দৈনিক ওঠানামার মধ্যেই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী

আগের সংবাদ

জনগণের সাহসেই পদ্মা সেতু : বন্যার দুর্ভোগ ও ক্ষতি কমাতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার > বিএনপির নেতা কে? সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

পরের সংবাদ

পদ্মা সেতু উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির স্মারক

প্রকাশিত: জুন ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পদ্মা সেতু দেশবাসীর করের টাকায় এবং সমর্থনে নির্মিত জাতীয় আত্মবিশ্বাস, সক্ষমতা ও গৌরবের প্রতীক। জাতীয় অর্থনীতিতে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব, তাৎপর্য এবং উপযোগিতা অপরিসীম। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিশ্বের সেরা গহিন গরান বন সুন্দরবন : দ্বিতীয় ও তৃতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলা ও পায়রা; তৃতীয়, চতুর্থ ও অষ্টম বৃহত্তম বিভাগীয় শহর খুলনা, বরিশাল ও ফরিদপুর : বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল ও ভোমরা থাকা সত্ত্বেও যোগাযোগ ব্যবস্থার অনুন্নয়নের কারণে সদ্য ঘোষিত পদ্মা বিভাগের ৫টি, খুলনা বিভাগের ১০টি এবং বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলার জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নসহ শিল্প স্থাপন খাতে তেমন কোনো উন্নতি সাধিত হয়নি। এক যুগ আগে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক নেটওয়ার্ক নির্মাণে ব্যাপক অগ্রগতি (বিশেষ করে ঢাকা-মাওয়া এবং জাজিরা ফকিরহাট ভায়া গোপালগঞ্জ মহাসড়ক নির্মিত) হলেও একই সঙ্গে পদ্মায় সেতু নির্মিত না হওয়ায় উক্ত অবকাঠামো যথা উপযোগিতায় আসছিল না। সমীক্ষায় দেখা গেছে পদ্মায় সেতু নির্মিত হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সমগ্র দেশের যে সংযোগ সংস্থাপিত হবে এবং এর ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের যে পরিবেশ সৃজিত হবে তাতে দেশের মোট জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ১.২ শতাংশ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিআরডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৩.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। স্বাভাবিক এবং সঙ্গত কারণেই এ সেতু নির্মাণ দেশ ও জাতির কাছে ছিল সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্প।
বহুদিন ধরে চলছিল পদ্মায় সেতু নির্মাণের উদ্যোগ- প্রাক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা (মে-অক্টোবর ১৯৯৯), বিস্তারিত সমীক্ষা (২০০৩-০৫), পিসিপি প্রণয়ন (জুন ২০০৫), অর্থসংস্থানসহ বাস্তবায়ন কৌশল নিরূপণ (২০০৫-০৬)। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্প অনুমোদন না হলে কাজের কাজ কিছুই শুরু হচ্ছিল না। বিষয়টির প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অনুধাবন করে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে পদ্মায় সেতু নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদনের উদ্যোগ গৃহীত হয়। সে সময় উদ্যোগটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিজ্ঞতার আলোকে আমি আজ উল্লেখ করতে পারি দুজনই পদ্মাপাড়ের মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দিন আহমদ এবং অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জা আজিজুল ইসলাম পদ্মা সেতু প্রকল্প অনুমোদনে সে দিন দৃঢ়চিত্ত অবস্থান নিয়েছিলেন বলেই একনেকে প্রস্তাব পেশ ও অনুমোদন লাভ সম্ভব হয়েছিল।
