫ হাজার ১৭৫ জন। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য চাল, নগদ টাকা এবং শুকনো খাবার বরাদ্দ আছে। পরবর্তী সময়ে চাহিদা অনুযায়ী আরো ত্রাণ বিতরণ করা হবে।

জামালপুরে বাড়ছে পানি, ব্রহ্মপুত্রের পেটে যাচ্ছে বসতভিটা : জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের টুপকারচর এলাকার শেষ প্রান্ত থেকে ৪নং চর পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী মানুষ। ভাঙনের শিকার হয়ে অর্ধশতাধিক পরিবার বসতভিটা ব্রহ্মপুত্রের নদীগর্ভে হারিয়েছে। পরিবারগুলো সব কিছু হারিয়ে এখন রাস্তায় বা অন্যের বাড়ির উঠানে আশ্রয় নিয়েছে। তীব্র ভাঙন অব্যাহত আছে।
ভাঙনকবলিত ৪নং চরের নতুনপাড়া এলাকার রাকিব হাসান বলেন, টুপকারচরের পাইলিং থেকে ৪নং চরের নতুনপাড়া পর্যন্ত নদে ভাঙন শুরু হয়েছে। পাড়গুলো বেলে মাটির হওয়ায় নিমেষেই ভেঙে যাচ্ছে। তাই দ্রুত ভাঙন না রুখলে জনবসতি ও ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাবে। ঘরবাড়ি হারিয়ে অনেকেই গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়ে অন্য গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন। এ বিষয়ে জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ বলেন, আমি ৪নং চরে গিয়ে দেখে এসেছি। কিছু প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা রয়েছে সেগুলো সেভ রয়েছে। নতুন করে কিছু জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। বরাদ্দ আনার চেষ্টা করছি। বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু হবে।
শেরপুরের পল্লীতে পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ : গত কয়েক দিনের অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে শেরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে। তবে পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। উজানে উন্নতি হলেও ভাটি এলাকায় এখনো পানিবন্দি রয়েছেন শত শত মানুষ। দুর্ভোগ বেড়েছে পানিবন্দি মানুষের। পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে কাঁচা-পাকা অর্ধশতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন স্থানে ২০টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে অর্ধশতাধিক গ্রামের অন্তত ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। রাস্তাঘাট ও সেতু ভেঙে জেলার বিভিন্ন স্থানে অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এলজিইডির শেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে ২২টি রাস্তার ক্ষতি সাধিত হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রাখতে বিভিন্নভাবে কয়েকটি ইউনিট কাজ করছে বলে তিনি জানান।
ঘরে ঘরে ঢলের পানি প্রবেশ করায় চোলা জ¦লছে না পানিবন্দি মানুষের। গবাদিপশু, হাঁস-মুরগিসহ গৃহপালিত পশু নিয়ে বিপাকে রয়েছেন কৃষকরা। পাহাড়ি ঢলের পানিতে পুকুর তলিয়ে শত শত পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার বলেন, বন্যার্তদের মাঝে ইতোমধ্যেই চাল, নগদ টাকা ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
নেত্রকোনায় পানিতে ডুবে স্কুল শিক্ষকের মৃত্যু : জেলার সব উপজেলাতেই বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে এখনো কংশ ও ধনু নদের পানি বিপৎসীমার উপর দিয়েই বইছে। এদিকে বন্যার পানিতে ডুবে মদন উপজেলার হাফিজুর রহমান নামে এক স্কুল শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছেন ৪ জন। জেলার ৭৫টি ইউনিয়নে পানিবন্দি ৯৯ হাজার ৩১০টি পরিবারের মোট ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা ৫ লাখ ৩৬ হাজার ৮০০ মানুষ। লক্ষাধিক মানুষসহ আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে বানভাসি মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ-বালাই ও শিশুখাদ্যের সংকট।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ জানান, জেলায় বন্যাদুর্গতদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নগদ টাকা, চাল ও শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত জানান, পানি কমছে। আজ (গতকাল) কলমাকান্দা উব্ধাখালী পয়েন্টে পানি হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
