দৈনিক ওঠানামার মধ্যেই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী

আগের সংবাদ

জনগণের সাহসেই পদ্মা সেতু : বন্যার দুর্ভোগ ও ক্ষতি কমাতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার > বিএনপির নেতা কে? সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

পরের সংবাদ

সংসদে বাজেট আলোচনা : ‘বাংলাদেশের অবস্থা কখনো শ্রীলঙ্কার মতো হবে না’

প্রকাশিত: জুন ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বাংলাদেশের অবস্থা কখনো শ্রীলঙ্কার মতো হবে না বলে মন্তব্য করেছেন সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা। তারা মনে করেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি শ্রীলঙ্কার মতো পর্যটননির্ভর নয়। বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রবাসী আয়, তৈরি পোশাকসহ নিজস্ব রপ্তানি আয়নির্ভর। তাছাড়া খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, কৃষিতে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে এদেশে। আর সে কারণেই বাংলাদেশের অবস্থা কখনো শ্রীলঙ্কার মতো হবে না।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এমন মন্তব্য করেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
আওয়ামী লীগের এমপি সাইফুজ্জামান চৌধুরী, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, এমপি অসীম কুমার উকিল, মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, আমরা শ্রীলঙ্কার মতো পর্যটননির্ভর নই। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে বৈদেশিক আয়, কর্মসংস্থান বেড়ে চলেছে। তাছাড়া গার্মেন্টস শিল্প, আমাদের রপ্তানি আয় ছাড়াও কৃষিতে বাংলাদেশের উন্নয়ন দেশকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিচ্ছে। প্রথমে বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি বিএনপিকে নির্বাচনে আসা, না আসা নিয়ে মাঠেঘাটে বক্তব্য না দিয়ে তারা কী চান, তা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করার পরামর্শ দেন। তাছাড়া বিএনপিকে নানা জায়গায় নির্বাচন নিয়ে নালিশ না করারও পরামর্শ দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার একটানা তিন টার্ম ক্ষমতায় থেকে বাজেট প্রণয়ন করছে। এবার দেশের সর্ববৃহৎ বাজেট। কিন্তু যারা দেশের উন্নয়ন দেখে না, তারা বলে এ বাজেট বাস্তবায়ন হবে না, কিন্তু পরিসংখ্যান দেখে বলা যায় আওয়ামী লীগ সরকারের অধিকাংশ বাজেট ৯০ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। এমনকি কোভিডকালে রেমিট্যান্স ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব যখন টালটামাল, তখন বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছেন।
জাতীয় পার্টির এমপি রওশন আরা মান্নান বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশে বেকারত্ব বেড়ে যাচ্ছে, কর্মসংস্থান কমছে। ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে, তারা আর ঋণ দিতে চাইছে না, শিল্প কল-কারখানা তৈরি হচ্ছে না, ঋণ দেবে কেন, অর্থ নিয়ে তো তা পাচার করা হচ্ছে। আর দেশে ব্যাংকের টাকা লুটপাট হয়, ঋণখেলাপির সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। তিনি অর্থমন্ত্রীকে দুর্নীতি দমন ও অর্থ পাচার বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেন। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, এটা বাস্তবায়িত হলে আর পেছনে তাকাতে হবে না।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান এমপি বলেন, করোনা মহামারি সারা পৃথিবীকে তছনছ করে দিল। আর বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্ব টালমাটাল। দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে। তার মধ্যেও সরকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছে, এটা শুধু শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষেই সম্ভব।