একনেকে ২০০৭ সালের ২৮ আগস্ট পদ্মা সেতু প্রথম অনুমোদনের সময় প্রকল্পের মোট ব্যয় নিরুপিত হয়েছিল ১০ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা, এর মধ্যে দাতা সংস্থার (বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জেবিআইসি জাপান, ডিএফআইডি ও নেদারল্যান্ডস) অংশ ৬ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা (৬৮ শতাংশ) আর বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ৩ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা (৩২ শতাংশ)। ২০১১ সালে প্রকল্পে রেল সংযুক্ত হওয়ায় মোট ব্যয় সংশোধিত হয়ে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকায় উন্নীত হয়, যার মধ্যে দাতা সংস্থার (বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জেবিআইসি জাপান, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক) ১৬ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা (৭৯ শতাংশ) এবং বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ৪ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা (২১ শতাংশ)। প্রথম অনুমোদনের সময় বাংলাদেশ সরকারের অংশগ্রহণের হিস্যা ৩২ শতাংশ প্রত্যাশা ও পরিকল্পনা ছিল, পরবর্তীতে প্রকল্পে বাড়তি ব্যয় প্রয়োজন হলে সেটিও বাংলাদেশ সরকার বহন করবে এবং এভাবে বাংলাদেশ সরকারের অংশগ্রহণ ৪০ শতাংশে উন্নীত হবে। কীভাবে সরকার সে অর্থেও সংস্থান করবে তার একটা রূপরেখাও সেখানে দেয়া হয়েছিল। লক্ষ্য ছিল পদ্মা সেতু নির্মাণে বাংলাদেশের মোড়লীপনা প্রতিষ্ঠিত হবে।
পদ্মা সেতুতে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নের সংস্থান নিজের জন্যই বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়, যেখানে সেই শুরু থেকেই। তাই এডিবির অব্যয়িত টাকা বাঁচিয়ে, লেভি/সারচার্জ আরোপ করে, যমুনা সেতুকে সিকিউরিটাইজেশনের মাধ্যমে সিকিউরিটি মার্কেট থেকে পুঁজি আহরণ করে, ইতোমধ্যে যমুনা সেতুতে অর্জিত উদ্ধৃত অর্থ ব্যবহারের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সে পথে না গিয়ে বিশ্বব্যাংক গংদের ওপর অতি নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় ২০১১ সালেই প্রধান দুই দাতা সংস্থার অর্থায়ন (১২ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা) অনিশ্চিত হওয়ার প্রেক্ষাপট পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে বাড়তি চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়েছিল বাংলাদেশকে।
পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশের প্রধানতম প্রতিবন্ধকতা বরাবরই ছিল অর্থায়ন সমস্যা। স্বল্প সুদে দীর্ঘসময়ে পরিশোধযোগ্য সহজ ঋণ ব্যবহারের শর্তগুলো কঠিন হয়ে থাকে। শর্তগুলো মোকবিলায় যে সময় পার হয় তাতে আবার নির্মাণ ব্যয়ও বেড়ে যায়। বাংলাদেশের প্রধান দশটি সেতু যথা যমুনা (বঙ্গবন্ধু), পদ্মা (লালনশাহ), ধলেশ্বরী (মোক্তারপুর), মেঘনা, গোমতি, কীর্তনখোলা (দপদপিয়া), রূপসা (খান জাহান আলী), ভৈরব (সৈয়দ নজরুল ইসলাম), তৃতীয় কর্ণফুলী, দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা নির্মাণের অভিজ্ঞতায় পুথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে প্রতিটি সেতু নির্মাণের প্রকৃত ব্যয় মূল প্রাক্কলন থেকে কমবেশি প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ধলেশ্বরী, মেঘনা, গোমতি ও দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু নির্মিত হয় টার্নকি ভিত্তিতে, অনুদানে, বাকি সব সেতু বিদেশি ঋণ এবং ঋণ অনুদান মিশেলে বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে অর্থায়ন নিশ্চিত করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় (বিশেষ করে যমুনা, রূপসা ও দপদপিয়া সেতুর ক্ষেত্রে), অতিক্রম করতে হয়েছে অনেক কঠিন শর্ত ও তিক্ত অভিজ্ঞতা (যেমন তৃতীয় কর্ণফুলী, লালন শাহ ও ভৈরব সেতুর ক্ষেত্রে)। পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থায়ন সমস্যাটিই প্রধানতম প্রতিবন্ধকতা এবং তা কাটাতে বড় সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