মদনে বন্যায় ভেসে গেছে ৪ হাজার পুকুরের মাছ : নেত্রকোনার মদন উপজেলায় আকস্মিক বন্যায় পৌরসভাসহ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ৪ হাজার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এ সুযোগে একশ্রেণির অসাধু জেলে সরকার নিষিদ্ধ জালে পোনা মাছ নিধন করায় এলাকায় বড় মাছের আকাল দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে সচেতন মহল মনে করছে। ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষি বাঘমারা গ্রামের হাফিজুর রহমান মিলন, ইল্লাক মিয়া, ফতেপুর গ্রামের ফরিদ চৌধুরী বলেন, হঠাৎ করে বন্যা হওয়ায় আমাদের পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। আমরা এখন নিঃস্ব হয়ে গেছি। সরকার যদি আমাদের সাহায্য করে তা হলে আমরা আবার দাঁড়াতে পারব। বর্তমানে আমরা খুবই দুরবস্থায় আছি।
মদন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল হাসান জানান, আকস্মিক বন্যায় উপজেলার ৪ হাজার ২৪৫ পুকুরের মধ্যে ৩ হাজার ৮৩০ পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে চাষিদের প্রায় ২ কোটি টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তার নির্দেশে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করে জেলা অফিসে প্রেরণ করা হয়েছে। অবৈধ জাল বিক্রেতা ও জেলেদের বিরুদ্ধে অচিরেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কেন্দুয়ায় বানভাসি মানুষের একমাত্র ভরসা নৌকা : নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার নিম্নাঞ্চলসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। এসব এলাকার মানুষের যাতায়াতের বাহন হিসেবে একমাত্র ডিঙি নৌকাই ভরসা। অন্যদিকে ডিঙি নৌকা তৈরির কারিগররা দিন-রাত এক করে নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিক্রিও করছেন তারা চড়া দামে। বাধ্য হয়েই চড়া দামে নৌকা কিনছেন ভুক্তভোগীরা। নৌকা তৈরি করা কারিগরদের দাবি- হঠাৎ করে বন্যার পানি চলে আসায় আগে থেকে তাদের ছিল না নৌকা তৈরির প্রস্তুতি এবং পর্যাপ্ত কাঠ বা অন্যান্য জিনিসপত্র। যে কারণে নৌকা তৈরি করতে তাদের বেশি খরচ পড়ছে, ফলে তারা বেশি দাম নিচ্ছেন।
সিরাজগঞ্জে ৬০৯২ হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে : বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে জেলার অভ্যন্তরীণ নদনদী ও খাল-বিলের পানি বাড়ছে। ফলে জেলার বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বাবুল কুমার সূত্রধর জানান, পানি নেমে যাওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা তৈরি করা হবে। সরকারি অনুদান পেলে তাদের দেয়া হবে বলে তিনি জানান। বুধবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড গেজ রিডার হাসানুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় কাজীপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৬১ সেন্টিমিটার উপরে এবং শহরের হার্ডপয়েন্ট এলাকায় যমুনার পানি ১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা আকতারুজ্জামান জানান, বন্যার্তদের জন্য ৯১১ টন চাল, নগদ ২০ লাখ টাকা এবং ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এগুলো বিতরণের জন্য স্ব-স্ব এলাকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছ ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী বিতরণ করা হবে বলে তিনি জানান।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, যমুনার পানি ২৪ ঘণ্টা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। এরপর পানি কমবে বলে আশা করছি। এখনো বন্যার আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।
গাইবান্ধায় নদনদীগুলো পানি বৃদ্ধি অব্যাহত : গতকাল বিকালে ব্রহ্মপুত্রের পানি তিস্তামুখ ঘাট পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৬০ সে.মি. এবং ঘাঘট নদীর পানি গাইবান্ধা শহর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৯ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এছাড়া তিস্তা ও করতোয়া নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় মানুষের কষ্ট দিন দিন বেড়েই চলছে। ঘরের বেশির ভাগ ডুবে থাকা পরিবারগুলো নৌকায় রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে বসবাস করছে। অনেকে গবাদিপশু নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। গো-খাদ্য সংকটে গবাদিপশুকে নিয়ে তারা বিপাকে পড়েছেন। জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, ফুলছড়ি বন্যাকবলিত চার উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ইতোমধ্যে ৮০ টন চাল, নগদ ৬ লাখ, শিশুখাদ্য ক্রয় বাবদ ১৫ লাখ ৫০ হাজার, গো-খাদ্য ক্রয় বাবদ ১৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা ইতোমধ্যে বিতরণের কাজ চলছে। অপরদিকে ১০৫টি শুকনা খাবার প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে।