তিনি বিএনপির সংরক্ষিত আসনের এমপি রুমিন ফারহানার বক্তব্যের সমালোচনা ও তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, উনি কয়েকদিন আগে বলেছেন আওয়ামী লীগ একটি মুনাফেকের দল। আমি বলতে চাই মুনাফেক ও গাদ্দার দুটি সমার্থক শব্দ। ১৯৭১ সালে তার পিতা অলি আহাদ কিন্তু যুদ্ধে যাননি। তিনি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন। ১৯৭৫ সালে যখন জাতির পিতাকে হত্যা করা হলো তখন তিনি ‘নাজাত দিবস’ পালন করেছিলেন। তার একটি পত্রিকা আছে তার নাম ইত্তেহাদ। তাহলে কে মুনাফেক? সেই রক্ত থেকে, তার স্লোগান থেকে তো বের হবে ’৭৫ এর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার। কেননা আমরা যখন বলি ’৭১-এর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার। আর তারা বলে ’৭৫ এর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার। তার মানে এই সালে জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছিল। তারা আবার একটি হত্যাকাণ্ড ঘটাতে চায়, তাদের টার্গেট হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি ‘মুনাফেক’-এর মতো শব্দ এক্সপাঞ্জ করার আহ্বান জানান। তিনি তার এলাকায় ডাকাতিয়া নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নদীটিকে ড্রেজিং করা দাবি জানান।
সুবর্ণা মুস্তাফা আরো একবার অস্ত্র হাতে নেয়ার কবিতা শোনালেন : সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সুবর্ণা মুস্তাফা তার বক্তব্যে বলেন, বিএনপি সারাক্ষণই বলে আসে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডে বিএনপি তথা জিয়াউর রহমানের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবে ইতিহাস ও পরবর্তী পর্যায়ে জিয়াউর রহমানের কর্মকাণ্ড প্রমাণ করেছিল নিশ্চয়ই বঙ্গবন্ধু হত্যায় তার ষড়যন্ত্র ছিল। গতকাল জাতীয় সংসদে বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। সুবর্ণা মুস্তাফা বলেন, আমার প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে কিসের সম্মতি দেন বিএনপি নেতারা- বাংলাদেশকে একটি গুহার অন্ধকারে ঠেলে দেয়ার ষড়যন্ত্র? বাংলাদেশকে একটি ধর্মান্ধতার দেশে ঠেলে দেয়ার ষড়যন্ত্র করেন? তারা কি বাংলাদেশে যে আইনের শাসন চলছে, যে সুশাসন ও উন্নয়ন ঘটছে তা নস্যাৎ করার সম্মতি দেন? প্রাণপ্রিয় নেত্রী ও তার পরিবারকে যে হুমকি দেয়া হচ্ছে, তার ষড়যন্ত্রের সম্মতি দেন বিএনপি নেতা- এমন প্রশ্ন রাখেন সুবর্ণা। তিনি আরো বলেন, কিন্তু তারা ভুলে গেছেন এটা ১৯৭৫ সাল না, এটা ২০২২। আমাদের ’৭৫ এ ভুল ছিল। আমরা শত্রæকে চিনতে ভুল করেছিলাম। কিন্তু ২০২২ সালে আমরা সে ভুল করব না। প্রধানমন্ত্রীর মাতৃত্ব বোধ, মায়া-মমতা প্রসঙ্গে সুবর্ণা বলেন, আপনি কারাদণ্ডপ্রাপ্ত, সাজাপ্রাপ্ত মানুষকে বাড়িতে থাকার অনুমতি দিয়েছেন। আপনি দলমতনির্বিশেষে সবাইকে কাছে টেনে নিচ্ছেন। কিন্তু দলীয় লোকজন তাদের ভেতরে কি কোনো কৃতজ্ঞতা নেই? এ সময় তিনি গানের কলিতে বলেন, মা গো আমরা তোমার শান্তি প্রিয় শান্ত ছেলে, তবু শত্রæ এলে অস্ত্র হাতে ধরতে জানি, তোমার ভয় নেই মা আমরা প্রতিবাদ করতে জানি। কিন্তু আপনি তো কিছুতেই ভয় পান না, আপনি সবার চেয়ে সাহসী মানুষ।

ওয়ার্কার্স পার্টির এমপি ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, সিলেটের সুনামগঞ্জে বন্যা হতে পারে, তা আগে আমাদের আবহাওয়া অধিদপ্তর আভাস দিয়েছিল। কিন্তু কেন আগে থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে না। এ বিষয়ে তিনি সংসদ নেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়