স্বপ্নের সেতু পদ্মা এখন বাস্তবে বিদ্যমান। যে সব লক্ষ্য অর্জনের জন্য কীর্তিনাশা নামে খ্যাত প্রমত্তা পদ্মার ওপর এক যুগের বেশি সময় নিয়ে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে বাংলাদেশ ও এশিয়ার প্রথম এবং বিশ্বের ২৫তম দীর্ঘতম সেতু নির্মাণ করা হলো, সেই সেতুর ফিজিবিলিটি রিপোর্টে আঞ্চলিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আর্থসামাজিক অবস্থা ব্যবস্থার উন্নয়নের আশাবাদ উঠে এসেছিল তা অর্জনের পথনকশায় অগৌনে নজর দেয়া দরকার। কেননা সেতু নির্মাণে অর্থায়ন যেভাবে দেখানো হোক না কেন, আল্টিমেটলি এটি জনগণের করের টাকায় নির্মিত হয়েছে বলে বিবেচিত হবে এবং সে কারণেই এর সুফল প্রাপ্তিটাও জনগণের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার। পদ্মা সেতুর উপকারভোগী সমাজ ও অর্থনীতিকে সক্ষম করে তুলতে পারলেই সেতুর সার্থকতা প্রতিপন্ন হবে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপান সরকারের ঋণ মওকুফ তহবিলের অর্থ ৩০০ কোটি টাকা। এই অর্থ পরিশোধ করতে হবে না। ফলে সেতু বিভাগকে আসল হিসেবে ২৯ হাজার ৯০০ কোটি টাকা সরকারকে ফেরত দিতে হবে। এর সঙ্গে বাড়তি ১ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। অর্থাৎ সুদে-আসলে পরিশোধ করতে হবে ৩৬ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। প্রকল্পের জাতীয় গর্ব ও গুরুত্ব বিবেচনায় সেতুর জন্য আমদানিকৃত যন্ত্রপাতি সরঞ্জাম সামগ্রীর ওপর শুল্ক ভ্যাট মওকুফ এবং দেশি-বিদেশি ঠিকাদার, কনসালট্যান্ট, বিশেষজ্ঞদের আয়কর থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়ে থাকলে তার হিসাবও প্রকল্পের মোট ব্যয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করে তার ভিত্তিতে প্রকল্পের রেট অব রিটার্নের সময়গত হিসাব অনুপাত নির্ধারিত হবে।
পদ্মা সেতুর স্থায়িত্বকাল ধরা হয়েছে ১০০ বছর। এ সময়ে সেতুটির গুরুত্ব (কেপিআই হিসেবে) বিবেচনায় টোলের টাকা দিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ও সার্ভিস রক্ষণাবেক্ষণে বড় ব্যয় আবশ্যক হবে। সে কারণে সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও আশানুরূপ টোল আদায়ের জন্য পদ্মা সেতু পরিচালনায় রাষ্ট্রায়ত্ত একটি কোম্পানি গঠন করার সিদ্ধান্ত সরকারের বিবেচনাধীন আছে বলে জানা যায়। সরকার যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের সময় ‘যমুনা সেতু’ বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করেছিল। পরে সেটিই সেতু কর্তৃপক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। সেতু কর্তৃপক্ষ সেতু বিভাগের একটি সংস্থা। এর অধীনে মুক্তারপুর সেতুও রয়েছে। পদ্মা সেতুর জন্য স্বতন্ত্র সত্তা গঠন করতে নতুন কোম্পানি গঠনে না গিয়ে সেতু কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বাড়ানোই হবে সমীচীন। নতুন করে কোম্পানি গঠনের অর্থ হবে বাড়তি ব্যয়, সমান্তরাল নিয়ন্ত্রণ নিয়ামক ব্যবস্থাপনা, যেখানে সুসমন্বয়ের অভিজ্ঞতা ভালো নয় বাংলাদেশে।
একদিকে বন্দর আর অন্যদিকে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগে সময় কমে আসায় পুরো অঞ্চলের অর্থনীতি ও জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলবে। সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে আকরাম পয়েন্টে গভীর সমুদ্রবন্দর হিসেবে স্থান নির্বাচন ও নির্মাণের। সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয় যে মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় সে সভায় নিজে উপস্থিত থেকে দেখেছি সে সময় আকরাম পয়েন্ট টেকনিক্যাল সব দিক দিয়ে ভালো অবস্থানে থাকলেও শুধু হিন্টারল্যান্ড/ব্যাকআপ যোগাযোগ ব্যবস্থায় অপ্রতুলতা থাকায় সোনাদিয়ার কাছে আকরাম পয়েন্ট হেরে যায়।