নাগেশ্বরীতে ফের পানি বাড়ার আশঙ্কা : কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে বন্যার কিছুটা উন্নতি হলেও ফের পানি বাড়ার শঙ্কায় দুর্গত ৯ ইউনিয়ন ও পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডের লক্ষাধিক মানুষ। উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তারা। এবারের বন্যায় প্লাবিত এলাকায় পানি বেশ উচ্চতায় প্রবাহিত হয়। ঘরবাড়ি, পথঘাট, নদীনালা, খাল-বিল, পুকুর, জলাশয় একাকার হয়ে যায়। মানুষ আশ্রয় নেন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় খোলা অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোফাখখারুল ইসলাম বলেন, বানভাসিদের মাঝে সরকারি ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত আছে। বুধবারও ত্রাণ সহায়তা নিয়ে দুর্গত নারাছুপুর এলাকায় গেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামান ও নির্বাহী কর্মকর্তা নুর আহমেদ মাছুম।
ধামইরহাট আত্রাই নদীর পানি অব্যাহত : নওগাঁর ধামইরহাট আত্রাই নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আকস্মিক নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চর অঞ্চলের ক্ষেত-খামার তলিয়ে গেছে। ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে ভারতের ডাঙ্গীর ঘাট বাংলাদেশের ধামইরহাট-শিমুলতলীর হাট পয়েন্টের কাছে ৭৬ সে.মি. নিচ দিয়ে ঢলের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পাউবো নদী খনন স্থগিত হয়ে পড়েছে। ড্রেজার মেশিন কয়েকটি চরে আটকা পড়েছে। চরের দুপাশে বালির ঢিবিগুলো স্রোতে নেমে যাচ্ছে নদীতে। নদীর দুপাড়ে সলিট স্পার্ক ব্লক, স্থাপন অব্যাহত। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্লক সেটিংয়ে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। চলমান পানির প্রবাহের মধ্যে সম্পন্ন ব্লক বসানো না হলে রাস্তা কাম বাঁধ ধসে যাওয়ার হুমকি রয়েছে। ধামইরহাট নির্বাহী অফিসার গণপতি রায় ছালিগ্রাম আত্রাই নদীর বালুর বিশেষ পয়েন্ট পরিদর্শন করেন গত মঙ্গলবার। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান খান জানান, নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আমাদের মনিটরিং কমিটির সদস্যরা সার্বক্ষণিক বাঁধ ভাঙার সম্ভাবনা এলাকায় টহল করছেন।
কিশোরগঞ্জে বানভাসিদের মানবেতর জীবনযাপন : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কিশোরগঞ্জের ১০ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ। খেয়ে না খেয়ে অনেকেই মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। এদিকে বন্যার্তদের মাঝে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলছে। প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ের প্রতিদিন বন্যার্তদের মাঝে শুকনো খাবার ও চাল-ডালসহ বিতরণ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুত রয়েছে। বন্যায় যাতে কোনো মানুষ কষ্ট না করেন সে লক্ষ্যে সব কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। বন্যা আরো অবনতি হলে বন্যার্তদের উদ্ধারে অনেক নৌযান প্রস্তুত করা আছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম জানান, বন্যা মোকাবিলায় সব প্রস্তুতি রয়েছে। ইতোমধ্যে ১৪০ টন চাল, চার লাখ ৮০ হাজার টাকা ও ২ হাজার ৪০০ শুকনো খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বন্যায় যাতে কোনো মানুষ কষ্ট না করে সে লক্ষ্যে সব কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারের পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে বলে তিনি জানান।
ডিমলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি : গত দুই দিনে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করলেও এখন তা কমতে শুরু করেছে। ফলে নীলফামারীর ডিমলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে। গতকাল দুপুরে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার, যা স্বাভাবিকের (৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) চেয়ে দশমিক ১০ সেন্টিমিটার নিচে।
এদিকে বন্যাকবলিত পরিবারগুলোর মধ্যে সরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। খালিশা চাপানি ইউনিয়নের স্থানীয়রা জানান, বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এখনো অনেক পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় পড়ে আছে। মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, পানিবন্দি পরিবারগুলোর মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। প্রতি মুহূর্তে বন্যা পরিস্থিতির খোঁজ নেয়া হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়