কাগজ ডেস্ক : গতকাল বুধবার সকালে আফগানিস্তানে ৬ দশমিক ১ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়েছে, যাতে দেশটির পূর্বাঞ্চলে অন্তত সহ¯্রাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান দেশটির কর্মকর্তারা। তালেবান নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা বলেন, ভূমিকম্পে শত শত ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে এবং মৃত্যুর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। আখুন্দজাদার ডেপুটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী শরাফুদ্দিন মুসলিম এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, অন্তত সহ¯্রাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং আরো ৬০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে। বিবিসি জানায়, প্রত্যন্ত পার্বত্য অঞ্চলের গ্রামগুলো থেকে তথ্য আসতে দেরি হওয়ায় হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কর্মকর্তা ও বাসিন্দারা। পাকিস্তানের আবহাওয়া বিভাগের (পিএমডি) ভাষ্য অনুযায়ী, গতকাল বুধবার স্থানীয় সময় রাত ১টা ৫৪ মিনিটের দিকে আফগানিস্তানের খোস্ত শহর থেকে ৪৪ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে পাকিস্তানের সীমান্তের কাছে ভূপৃষ্ঠের ৫০ দশমিক ৮ কিলোমিটার গভীর ভূমিকম্পটির উৎপত্তি।
ইউরোপীয় মেডিটেরিয়ানিয়ান সিসমোলোজিক্যাল সেন্টার (ইএমএসসি) ভূমিকম্পটির মাত্রা ৬ দশমিক ১ বলে জানালেও যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) ভূমিকম্পটির মাত্রা ৫ দশমিক ৯ ছিল বলে জানায়। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন আইয়ুবির বরাতে জানানো হয়, নিশ্চিত মৃত্যুর অধিকাংশ ঘটনাই পূর্বাঞ্চলীয় পাকতিকা প্রদেশে ঘটেছে। গভীর রাতে অধিকাংশ

মানুষ বাড়িতে ঘুমিয়ে থাকায় হতাহতের সংখ্যা বেশি হয়েছে। তিনি বলেন, মৃত্যুর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। কিছু গ্রাম পর্বতের দুর্গম অঞ্চলে হওয়ায় সেখান থেকে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহে সময় লাগছে। কর্তৃপক্ষগুলো উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে আর আহতদের কাছে পৌঁছাতে এবং চিকিৎসা ও খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিতে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এ পর্যন্ত অধিকাংশ হতাহতের ঘটনা পাকতিকা প্রদেশের গায়ান ও বারমাল জেলায় ঘটেছে বলে স্থানীয় একজন চিকিৎসক বিবিসিকে জানান। গায়ানে একটি পুরো গ্রাম ধ্বংস হয়ে গেছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যম সাইট ইতিল্লাত-ই রোজের প্রতিবেদনে বলা হয়। ভূমিকম্পটি আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রতিবেশী পাকিস্তান ও ভারতেও অনুভূত হয়েছে। তবে এসব দেশ থেকে কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। ইউরোপীয় মেডিটেরিয়ানিয়ান সিসমোলোজিক্যাল সেন্টারের (ইএমএসসি) ওয়েবসাইটে করা এক পোস্টে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের এক বাসিন্দা লিখেন, শক্তিশালী ও দীর্ঘ ঝাঁকুনি ছিল। পাকিস্তানের পেশোয়ার

শহরের এক বাসিন্দা বলেন, ভূমিকম্পটি শক্তিশালী ছিল। টুইটারে ইএমএসসি বলে, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ভারতের প্রায় ১১ কোটি ৯০ লাখ মানুষ ভূমিকম্পটির ঝাঁকুনি অনুভব করে।
আফগানিস্তানের গণমাধ্যমে আসা ছবিগুলোতে ভূমিধস, ধ্বংস হয়ে যাওয়া মাটির তৈরি বাড়িঘরের ছবি ও মাটিতে কম্বলে ঢাকা বেশ কয়েকটি মৃতদেহ দেখা গেছে। সঞ্চরণশীল ভূত্বকের সক্রিয় একটি অঞ্চলে অবস্থানের কারণে আফগানিস্তান ভূমিকম্পপ্রবণ। বেশ কয়েকটি চ্যুতি দেশটির ভূখণ্ডকে ভূতাত্ত্বিকভাবে কয়েকটি অংশে বিভক্ত করে রেখেছে। এসব চ্যুতিগুলোর মধ্যে চমন ফল্ট (চমন চ্যুতি), হরি রুড ফল্ট, মধ্যাঞ্চলীয় বাদাখশান ফল্ট ও দারভাজ ফল্ট উল্লেখযোগ্য।