রাজধানী থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের তুলনায় পায়রা বন্দরের দূরত্ব অর্ধেক এবং মোংলা বন্দরের দূরত্ব আরো কম। সাগর পাড় থেকে পণ্য পৌঁছাতেও লাগবে কম সময়। এই বিবেচনায় পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর নিঃসন্দেহে বাড়বে পায়রা ও মোংলা বন্দরের গুরুত্ব। সবকিছু মিলিয়ে ‘পদ্মা সেতু দক্ষিণের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে আকাশ সমান উচ্চতায়।’
বিশাল এই সম্ভাবনার পালে নতুন হাওয়া আনবে যে পদ্মা সেতু, সেই সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ কতটা এগিয়ে যাবে তা নিশ্চিত করতে চাই কার্যকর কর্মপরিকল্পনা। যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার পর অঞ্চলজুড়ে কৃষি ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপক পরিবর্তনের আশা করা হচ্ছে। সেতুর উদ্বোধন সামনে রেখে বছর খানেক থেকেই নানা ধরনের কাজ শুরু করেছিলেন কৃষির সঙ্গে জড়িত কৃষক, ব্যবসায়ী ও খামারিরা। বড় ধরনের বিনিয়োগ করেছেন পরিবহন খাতের ব্যবসায়ীরা।
যশোর-খুলনাসহ কয়েকটি জেলায় উদ্যোক্তারা আগে থেকেই বিনিয়োগ বাড়িয়েছিলেন, যাতে সেতু উদ্বোধনের পরপরই এর সুফল পাওয়া যায়। দেশের দক্ষিণ-পশিচমাঞ্চলে সবার মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। কারণ প্রতিটি ক্ষেত্রের মানুষ যে কোনো ধরনের প্রয়োজনে সহজে ঢাকায় আসা-যাওয়া করতে পারবে। এখানকার মাছ কখনো ঢাকার বাজারে যেতে পারেনি। অথচ হাজার হাজার টন মাছ হয় এখানে। চিকিৎসা থেকে আরম্ভ করে ব্যবসা-সব কিছুই পাল্টাবে এখন। এ সময় এতদঞ্চলের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সংশ্লিষ্ট নতুন উদ্যোক্তাদের বিশেষ স্টার্টাপ ঋণ প্রকল্পের আওতায় আনতে পারলে ব্যাপক কর্মসংস্থান ও রেজিলিয়েন্ট ননফর্মাল সেক্টর গড়ে উঠতে পারবে। পদ্মা সেতুর প্রাথমিক প্রভাব পড়বে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি খাতে আর দীর্ঘমেয়াদি সুফল আসবে ভারি শিল্প খাতে। তবে শুরুতেই বড় গতিশীলতা আসবে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে। সেতুর কারণে সব ধরনের কৃষিপণ্য তাদের সবচেয়ে কাক্সিক্ষত বাজারে দ্রুত যেতে পারবে। শুধু ঢাকা নয়, বরং বড় বড় জেলা শহরগুলোতে এমনকি প্রতিবেশী ভারতীয় সাত রাজ্যে তাদের পণ্য যাওয়ার সুযোগ পাবে।
বিশেষ করে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদ, খুলনা ও বাগেরহাটের মাছ, যশোরের সবজি আর ফুল, বরিশালের ধান ও পান পুরো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি অর্থনীতির ভিত্তি। খুলনার যে মাছ ঢাকার বাজারে নেয়া ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। এখন সেটিই সহজ হবে। যশোরের গদখালীর ফুল ঢাকাসহ বড় শহরগুলোর পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি হয়। আবার দেশের সবজির বাজারের বড় একটি অংশই আসে যশোর অঞ্চল থেকে। পদ্মা সেতু দিয়ে দ্রুত এসে ঢাকার প্রবেশমুখে যদি মাছ নিয়ে যানবাহনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয় তাহলে সম্পূর্ণ সুফল পাওয়া যাবে না। তাই শুরু থেকেই পদ্মার দুপাড়ের সংযোগ সড়কগুলো সম্পর্কেও সতর্ক ও যতœবান হতে হবে।

ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ : কলাম লেখক, উন্নয়ননীতির বিশ্লেষক; সাবেক চেয়ারম্যান- এনবিআর।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়