প্রকাশিত: জুন ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
সত্যজিৎ চক্রবর্তী, কলকাতা থেকে : বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের
অভিযোগের মামলায় পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া মূল অভিযুক্ত প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) ও তার পাঁচ সহযোগীকে ফের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার কলকাতার ব্যাঙ্কশাল আদালত এই নির্দেশ দেন। এদিন সকালের দিকে পি কে হালদার ও তার ৫ সহযোগীকে আদালতে তোলা হয়। পরে শুনানি শেষে অভিযুক্তদের আগামী ৫ জুলাই পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন আদালত।
এর আগেও ১৪ দিনের জেল হেফাজতে ছিলেন বাংলাদেশভিত্তিক এনআরবি গেøাবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদার ও তার সহযোগীরা। সে সময় ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) কর্মকর্তারা তদন্ত করে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য পেয়েছেন। এ বিষয়ে এদিন ইডির আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী জানান, গত ১৪ দিনে বেনামে প্রচুর সম্পত্তি পাওয়া গেছে, ৮০ লাখ রুপি নগদ ও একটি ফ্ল্যাট পাওয়া গেছে। এই ফ্ল্যাট কেনার জন্য সমস্ত টাকা দিয়েছেন পি কে হালদার। যাকে টাকা দেয়া হয়েছে ওই ব্যক্তি বর্তমানে কর্নাটকে অবস্থান করছেন, তার খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে তদন্তকারী কর্মকর্তারা।
গতকাল ১২টার কিছু পর স্পেশাল সিবিআই এই মামলায় মূল অভিযুক্ত পি কে’র সহযোগী তার ভাই প্রাণেশ কুমার হালদার, ইমাম হোসেন ওরফে ইমন হালদার, স্বপন মৈত্র ওরফে স্বপন মিস্ত্রি, উত্তম মৈত্র ওরফে মিস্ত্রি, আমানা সুলতানা ওরফে শর্মী হালদারসহ বাকি পাঁচ অভিযুক্তকে আদালত-৩ এ তোলা হয়। শুনানি শেষে ফের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। সেক্ষেত্রে আগামী ৫ জুলাই ফের অভিযুক্তদের আদালতে তোলা হবে। এ সময়ের মধ্যে কারাগারে গিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা।
ইডির হাতে গ্রেপ্তার হওয়া এই ছয় অভিযুক্তের মধ্যে পাঁচ পুরুষ অভিযুক্ত বন্দি রয়েছেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কারাগারে, আর নারী অভিযুক্ত রয়েছেন আলিপুর কেন্দ্রীয়
কারাগারের নারী সেলে। সেখান থেকেই তাদের আদালতে আনা হয়। আদালতে তোলা বা শুনানি শেষে আদালত থেকে কারাগারে যাওয়ার পথে অভিযুক্তদের কেউই মুখ খোলেননি। শেষবার গত ৭ জুন আদালতে তোলা হয় অভিযুক্তদের এবং তাদের প্রত্যেককেই ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন আদালত। সেই মেয়াদ শেষেই গতকাল তাদের ফের আদালতে তোলা হয়।
গত ১৪ মে অশোকনগর, কলকাতাসহ একাধিক জায়গায় অভিযান চালিয়ে পি কে হালদারসহ মোট ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে ভারতের তদন্তকারী সংস্থা ‘এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের’ (ইডি) কর্মকর্তারা। এরপর কয়েক দফায় রিমান্ড ও জেল হেফাজতে নিয়ে অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে ইডির হাতে। ইডির আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী জানান, পি কে হালদারকে জেরা করে কলকাতা এবং তার আশপাশে বহু সম্পত্তি পাওয়া গেছে। যেগুলো বেনামে কেনা হয়েছে এবং সেই মানুষদের শনাক্তকরণের কাজ চলছে। অরিজিৎ চক্রবর্তী দাবি করেন, এরকম প্রায় ৪৫টি সম্পত্তির হদিস পাওয়া গেছে, যেগুলো প্রাণেশ কুমার হালদারের নামে স্থানান্তর করা হয়েছে। পরে সেই সম্পত্তি আবার সুকুমার মৃধার নামে স্থানান্তরিত হয়।
আইনজীবী আরো জানান, পি কে হালদার ও তার ভাইদের নামে ভারতে যে ব্যাংক একাউন্টের হদিস মিলেছে তার সমস্ত বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে। সেখানে একাধিক বাংলাদেশির নামে ব্যাংক একাউন্ট করে অর্থ জমা করা হয়েছে। সেই জমাকৃত অর্থের রশিদও পাওয়া গেছে। ইডির আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী আরো জানান, বাংলাদেশ থেকে আত্মসাৎ করা অর্থই ভারতীয় ব্যাংকে জমা করে তা পাচারের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। গত ১৪ মে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অশোক নগরের একটি বাড়ি থেকে পি কে হালদার ও তার পাঁচ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে ইডির কর্মকর্তারা। পরে তাকে আদালতে হাজির করলে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক। গত ১৭ মে পি কে হালদারের আরো ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন কলকাতার একটি আদালত।
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।